ঈদ

কদিন পরেই কোরবানির ঈদ। চারদিকে আনন্দের মহা আযে়াজন।
আনন্দে আত্মহারা সাজিদের পাড়ার সবাই।
কোরবানির ঈদ হলো ঈমানি চেতনা, ঐক্য ও সংহতি স্হাপনের লক্ষ্যে হজ্ব আদায় করা।
তারপর আরাফার মাঠে কোরবানির মাধ্যমে হজ্ব শেষ হয়।
দলে দলে কোরবানির গরু কিনার জন্য বাজারে বাজারে মানুষ যাচ্ছে। সাজিদের ও ইচ্ছে হয় বাজারে যেতে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই কি আর যাওয়া যায়?
সাজিদ আব্বা আম্মার সাথে থাকে। আব্বা বৃদ্ধ মানুষ কোন কাজ করেন না। আম্মা কাজ করেন ঘরের। সাজিদ আর ছোট আঁখি ঘরে থাকে। আর তিন বোনের বিযে় হযে়ছে অনেক আগে। উর্পাজনের একমাত্র মানুষ বড় ভাই। বড় ভাই শহরে থাকেন। কাজ করেন একটি হোটেলে। ম্যানেজার পদে। বড় ভাই আমাদের সব। বড় ভাই বাডি়তে আসলে ঈদ হয়। না আসলে নাই।
গত কযে়কদিন আগে একবার ঘরের বাজারের খোজঁ করে দেখেছে সাজিদ, কিছুই নাই। আম্মা খুব কষ্ট করে চালিযে় নিচ্ছেন। আখিঁ ও আজকাল খুব মনমরা হযে় থাকে। তার কিছুই ভালো লাগে না। সে একা একা এদিক সেদিক হাঁটে। তার অনেক দিনের শখ এবার ঈদে এক গুছা পাযে়ল কিনবে। সাজিদের ও তো কত শখ আছে। তার ইচ্ছে এবার একটা লাল পান্জাবী ভাইয়া নিযে় আসবে। পরে সারা পাড়া মাত করবে। সবার সাথে খেলাধূলা করবে।
কাল আব্বার মোবাইলে ফোন দিযে়ছেন বড় আপা। অনেক দিন হলো তিনি সাজিদদের বাডি়তে আসেন না। কোরবানির ঈদে আসবেন। তারে নতুন কাপড় দিতে হবে। মেজ, সেজও তাই। আব্বা আম্মা এ নিযে় খুব চিন্তায় আছেন।
সাজিদের বন্ধুরা আজ বাজারে যাবে। গতকাল মাঠে কথা হযে়ছে। কেউ কেউ যাবে তাদের আব্বা, চাচা, ও ভাইদের সাথে। কেউ যাবে তাদের মামার সাথে। সালিক যাবে তার বড় ভাইয়ার সাথে। তারা এবার সবচেযে় বড় গরু কিনবে। কারণ তার মেজ ভাই ইংল্যান্ড থেকে আসছেন এবারের কোরবানি দেবার জন্য। সাজুল, রায়হান সবার তেমনটাই ভাবনা। বাজারের সেরা গরু তারা কোরবানি দিবে।
সাজিদের মন ভালো নেই। খুব খারাপ লাগছে তার। সবার মুখে কেবল শুনছে, বাজারে কত শত গরু আসে। সাদা-কালো, লাল-নীল, আরও কত। বাজারে লম্বা লম্বা সারি বাধাঁ হয় বাঁশ দিযে়। এখানেই সারি বেধে গরু রাখা হয়। বাজারে ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, এগুলো বিক্রির ধুম পডে় তখন। দোকানে দোকানে তরে তরে সাজানো কাপড়, লুঙি, সালোয়ার-কামিজ, নানা জাতের নিত্য নতুন কাপড়। সব কিছু দেখে সে কল্পনার চোখে। এছাড়া আর কি করার আছে?বাজারে যেতে হলে টাকা লাগে তা সে পাবে কোথায়?
সাজিদ ভাবে গতবার কোরবানির ঈদে বাজারে উট এসেছিল। সে কী মাতামাতি। এলাকা শুদ্ধ মানুষের মখে মুখে ছিল অনেক দিন। উট ও দেখা হয়নি। সাজিদের কাছে ঈদ বাজারের সেরা হচ্ছে আইসক্রিম। লাল, সাদা, কফি। খেযে় খেযে় হাঁটতে খুব ভালো লাগে। ছোট বেলা আব্বা বাজারে নিযে় গেলে সাজিদের হাতে একটা আইসক্রিম বরাদ্ধ ছিল। আজকাল তো বাজারেই যাওয়া হয়না।
সাজিদ মাঠের পাশে বটগাছে হেলান দিযে় বসে আছে। সকাল থেকেই গরু নিযে় মানুষ বাডি় ফিরছে। গরু পাশে আসলেই সাজিদ দাঁডি়যে় যায়। গরুর দাম কত হল জিঞ্জেস করে। কেউ বলে কেউ না বলেই চলে যায়। এতেই আনন্দ পায় সে। এইসব করতে করতে দিন চলে যায় সাজিদের। পড়ার টেবিলে এসে মনে মনে ভাবে, কাল কোরবানির ঈদ। রাতে বড় ভাইয়া বাডি়তে আসবে তো?

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *