(জীবনগল্প) কবির চিত্তে প্রসব বেদন

কবির চিত্তে প্রসব বেদন
কেউ জানে না ভাই
কবির মতো উদার মানব
ধরায় খুঁজে নাই।
হে পৃথিবী!
তুমি কি কখনো কোনো কবির
অন্তরের প্রসব বেদন উপলব্দি
করতে পেরেছো???
কিংবা কখনো কোনো কবি কে
কাছে থেকে ভালবাসতে
পেরেছো???
অথবা কখনো কোনো কবি কে
আপনার বৃক্ষের নিচে জল ঢালতে
দেখেছো???
নিশ্চয় না।
আমার দীর্ঘ বিশ্বাস তুমি কবি আর কবিতার
মানেই বুঝো না।
কারণ তোমার আচরণ আমাকে সবই
বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকাশ্যে।
জানি! তুমি কবি বিরোধী, তুমি কবি ও
কবিতার
বিপক্ষে কথা ছাঁড়ো।
মাঝে মাঝে দেখেছি তুমি কবিদের
বিপরীত হয়ে, কবিদের শ্রেষ্ঠ
সৃষ্টির
উপর ক্ষোভ প্রকাশ করো।
আবার কখনো দেখেছি তুমি কবিদের
সাজানো স্বপ্ন নিয়ে পুতুল খেলার ভান
ধরেছো।
সত্যি তুমি অসভ্য। তোমার কান্ডবোধ
নেই। তুমি নিজেই তুচ্ছ, এর পরিচয়
ফুটিয়ে তুলো তোমার নষ্ট চিন্তার
মধ্য দিয়ে।
আমি তোমাকে ঘৃণা করি।
শুধু আমি নয়?
গোটা সভ্য জাতি অর্থাৎ কবি বিশ্ব
তোমাকে নির্বোধ শব্দ দিয়ে চিহ্নিত
করে।
তুমি কি জানো এই কবিরাই জাতির বিবেক?
নিশ্চয় না! এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ জানা নেই
তোমার। যদি জানতে, তাহলে কবিদের
মতো উদার হতে। সৃষ্টির প্রেম
বুকে লালন করতে। অন্যের দুখে
দরদী হতে। নিজের স্বার্থ তুচ্ছ
করে
পরের স্বার্থকে বৃহৎ চোখে
দেখতে।
মাপ চাই।
অনেক বকেছি বিশ্ব তোমায়।
আর না। এবার শোন একজন কবির
অন্তরের প্রসব
বেদন।
****
নাম রূআছা। লম্বা চুল। মাঝে মাঝে সভায়
সভায় দেখা যায় কাঁধে ঝুলানো তলি।
দেখলে মনে হয় বনমানুষ।
আসলে বন মানুষের নিজস্ব স্বার্থের
চিন্তা আছে। কিন্তু কবিদের কোনো
নিজস্ব সার্থের চিন্তা নেই। এরা
স্বাধীন, এরা তোমার আমার আমাদের।
এরা গোটা বিশ্বের। তাই এরা বিশ্বকে
নিয়েই চিন্তিত।
এরা সাগরের ঐ দূর নীলিমা, মৃত্তিকা, পানি,
জীবজন্তু, উদ্ভিদ অর্থাৎ গোটা
বিশ্বের সকল কিছু এদের চিন্তার
মধ্যে বাস করে দিবারাত্রি। এরা মহান, এরা
উদার, এরা শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। এদের
তালিকার মধ্যেই অন্তরভুক্ত কবি রূআছা।
কবি রূআছা দশম শ্রেণি থেকেই কবি।
আমি উনার বহু কবিতা পড়েছি। উনার কবিতার
মধ্যে প্রেম, বিদ্রোহ, জাগরণ ইত্যাদি
খুঁজে পেয়েছি।
******
বিশ্বাস করো বিশ্ব সমাজ, আমি এই কবির
সাথে প্রতিদিন আলিঙ্গন করি। এই
গভীর
আলিঙ্গনের মধ্যে আমার জানা হয়,
দেখা হয় উনার মর্মান্তিক ব্যথা। আমি এই
কবির ব্যথায় ব্যথিত হয়ে কত রাত যে
কেঁদেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
কবি রূআছা ছোট বেলা থেকেই
পিতৃস্নেহহীন।
পিতাহীন ছেলের জীবন কত যে
কষ্টের হয়- তা কে জানে? কেউ না।
শুধু সেই জানে, যার এই সম্বল হারিয়ে
গেছে।
কবি রূআছা পিতার স্মৃতি স্মরণ করে রচনা
করেছেন একটি দীর্ঘ কবিতা, সেই
কবিতার কিছু অংশ।
বাবা আমার মনের ঘরে
নিত্য ফিরে আসে,
রাত কিংবা দিন দুপুরে
বাবার স্মৃতি ভাসে।
********
বাবা কে হারিয়ে কবি রূআছা ও তিন আদর্শ
মানুষ নিয়েই সংসারে বেঁচে আছেন।
ছোট এক বোন, যাকে আদর করে
কবি তার রচিত কত কবিতার সারিতে যে
বসিয়েছেন, তার কোন উপমা নেই?
তন্মধ্যে একটি ছন্দ তুলে ধরলাম—-
বোন রে আমার বোন
তোর সুখেতে তালাক দেব
আমার জীবন সুখ,
বোন রে আমার বোন
তোর খুশিতে জীবন দেব
বিন্দু নাই যে দুখ।
/
কবি রূআছা তার ছোট বোন কে এত
ভালবাসেন তার প্রমাণ মিলে এই ছন্দমালা
থেকে, কবি রূআছা এই বোন কে
নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, একটা
আলোকিত স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন
দেখতে দেখতে সেই ছোট্ট
বোনটি অনেক বড়ো হয়ে গেল।
বড়ো হওয়ার সাথে সাথে
কবির মস্তকে চিন্তার পাহাড় জমেগেল।
এক সময় সেই চিন্তার পরিসমাপ্ত হলো।
বোনটির বিয়ে হলো। কবি এই
ছোট্ট বোনটিকে একজন আদর্শ
পুরুষের ভুজে তুলে দিতে পেরে
আজ মহা আনন্দে।
****
কবি’র এই আনন্দের মাঝে লুকিয়ে
আছে বিশাল বেদনা।
কবি রূআছা’র একমাত্র বড় সহোদর
মোটামুটি অক্ষরবোধ নিয়ে সেই
ক্লাস ফাইভ থেকে সংসারের বার কাঁধে
তুলে নিয়ে ছিলেন, আজও সেই হাল
ধরেই আছেন। কবি প্রিয়
সহোদরকে আজও একটু সাহায্য
করতে
পারেন নি।
কবি সহোদরের প্রেমে সিক্ত
হয়ে রচনা
করেন—-
মোমের বাতির মতো পুড়িয়ে
জীবন
তিনের সেবা করে চলছ,
উনুনের কাঠ হয়ে রুধির জন্য
অগ্নিতে বারবার জ্বলছ।
****
কবি রূআছা’র এই চরণ গুলো ছাড়া
সহোদর কে আর
কিছু উপহার দেবার নেই।
স্বর্গ সুখ মা তিনিও কত বার যে মৃত্যুর
কোল থেকে ফিরে এলেন কিন্তু
কবি বিন্দু মাত্র কাজে আসেননি, তাই উনি
নিজেই বলেছেন আমি এক রক্তমাংস
হীন প্রাণী, আমার কাছ থেকে
নিতে পারো প্রেম
আর কবিতার চরণ যদি কাজে আসে।
আর নাই কিছু আমি রিক্ত কানন।
মা – মা – মা তোমায় কি দেব উপহার?
দিতে চাই যা,
নিতে চাও তা।
কবি রূআছা
মায়ের তুলনা নেই সেই ভাষাটি প্রকাশ
করেন তার কবিতার মধ্য দিয়ে—-
দৈন্য দিনের সঙি আমার
নেই যে মায়ের তুল,
এই ভুবনে মা-জননী
জান্নাতের ঐ মূল।
কবি রূআছা জনম দুখী। উনার সঙি হলে,
মনে হয় দুখ উনাকে সারা জীবনের
জন্য ঘিরে পেলেছে।
তবুও উনি কবিতা লিখেই যাচ্ছেন, বুকে
প্রসব
বেদন নিয়ে। মানুষের তরে, গোটা
বিশ্বের মুক্তির তরে।
বিশ্ব মানব –কবিরা জীবন, সংসার, সুখ, সব
কিছু বিসর্জন দিয়ে
বোধের কলম নিয়ে
একাধারে মানুষের মুক্তির জন্য
সংগ্রাম করেন। তারা এই সংগ্রাম করতে
গিয়ে বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন হোন,
পরিবার, সমাজ, দেশ ও বিশ্বের কাছে।
তাদের এই প্রসব বেদনার মতো
আহাজারি পৃথিবীর কেউ দেখেনা।
তাইতো ওরা সবার থেকে ভিন্ন।
অমরত্বেও ওরা ভিন্ন।
ওরা চলে যায় খালি ভুজে,
তার পরে দেখি বিশ্ব ওদের কে
খুঁজে।

Comments

comments

About

Check Also

কবিতা তার কাব্যরস হারাচ্ছে

দিন যত পেরুচ্ছে কবিতা যেন তার ভেতরে থাকা কাব্যরসগুলো একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে। একটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *