‘এলো মাহে রামাদ্বান
এলো মাহে রামাদ্বান।
বাঁকা চাঁদের হাসিতে রাঙিল আসমান!!’
রমজানের চাঁদ দেখার পর মনের আনন্দে এভাবেই গজল গাইছে রাদি। মাগরিবের নামাজ শেষে মসজিদের মাঠে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূর আসমানের রমজানের তাগিদ দেয়া ঝকঝক চাঁদের দিকে। রাদির বয়স ১০ ছুঁইছুঁই। মনে মনে ইরাদা করে নিল সে এবার ১৫ টা রোযা রাখবে। বাসায় গিয়ে মায়ের কাছে বায়না ধরল, মা! মা! এবার আমি রোযা রাখবই। না রে আমার বাবু সোনা, এখনো তুই ছোট। আম্মু সম্পূর্ণ রাখব না, ১০/১৫ টা রাখব মাত্র। ময়না আমার, সামনের বছর রাখবি।
বাড়ন্ত ছেলে রাদিকে কে বুঝায়! সে রাখবে বলেছে রাখবেই। কাল প্রথম রমজান। রাদি তাঁর বড় আপুকে বলে রেখেছে যেন সেহরি তে ডাক দেয়। বড় ভাইয়াকেও বলে রেখেছে যদি আপুর মিসটেইক হয়! রোযা রাখার খুশিতে যেন তাঁর ঘুম আসছে না। এদিকে সেহরির অপেক্ষায় অপেক্ষমান। “রাদি! এই রাদি! উঠ! কাঁধে হাত দিয়ে আপুর ফিশফিশ করে ডাকার শব্দে ঘুম ভাঙল রাদির। উঠ! সেহরি খাবি। চোখ টেনে টেনে উঠল রাদি। ফ্রেশ হয়ে বসল সেহরি খেতে। কী রে রাদি! পারবি রোযা রাখতে? তোমরা পারলে আমি পারব না কেন বাবা! বাবা মুচকি হেসে চুপ রইলেন। সেহরি শেষে ফজর নামাজ পড়ে ঘুমালো রাদি। নয়টার দিকে ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। রাদি! এবার উঠ! কিছু খাবি। ঘুম ঘুম স্বরে-কী খাব? কেন খাব? কোথায় খাব? কখন খাব? আহহা ভাত খাবি উঠ! তুমি খাবে? না আমি খাব কেন আমি তো রোযাদার। তো আমাকে খেতে ডাকছো কেন? আমি তো তোমার মতই রোযাদার। মা পারলেন না রাদিকে খাওয়াতে। ধীরে ধীরে আসরের সময় হলো। রাদির অনেক ক্ষিধা লাগছে। কিন্তু মুখে হাসি রাখছেই যেন কেউ বুঝতে না পারে। ইফতারের যখন আর আধাঘন্টা বাকী তখন সে আর হাটতে পারছে না, বসে আছে কাতর হয়ে। আপু ঢং করে বলল, কী রে রোযায় ধরছে? হাহাহা! রাদির মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। ইফতার রেডি। সবাই বসলেন ইফতারের সামনে। রাদি কাতরের মত বসা। মসজিদের মিনার হতে যেই আযানের ধ্বনি বেজে উঠল রাদি শরবতের পরশে রোযা পরিপূর্ণ করে এক বিশাল হাসি দিল। যে হাসি আনন্দের, তৃপ্তির, সুখের।