ধূম্রদের অভিযান

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৭ম পর্ব
খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ মুসলিমদের জঙ্গি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে সব ধরণের ষড়যন্ত্র করে আসছে শত শত বছর ধরে। ইহুদিরা খ্রিষ্টীয় শক্তির প্রধান সহায়তাকারী। ইতিহাস পাঠে এটাই জেনেছেন ড. আশরাফ। ক’জন খ্রিষ্টান গুপ্তচরের লেখা ‘ব্রিটিশ গুপ্তচরের জবানবন্দী’ নামক গ্রন্থে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের এ বিষয়টি। খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে মুসলিমদের সংস্পর্শে আসা মিশনারীর এই সদস্যরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেয় স্বেচ্ছায়। এরপর তাদের লিখিত জবানবন্দী প্রকাশ হলে রীতিমতো চমকে উঠে মুসলিম বিশ্ব।
ড. আশরাফের ধারণা, অধ্যাপক আবু সালেহ ব্রিটিশ গুপ্তচরের খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের পাতানো জালে আটকা পড়ে তাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন। আসলেই কি তিনি ব্রিটিশ গুপ্তচর মিশনে জড়িয়ে পড়েছেন সে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ এখনো পাননি ড. আশরাফ। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একটি নীতিমালার আলোকে আবু সালেহকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডায়রিতে একটি নীতিদীর্ঘ নোট করতে লাগলেন। গ্রন্থের খ্রিষ্টান মিশনারীদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দিক নির্দেশনামূলক আলোচনার অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো নোটবুকে স্থান দিলেন তিনি।
১. ইসলামের ইতিহাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। কব্জাকৃত মুসলিমদের মুখ দিয়ে এটা ছড়াতে হবে যে, ‘মুসলমানরা কোনো কালে একতাবদ্ধ ছিলো না-এখনো নেই। ইসলাম তরবারির দ্বারা বিজিত হয়েছে, আদর্শে নয়। তাই যার যার সাধ্যমতো স্বীয় অবস্থানে থেকে জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করো। আর ভুলেও একতাবদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন কেউ দেখো না। ’ এভাবে মুসলিমদের বিভ্রান্ত রাখতে হবে। ২. মুসলমানদের বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করতে হবে। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এদের থেকে যারা খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হবে তাদেরকে ইসলামের প্রকৃত অনুসারী পরিচয়ে ইসলামি বিধানাবলীর মধ্যে প্রশ্ন তুলবে। এতে জনসাধারণের ধর্মীয় বিশ্বাসে চিড় ধরবে। তাদের ঈমান দুর্বল হবে। ৩. শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বে ইন্ধন যোগাতে হবে। এমনভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে যেন অন্তর্দ্বন্দ্বেই তাদের জীবন কেটে যায়। ৪. মুসলিমদের দূর্বল পয়েন্টগুলো কোথায় কোথায় তা খুঁজে বের করার। এর মাধ্যমে আমরা তাদের দেহের গিরা গাড়া স্থানচ্যূত করতে পারব। শত্র“কে আঘাত করার এটাই মোক্ষম পন্থা। ৫. মুসলমানদের মধ্য থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য। যতো দেরীতেই হোক আমাদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে হবে। স্মরণ রাখবে-যে গাছের শিকড় মাটির গভীরে পুঁতে গেছে সে গাছকে হঠাৎ টান মেরে উপড়ে ফেলা কঠিন। ৬. জেনে রাখবে-মুসলমানরা এমনিতেই সহনশীল, খোলা মনের অধিকারী এবং পরোপকারী। এসব গুণ তারা নবী মুহাম্মদ সা. এর বাণী থেকে শিক্ষা লাভ পেয়েছে। তারা আমাদের মতো সন্দেহ প্রবল লোক নয়। তথাপি যদি কোনো গুপ্তচর আটক হয়ে যায় তখন আমরা যেকোনো ছুঁতোয় তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তাই নির্ভয়ে কাজ চালিয়ে যাবে। ৭. তিনটি কথা সবসময় মনে রাখবে। (ক) মুসলমানদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করা। (খ) তাদেরকে ধর্ম বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত করা। (গ) খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। ৮. প্রতিটি মুসলিম দেশে মিশনারীর সদস্য গোপনে আস্থানা গেড়ে আছে। তবে কেউ কাউকে চিনতে সক্ষম হবে না। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয় অথবা দূতাবাসে মিশনারীর লোক নিয়োগ রয়েছে। প্রয়োজনবোধে তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হবে। ৯. সব সদস্যের কাছেই নিয়োগকৃত এলাকার ম্যাপ, গোত্র প্রধান, ধর্মীয় নেতা, আলেম ও রাজন্যবর্গের নামের তালিকা দেয়া হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও জিনিষপত্র নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছে পৌছানো হয়। সুতরাং নিজেদের আসল উদ্দেশ্য পূরণে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা উচিত। ১০. মুসলিম নেতাদের সব সময় যেকোনো একটা ইস্যুতে আন্দোলনের ভেতর রাখবে। আন্দোলনের ইস্যুটি তাদের নবীকে কটাক্য বিষয়ে তৈরি করতে পারলে বেশ ভালো। সাধারণ মানুষ যেভাবে নেতাদের উপর বিরক্ত হয় সেভাবে ইস্যু বানাতেই থাকবে। ১১. মুসলমানদের মধ্যে মনোমালিন্য জাগিয়ে তাদের পরস্পরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারলে তুমি হতে পারবে একজন সফল এজেন্ট। এ কাজের প্রথম পুরস্কারও জুটতে পারে তোমার ভাগ্যে। ১২. প্রতিবছর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কিংবা ব্যক্তির উপর অন্তত দুই তিনটি সন্ত্রাসী হামলা চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এর দোষ চাপাতে হবে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠির উপর। বিশ্ববাসী সব সময় জানবে ইসলাম মানেই সন্ত্রাস। ১৩. হে বীর সাথী! পর্বতে আরোহণ করতে হলে খাদে ও টিলাটক্কর খুঁজে বের করতেই হয়। যে-সব মুসলিম রাষ্ট্র আজ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই রাষ্ট্রগুলোকে রুখতে হবে। এতে প্রথম কাজ হলো প্রশাসনের বিরুদ্ধে লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তোলা। গণবিক্ষোভই পারে একটি সফল বিদ্রোহ সৃষ্টি করতে। এভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ভীত দুর্বল করে তাদের পরস্পরের মধ্যে সহমর্মিতাকে ছিনিয়ে নিতে হবে। তাদের ঐক্যের শক্তি বিনষ্ট করা গেলে আমরা তাদের নিঃশেষ করে দিতে সক্ষম হব। ১৪. মুসলমানদের মধ্যে মাযহাব বিষয়ে বেশি বেশি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দাও। শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্বে ঘি ঢেলে দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হবে-সুন্নিদের সংখ্যালগুতে ঠেলে পাঠানো। মাযহাব ব্যাপারে যতো বেশি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারবে ততোই আত্মঘাতি যুদ্ধে মেতে উঠবে তারা। এর দ্বারা তাদেরকে শতধাবিভক্ত করতে পারলে তাদের ঐক্য আর কখনো ঘটবে না। ১৫. ইসলামী প্রতিষ্ঠান যেমন-মসজিদ, মাদরাসা যাতে বৃদ্ধি না পায় তার জন্য কাজ করো। স্থানীয় লোকদের কব্জা করে তাদেরকে দিয়ে কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাবে। সহশিক্ষা তথা যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে যাতে শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠে তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে। ১৬. শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আমাদের মতাদর্শকে পাঠ্যপুস্তকে ঢুকাতে সংশ্লিষ্ট কমিশনকে প্ররোচিত করবে। শিক্ষা কমিশনকে মিশনারীর আজ্ঞাবহ করার সব ধরণের ব্যবস্থা দৃঢ়তার সাথে করতে হবে। মনে রাখবে, শিক্ষা ব্যবস্থাই অঙ্কুরে বীজ বপনের একমাত্র অবলম্বন বা হাতিয়ার। হাতিয়ার যদি অকেজো হয়ে যায় তবে নিপুন শত্র“ সহজেই সবকিছু ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। ১৭. আলেম সমাজের বিরুদ্ধে নৃশংসতা, জিনা, সুদ, ঘুষ ইত্যাদির সাথে জড়িত বলে মিথ্যা বদনাম ছড়াবে। তাদেরকে কলঙ্কিত করে মুসলমানদের দূরে সরিয়ে দেবে। আলেমদের ভেতর কিছু গুপ্তচরকে আলেম বানিয়ে এদের দ্বারাই সব জঘন্য কার্যকলাপ করাবে। জনসাধারণকে আলেম বিরোধী বানানোর লক্ষ্যে কিছু মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করে গুপ্তচর আলেম নিয়োগ দিতে হবে। ১৮. মুসলমানদেরকে দুনিয়া বিমুখ হয়ে শুধু পরকালের জন্য ধর্ম-কর্ম পালন করতে প্ররোচনা দেবে। ইসলামি জ্ঞানার্জন যাতে বেশি করতে না পারে সে জন্য প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করাবে। পুরুষদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে বের করতে ধর্মের নামে বা ইসলাম প্রচারের অজুহাতে সফরে পাঠিয়ে পরিবারকে অভিভাবক শূন্য রাখবে। এতে উক্ত পরিবারের নারী ও শিশুদের কাছে আমাদের মিশন প্রচারে সহজতর হবে। ১৯. মসজিদগুলোকে সাধারণ ঘরের মতো যাতে ব্যবহার করতে শুরু করে সে জন্য মসজিদে থাকা-খাওয়া ও দুনিয়াবি কর্মকাণ্ড পরিচালনার কাজে মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করবে। মসজিদকে হট্টগোলের স্থান করাতে পারলে তাদের ঈমানের বাতি ক্ষীণ হতে থাকবে। ২০. রাষ্ট্রের ভেতর সুদ, ঘুষ, মুনাফাখোরী, মদপান, ব্যভিচার এবং শূকরের মাংস ভক্ষণসহ সব ধরণের অনৈতিক ইসলাম বিরোধী কাজগুলোকে ছড়িয়ে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। ২১. মুসলমানদের ভেতর ফাটল ধরানোর প্রধান অস্ত্র হলো বর্ণ বৈষম্য। তাদের মধ্যে যারা গরীব, দুর্বল ও নিম্নবর্ণের বলে পরিচিত এদেরকে উচ্চবর্ণের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ ঢুকিয়ে দেবে। বর্ণ বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলবে। মুসলমানরা মুখে বলে সবাই একই ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ অথচ নিম্নবর্ণ ও উচ্চবর্ণ বলে তারা বিভক্ত হয়ে রয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই নিম্নবর্ণ, গরীব, দুর্বল লোকেরাই দলে দলে প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করে। এই সূত্রে এবার খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হবে উক্ত শ্রেণির মুসলমানরাই বেশি। ২২. মুসলমানদের মধ্যে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা বা যার সাথে প্রয়োজন বলে মনে করবে তার সাথে একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত খ্রিষ্টান নারীকে মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করিয়ে দেবে। এটা বেশ কার্যকর কৌশল। ২৩. মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুগত রাখতে উক্ত বিভাগে ঋণ দেয়া, ফ্রি চিকিৎসা সেবা টিম প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে চাপে রাখতে হবে। মুসলিম রাষ্ট্রকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ২৪. সব পরিকল্পিত কাজ বাস্তবায়নে মুসলিম দেশগুলোর অধিবাসী খ্রিষ্টান, ইহুদি, ম্যাগিয়ান এবং অন্যান্য অমুসলিমদের ব্যবহার করবে। কারণ এরা সবাই ইসলাম ধর্মের ক্ষতি সাধনে একাট্টা হয়ে আছে। যাদের কাজে লাগানো হবে তাদেরকে আলাদাভাবে উচ্চ পর্যায়ের বেতন দেয়া হবে। ২৫. ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারের সব পথ বন্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা নিবে। মসজিদের ইমামদের ছোট ভুলকেও বড়ো করে তুলে ধরে বেশি বেশি প্রচার করবে। ইমামরা যাতে অন্য ধর্মের ছিদ্রান্বেষ না করে, অন্য ধর্ম বাতিল ও পরিত্যাজ্য এ কথা খুতবায় বলতে না পারে সে জন্য রাষ্ট্রের শাসন বিভাগকে দিয়ে হুশিয়ার করাবে। ২৬. মুসলমানদের এবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করবে। এবাদতের উপকারিতা সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ করতে সব ধরণের পথ অবলম্বন করবে। এবাদতের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতাকে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে তুলে ধরবে। ২৭. রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে গির্জা মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদিসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর উপাসনালয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্মাণ করাবে। এতে মুসলিমরা নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়বে। ২৮. নারী জাতিকে পর্দা প্রথা থেকে বাইরে আনতে চেষ্টা চালাবে। এতে অমুসলিম নারীদের কাজে লাগাবে। পর্দাহীন নারীদের আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরে পর্দানশীল নারীদের প্ররোচিত করাবে। সময়ের প্রবাহে একদিন মুসলিম মহিলারাও আপনা থেকে অধঃপতিত হবে এবং পর্দাহীনতায় আসক্ত হবে। ২৯. সব ধরণের কবর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে কাজ করবে। এতে সমাধিকে ঘিরে আলাদা বলয় তৈরি হবে না। সমাধিস্থ ব্যক্তির অনুসারীরা তাঁর স্মৃতি ভুলে দলে উপদলে ভাগ হয়ে ফিতনা ফাসাদে জড়িয়ে পড়বে। ৩০. জসসাধারণের মধ্যে একথা ছড়াবে যে, আমরা সবাই স্বাধীন। যে-যার ইচ্ছা মতো ধর্ম পালন করব। এতে বাঁধা বা শাস্তি দেয়ার কেউ নেই। ৩১. আরবি ভাষা শিক্ষার পথ সঙ্কুচিত করাতে হবে। তখন পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কোরআনের অনুবাদ করে প্রকাশ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় স্থানে বিকৃত অর্থও ঢুকানো যাবে। অনুরূপভাবে আরবিয় দেশের বাইরের মুসলিম দেশগুলোতে আজান, খুতবা, নামাজ ও দোয়ায় আরবি চর্চা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ৩২. কোরআন ও হাদিসে নকল শব্দ ঢুকাতে পারলে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করা সহজ হবে। বিশেষ করে সব ধরণের হাদিসকে জাল হাদিস, দুর্বল হাদিস, পরিত্যাজ্য হাদিস বলে প্রচারণা চালাতে হবে। অনারব মুসলমানরা এতে হাদিসের উপর সন্দিহান হয়ে পড়বে এবং হাদিস চর্চা থেকে সরে আসবে। উপরোক্ত নোটটি বার বার পড়লেন ড. আশরাফ। যতো বারই পড়েছেন ততোবার চমকে উঠেছেন তিনি। ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করতে খ্রিষ্টান মিশনারীর এতো সুদূরপ্রসারী কুচক্রী পরিকল্পনা এর আগে এমন সূক্ষ্মভাবে তাঁর কাছে ধরা পড়েনি। সব থেকে আশ্চর্যের কথা হলো, অধ্যাপক আবু সালেহ গোপনে এই মিশনারীর লোক হয়ে কাজ করছেন এটা স্পষ্ট। তাঁর কর্মকাণ্ড ও আচরণ খ্রিষ্টান মিশনারীর দিক নির্দেশনার সাথে শতভাগ মিলে যায়। এছাড়া আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আলেম উক্ত নির্দেশনার হুবহু কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ড. আশরাফের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ড. আশরাফ অত্যন্ত বিমর্ষ ও বিচলিত মনে বাস্তবতার সাথে নোট করা কথাগুলোর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন। সারা দেশে মাযহাব বিরোধীরা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা কৌশলে চাপিয়ে দিচ্ছে ইসলাম বিধ্বংসী মতবাদ। কখনো বলছে বোখারি শরিফ ছাড়া কোনো হাদিসের কিতাব বিশুদ্ধ নয়। আর কখনো বলছে বোখারি শরিফে অনেক জাল ও দুর্বল হাদিস রয়েছে। তারা বিজাতীয় আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ ও সংস্কৃতিকে ইসলামে বৈধ বলে প্রচার করছে। ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্যান্য নামাজের গুরুত্ব খর্ব করে উপস্থাপন করছে। তারা সলফে সালেহীন যুগের আলেম-ওলামা ও বিশুদ্ধ মাজহাবের ঠিক বিপরীত বিধানাবলী পালনের জন্য ব্যাপক প্রচার না চালিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ধোকা দিচ্ছে। আরবি ভাষাকে বাদ দিয়ে নিজ নিজ ভাষায় আজান, নামাজের কেরাত পাঠ ও খুতবা পাঠের স্বীকৃতির জন্য জোর দাবি তুলেছে। কবরস্থান ধ্বংস করতে মনগড়া ফতোয়া জারি করছে। ড. আশরাফের বিমর্ষ মনে অচেনা এক ক্ষোভে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে। (৬ষ্ঠ পর্ব) (৮ম পর্ব)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *