মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহান চরিত্র

আল্লাহর ভাষায় : অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।-সূরা ক্বলাম ৬৮:৪
আল্লাহর রাসূলের জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। -সূরা আহ্যাব ৩৩:২১
নবীজীর (স.) নিজের ভাষায় : উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য আমি দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছি। -বায়হাকী
কথা ও আচরণে কোমলতা : আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় এবং কঠোর হৃদয়ের হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। -সূরা আলে-ইমরান ৩:১৫৯
অধীনস্তের সাথে আচরণ : হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি এক নাগাড়ে দশ বছর নবী (স.)-এর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি কোন দিন উহ্ শব্দটি পর্যন্ত আমাকে বলেননি। এমন কি এই কাজ কেন করেছ আর এটি কেন করনি? এমন কথাও কোন দিন বলেননি। -বুখারী; মুসলিম
দানশীলতা : হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (স.)-এর কাছে এতোগুলো বকরী চাইল, যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী নি¤œভূমি পূর্ণ হয়ে যায়। নবীজী (স.) তাকে সে পরিমাণ বকরীই দিলেন। অতঃপর লোকটি নিজের সম্প্রদায়ের কাছে এসে বলল, হে আমার কওমের লোকেরা, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা, মুহাম্মাদ (স.) এতো অধিক
পরিমাণ দান করেন যে, তিনি অভাবকে ভয় করেন না। -মুসলিম
হযরত জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে যখনই কোন জিনিস চাওয়া হয়েছে, তিনি কখনও ‘না’ বলেননি। -বুখারী; মুসলিম
সাহস : হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষদের ভেতরে সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। -বুখারী; মুসলিম
বিনয় ও সহমর্মিতা : নবীজী (স.) এতোটা বিনয়ী ছিলেন যে, মদীনার একজন বাঁদী ছিল, যে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর হাত ধরে যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যেত (কিন্তু নবীজী (স.) বিষয়টিকে সহজভাবেই নিতেন)। -বুখারী
কথা বক্তৃতা ও বাক্যালাপ : হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) অনর্গল কথা বলতেন না, যেভাবে তোমরা অনর্গল বলতে থাক। বরং তিনি যখন কথাবার্তা বলতেন, তখন ধীরে-ধীরে, থেমে-থেমে কথা বলতেন, এমনকি যদি কোন ব্যক্তি তা গুণতে চাইত তবে তা গুণতে পারত। -বুখারী; মুসলিম

বাকরুচি : নবীজী (স.) অশালীন কথা বলতেন না, অভিশাপ দিতেন না, গালি দিতেন না। কারও প্রতি খুব নারাজ হলে শুধু এতটুকু বলতেন- ‘তার কি হল? তার কপাল মাটি-মিশ্রিত হোক (আরব্য বাকধারা, এটি বদদোআ বা লা’নাত অর্থে নয়)। -বুখারী
লজ্জাশীলতা : হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, নবীজী (স.) পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চেয়েও বেশি লাজুক ছিলেন। যখন তিনি কোন কিছু অপছন্দ করতেন, তখন তাঁর চেহারায় আমরা তার পরিচয় পেতাম। -বুখারী; মুসলিম
হাসিতে রুচিবোধ : হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবীজী (স.)-কে কখনও এমনভাবে মুখ খুলে দাঁত বের করে হাসতে দেখিনি যে, তাঁর কণ্ঠতালু পর্যন্ত দেখা যায়; বরং তিনি মুচকি হাসতেন। -বুখারী
নিজের কাজ নিজে করা : হযরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, তিনি (স.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) (১) নিজের জুতো নিজেই সেলাই করতেন, (২) কাপড় সেলাই করতেন, (৩) ঘরের কাজকর্ম করতেন যেমন তোমাদের কেউ করে থাকে, (৪) নিজেই নিজের কাপড়-চোপড় থেকে উকুন বাছতেন, (৫) বকরীর দুধ দোহন করতেন এবং (৬) নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন। -তিরমিযী
পারিবারিক কাজে সহযোগিতা : নবীজীর (স.) স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করীম (স.) পরিবারের কাজ আঞ্জাম দিতেন। নামাযের সময় হলে নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন। -বুখারী
মিশুক মেজায : নবী (স.) আমাদের পার্থিব আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন আবার আখিরাতের আলোচনায়ও অংশগ্রহণ করতেন এমন কি খানা-পিনার আলোচনায়ও (বিনা দ্বিধায়) অংশগ্রহণ করতেন (নিজেকে বিশিষ্ট বানিয়ে রাখতেন না)। -তিরমিযী
প্রতিশোধ বর্জন : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসূলল্লাহ (স.)-এর কাছে প্রস্তাব করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (স.), কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদ দুআ করুন। উত্তরে তিনি বললেন-আমাকে অভিশাপ দাতা হিসেবে পাঠানো হয়নি; বরং রহমত স্বরূপ পাঠানো হয়েছে।-মুসলিম
চরিত্রের কয়েকটি সূক্ষ্ম দিক : রাসূলুল্লাহ (স.) (১) যখন কোন ব্যক্তির সাথে মোসাফাহা করতেন, তখন তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের হাত সরিয়ে নিতেন না, যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি নিজের হাত সরিয়ে নিত। (২) আর তিনি (স.) সে ব্যক্তির দিক থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিতেন না, যতক্ষণ না সে হুজুর (স.)-এর দিক থেকে নিজের চেহারা ফিরিয়ে নিত। (৩) আর তাঁকে নিজের সঙ্গে বসা লোকদের সামনে কখনও হাঁটু বিস্তার করে বসতে দেখা যায়নি। -তিরমিযী
সময়বিমুখতা : রাসূলুল্লাহ (স.) নিজের জন্য আগামী দিনের উদ্দেশ্যে কোন কিছু জমা করে রাখতেন না। -তিরমিযী
নীরবতা : রাসূলুল্লাহ (স.) দীর্ঘ সময় নীরব থাকতেন। -শরহে সুন্নাহ
সন্তানবাৎসল্য : আল্লাহর নবী (স.) প্রায়ই ধাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পুত্র ইবরাহীমকে চুমু দিয়ে আসতেন।-মুসলিম
অত্যধিক জিকির : রাসূলে আকরাম (স.) বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতেন (মুখে এবং অন্তরে)।-নাসাঈ; দারিমী
মিসকীন, বিধবা : আল্লাহর নবী (স.) বিধবা নারী কিংবা গরিব-মিসকীরদের সাথে চলতে কোনোরকম সংকোচবোধ করতেন না। -নাসাঈ; দারিমী
নিরর্থক কথা বর্জন : আল্লাহর হাবীব (স.) নিরর্থক কথা খুব কমই বলতেন।-নাসাঈ; দারিমী
সালাত ও খুতবা : নবীজী (স.) নিজের নামায দীর্ঘায়িত করতেন কিন্তু খুতবা (বক্তব্য) সংক্ষেপ করতেন। -নাসাঈ; দারিমী
গোলাম অনুভূতি : নবীজী (স.) বলেন, আমি আল্লাহর দাস অতএব, প্রতিটি কাজেই দাস হয়ে থাকতে চাই। -শরহে সুন্নাহ
চরম শত্র“ আবু জাহল-এর সাক্ষ্য : নবী করীম (স.)-এর চরম শত্রু আবু জাহেল উক্তি করে বলেছিল, মুহাম্মদ, আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি না তবে তুমি যে ওহী নিয়ে এসেছ তাকেই বরং মিথ্যা মনে করি। -তিরমিযী

Comments

comments

About

Check Also

আল-কুরআনের আলোকে একনজরে মহানবি স.-এর পরিচয় ও অধিকার

মহানবি স.-এর গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়-০১আল-কুরআন অনুসারে তিনি ছিলেন একাধারেÑ১. নবি২. রাসুল৩. উম্মি বা অক্ষরজ্ঞান অর্জন না …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *