হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক : সংক্ষিপ্ত একটি পর্যালোচনা

মায়ের দুধকে রেফ্রিজারেটর বা অন্য কোন মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখা। এই পদ্ধতিকে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক বা মাতৃদুগ্ধ সংগ্রহশালা বলা হয়। পশ্চিমা বিশে^ প্রায় বিশ বছর আগে এটি শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক পত্র-পত্রিকায় প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এর উদ্যোগে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেহেতু কোন মহিলার দুধ পানের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে দুধ পানকারী শিশুর সাথে মহিলার মাতৃ-সম্পর্ক স্থাপন হয় সেহেতু এরকম ব্যাংকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। এখানে আমরা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক নিয়ে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করছি, তার আগে আমাদের জানতে হবে দুধ পানের মাধ্যমে মাতৃ-সম্পর্ক স্থাপনে শরীআতের কিছু বিধি-বিধান।
জন্মদাত্রী মা ছাড়া অন্য কোন মহিলা শিশুকে দুধ পান করালে সেটাকে দুধ সম্পর্ক বলে। আরবীতে ইহাকে রিদ্বাআত বলে। দুধ সম্পর্ক বংশীয় আপন সম্পর্কে মতোই। আপন ভাই-বোন, জন্মদাত্রী মা, তাদের যে হুকুম হবে দুধ সম্পর্কের কারণে একই হুকুম দুধ ভাই, দুধ বোন, দুধ মাতা, বাবা তাদের সাথেও হবে। চার মাযহাবের ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, বংশীয় কারণে যেভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম তদ্রুপ দুধ পানের মাধ্যমে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাতেও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইয়াহরুমু মিনার রিদ্বাআহ মা ইয়াহরুমু মিনান নাসাবি’ অর্থাৎ-বংশীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে যারা হারাম, দুধ সম্পর্কের ভিত্তিতে তারাও হারাম। বুখারী, ৭/১৫

কতটুকু দুধ পান করলে দুধ-সম্পর্ক হবে
এ মাসআলায় কুরআন-সুন্নাহয় পারদর্শী পূর্বসূরী ইমামগণের কিছুটা মতভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। প্রত্যেকের পক্ষেই কুরআন ও হাদীসের দলীল বিদ্যমান। ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম মালিক র. এবং তাঁদের অনুসারীদের কাছে রেদ্বাআত বা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দুধের নির্দিষ্ঠি কোন পরিমাণ নেই। বরং দুধের পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক তাতে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে। (আল বেনায়া শরহুল হিদায়াহ, ৪/৮০৪) হানাফী ইমামগণের এ সিদ্ধান্তের দলীল হলো আল্লাহ তাআলার বাণী-‘ওয়া উম্মাহাতুকুমল লা-তী আরদ্বা‘নাকুম ওয়া আখাওয়াতুকুম মিনার রাদ্বাআহ’ অর্থাৎ-(বিবাহ করা হারাম) তেমাদের সে সকল মায়েদের যারা তোমাদের স্তন্যপান করিয়েছেন এবং তাদেরকে যারা তোমাদের দুধ-বোন। এ আয়াতে মুতলাকানভাবে রিদ্বাআতুন শব্দ এসছে, যা দুধের পরিমাণ কম এবং বেশি উভয়কেই অন্তর্ভূক্ত করে। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস ‘ইয়াহরুমু মিনার রিদ্বাআহ মা ইয়াহরুমু মিনান নাসাবি’ এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় দুধ পান কম হোক বা বেশি হোক তাতে রেদ্বাআত সাব্যস্থ হবে। কেননা রাসূল সা. বিবাহ হারাম হওয়া জন্য শুধুমাত্র দুধ পান করানোকেই যথেষ্ঠ মনে করেছেন, দুধের পরিমাণের শর্তারোপ করেন নি। সুতরাং দুধ পান সেটা কম হোক বা বেশি হোক সেটা ধর্তব্য নয়। ইমাম আইনী বলেন, পাঁচবার, সাতবার, দশবার এরূপ শর্তারোপ ছাড়াই হুরমত বা বিবাহ হারাম সাব্যস্থ হবে। (আল বেনায়া শরহুল হিদায়াহ, ৪/৮০৭) সুতরাং শিশুর পেটে যদি কোন মহিলার এক ফোটা দুধও প্রবেশ করে তাতে এ মহিলার সাথে শিশুর দুধ-সম্পর্ক স্থাপন হবে।

কোন দিক দিয়ে দুধ পেটে পৌঁছলে দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে
শিশু যে কোনভাবে দুধ পান করুক তাতে দুধ-সম্পর্ক স্থাপন হবে। এমনকি শিশু যদি স্তনে মুখ না লাগিয়ে দুধ পান করে অর্থাৎ যদি স্তনের দুধ সিরিঞ্জ, ড্রপ বা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে শিশুর গলা পর্যন্ত বা সরাসরি পাকস্থলিতে অথবা মগজে পৌঁছিয়ে দেয়া হয় তাতেও দুধ-সম্পর্ক সাব্যস্থ হবে। এ বিষয়ে চার মাযহাবের অধিকাংশ ফকীহ একমত পোষণ করেছেন। (বাদায়ে‘ ৩/৪০৭, বেদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৯৯৯, আল মুগনী ১১/৩১৩)
তবে দুধ যদি কান দিয়ে প্রবেশ করে তাতে রেদ্বাআত সাব্যস্থ হবে না। অথবা যদি শরীরের অন্য কোন স্থানে ইনজেকশন পোশ করে দুধ দেওয়া হয় তাতেও হুরমত সাব্যস্থ হবে না। (বেনায়াহ ৪/৮২৬, আল মুগনী ১১/৩১৩)

কত বয়সে দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক হবে
এ মাসআলায় আহলে জাওয়াহির ব্যতীত সকলে একমত যে, দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ার জন্য অবশ্যই শিশুকে শিশু বয়সেই দুধ পান করতে হবে। শিশু বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোন মহিলার দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে না। তবে কত বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বয়স সেটা নিয়ে ফকীহগণের ভিন্নমত রয়েছে।
(এক) ইমাম আবূ হানীফা রা. এর মতে জন্ম থেকে ত্রিশ মাস তথা আড়াই বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশু বয়স । আড়াই বছরের উর্ধ্বে কোনো শিশু দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক সাব্যস্থ হবে না।
(দুই) ইমাম মালেক, শাফেঈ ও হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু ইউসূফ ও মুহাম্মাদ (রাহ.) প্রমুখের মত হচ্ছে, জন্ম থেকে দুই বৎসর পর্যন্ত শিশু বয়স। এর উর্ধ্বের কোনো শিশুর দুধ পান দ্বারা দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না। প্রত্যেকেই স্বপক্ষে কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। আয়াতের সুস্পষ্ট বক্তব্য দ্বিতীয় মতটিকে সমর্থন করায় পরবর্তী ফকিহগণ এ মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ শিশুকে দুধ পানের সর্বোচ্চ সীমা দুই বছর, তাই দুই বছরের পর কোন শিশুকে দুধ পান করানো জায়েয হবে না। তবে বিশেষ কারণে দুধ পান করানো যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবে দুই বছরের উর্ধ্বে কোন শিশু দুধ পান করলে-দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় সম্পষ্ঠ হলো-
১। কোন শিশুর পেটে বা মগজে জন্মদাত্রী মা ছাড়া অন্য কোন মহিলার দুধ গেলে তাতে ঐ মহিলার সাথে শিশুর দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ বিষয়ে সকল মাযহাবের ফকীগণ একমত।
২। হানাফী এবং মালিকী মাযহাবের ইমামগণের মতে দুধের পরিমাণ এক ফোটা হোক বা তার থেকে বেশি হোক সেটা ধর্তব্য নয়। বরং দুধের পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক তাতে হুরমত সাব্যস্থ হবে। অন্যান্য মাযহাবের ইমামগণ দুধের পরিমাণ নির্দিষ্ঠ করেছেন।
৩। শিশু যদি সরাসরি কোন মহিলার স্তন থেকে দুধ পান না করে, বরং তাকে ভিন্ন কোন পন্থায় তথা সিরিঞ্জ, ড্রপ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে দুধ পান করানো হয়, বা পাকস্থলিতে অথবা মগজে পৌঁছানো হয় তাতেও এই মহিলার সাথে শিশুর দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে। এ ব্যপারে মাযহাবচতুষ্ঠয়ের জমহুর ফুকাহা একমত।
৪। শিশুর বয়স দুই বছরের মধ্যে দুধ পান করলে দুধ-সম্পর্ক স্থাপন হবে।

কখন দুধ-সম্পর্ক স্থাপন হবে না
১। শিশু বয়স অতিক্রম করার পর যদি কোন বাচ্চা কোন মহিলার দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হবে না।
২। সন্দেহ থাকলে দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে না। অর্থাৎ কোন মহিলার দুধ পান করা হয়েছে এ নিয়ে যদি সংশয় তৈরী হয় তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না। তবে যদি দুজন মহিলার দুধ এক পেয়ালায় রেখে শিশুকে পান করানো হয় তাহলে দুই মহিলার সাথেই দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে। (বেনায়াহ ৪/৩৫৭)

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক
পশ্চিমা বিশে^র ইউরোপ-আমেরিকায় প্রথম এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। যে সকল মহিলার শিশু মারা গেছে অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে যদি কোন মহিলা স্তনের দুধ জমা রাখতে চান তাদের জন্য এ পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। এ সকল মহিলা মিল্ক ব্যাংক-এ এসে দুধ জমা রাখতে পারেন। কর্তৃপক্ষ সেটা অন্য শিশুকে বিক্রি করে বা দান করে। পশ্চিমাদের অনুকরণে কোন কোন মুসলিম দেশে এরকম ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শরীআতের দৃষ্ঠিতে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। মুসলিম বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিকাহ বোর্ড ও.আই.সি’র ‘মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী’ এর ফকীহগণ আধুনিক এ মাসআলা নিয়ে বৈঠকে বসেন। ফকীহগণ সামগ্রিক দিক চিন্তা করে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ বা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষনা দেন এবং মুসলিম দেশসমূহে এরূপ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা নাজায় বলে ফতওয়া দেন। (মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী পত্রিকা, ১/৪১৭)
ইসলামী শরীআতে জন্মদাত্রী মা ছাড়াও অন্য মহিলার দুধ পান করাকে বৈধ করা হয়েছে। তবে ইসলামী পদ্ধতি হলো শিশু সরাসরি মায়ের বুক থেকে অর্থাৎ দুধমাতার বুক থেকে দুধ পান করবে। যা অতি উত্তম এবং বাস্তবমুখী। কেননা দুধ পান করানোর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শিশুর শারীরীক বৃদ্ধি নয় বরং মায়ের সাথে সন্তানের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সেতু বন্ধনও । শরীআত সমর্থিত এ পন্থাকে চালু না করে ইয়াহুদী-নাসারাদের আবিষ্কৃত ব্যাংকিং পদ্ধতিকে সমর্থন দেওয়া অনুচিত। মুসলমানদের উচিত হলো পশ্চিমাদের আবিষ্কৃত এ পদ্ধতি নয় বরং শরীআত সমর্থিত দুধ মাতার পদ্ধতি প্রচলনের প্রতি উৎসাহিত করা।
মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলমানগণ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হবেন। ব্যাংক পরিচালনায় যারা আছেন তারা বলছেন দুধ দাতা মহিলার নাম-ঠিকান লিখে দুধ আলাদা রাখবেন। আমাদের সমাজে যে সকল অভিভাবক শিশুর জন্য সেখান থেকে দুধ আনবেন তারা দুধ দাতা মহিলার খোঁজ করবেন কি না? সেটাও বিবেচনার বিষয়। খোঁজ করলেও আরেকটি সমস্যা থেকে যায়। উদাহরণস্বরূপ, মিল্ক ব্যাংক এ একজন গরীব মহিলা দুধ দান করলেন, কোন অভিজাত পরিবার সে দুধ নিয়ে তাদের বাচ্চাকে পান করালেন। এখন বাস্তবতার আলোকে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, অভিজাত শ্রেণির এই পরিবার কি দরিদ্র এ মহিলার সাথে শিশুর দুধ-সম্পর্ক কি মেনে নিবেন? অথবা ঠিক বিপরীত যদি হয়, আধুনিক কোন পরিবার দুধ দান করলেন আর দরিদ্র কোন পরিবার তাদের বাচ্চার জন্য দুধ নিলেন। দুই পরিবার কি দুধ সম্পর্ক মেনে নিবেন? দুধ পানকারী সন্তান বড় হলে কি তারা এ সম্পর্কের কথা জানাবেন? কোন আবেগ নয় বাস্তবতার নিরিখে আমাদের দীনদারী ও আমানতদারীর কথা একবার চিন্তা করা উচিত। তবে হ্যাঁ! সবাই এক পথের পথিক না। হয়ত কিছু দীনদার তাকওয়াবান পরিবার আছেন যারা আল্লাহভীতির কারণে এ সম্পর্কের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখবেন।
মিল্ক ব্যাংক এ সকল ধর্মের মহিলারাই দুধ জমা রাখবেন। তাছাড়া তাতে দুই বা ততোধিক মহিলার দুধ একত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের হাসপাতাল সমূহের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা তাদের দায়িত্বে কতটুকু সচেতন সেটা সহজেই অনুমেয়। মিল্ক ব্যাংক এ যারা দায়িত্বরত থাকবেন তারা তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে কতটুকু সচেতন হবেন সেটাও চিন্তা সাপেক্ষ। দুই বা ততোধিক মহিলার দুধ একত্র হওয়ার সম্ভাবনা একদম খাটো নয়। আর মিশ্রিত দুধ পান করলে উভয় মহিলার সাথে রেদ্বাআত সাব্যস্থ হবে। এখন যদি কেহ সন্দেহের মাসআলার উপর মিশ্রিত দুধের মাসআলা কিয়াস করতে চান তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে শরীআতের কোন মাসআলায় সন্দেহ তৈরী করা কি জায়য আছে ?

মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধ পান করালে কয়েকটি হুকুম হবে। যেমন-
১। শিশু বয়সে একজন বাচ্চা যে কোন মহিলার দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। সেটা মহিলার স্তন থেকে সরাসরি দুধ পান করলেও হবে বা বাটি-পেয়ালায় নিয়ে মুখে বা গলায় ঢেলে দিলেও হবে অথবা ড্রপ, সিরিঞ্জ দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে দিলেও হবে। দুধ ব্যাংক থেকে নিয়ে দুধ পান করালেও দুধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে। যেহেতু শিশু বয়সে কারো দুধ পেটে গেলে মাতৃ-সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
২। দুই বা ততোধিক মহিলার মিশ্রত দুধ পান করালে সকলের সাথেই দুধ সম্পর্ক তৈরী হবে। যেহেতু ইসলামী ফিকহের নিয়ম অনুযায়ী কয়েক মহিলার দুধ একত্রে পান করলেও সকলের সাথে দুধ সম্পর্ক তৈরী হবে।
৩। কোন মহিলার দুধ পান করেছে সেটা যদি জানা না থাকে অথবা জানার কোন মাধ্যম না থাকে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হবে না। কিন্তু মিল্ক ব্যাংক এর ক্ষেত্রে এ মাসআলা প্রজোয্য নয়। কেননা সেখানে দুধ দাতা মহিলাকে সনাক্ত করে তার দুধ পৃথক রাখা সম্ভব। তাই যারা সন্দেহের মাসআলার উপর কিয়াস করে দুধ ব্যাংক থেকে দুধ পান করালে হুরমত সাব্যস্থ হবে না বলছেন তাদের যুক্তি সঠিক নয়।

মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে এ সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনার সারকথা হলো-
১। নব-আবিষ্কৃত মিল্ক ব্যাংক এর বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ ইসলামে রয়েছে।
২। এরূপ ব্যাংক থেকে দুধ পান করালে বাস্তবাতার আলোকে হারাম মহিলার সাথে বিবাহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে দুধ-সম্পর্কের মাধ্যমে ইসলামী শরীআতের যে উদ্দেশ্য তথা বংশীয় পবিত্রতা রক্ষা করা, সেটা নষ্ঠ হবে।
৩। বাজারে শিশুর জন্য বিকল্প দুধের ব্যবস্থা আছে। যা শিশুরা জন্মের পর থেকে পরিমিত বয়স পর্যন্ত পান করতে পারে। সেখানে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কোন প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে যারা মাতৃদুগ্ধের কথা বলছেন তাদের যুক্তি আপাত দৃষ্ঠিতে সঠিক নয়। কেননা ফ্রিজে কয়েক দিন রাখার পর যে কোন বস্তু তার মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলে। মায়ের দুধ কয়েক দিন ফ্রিজে রাখার পর তার মৌলিক গুণ নষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আরবিতে এরকম দুধকে ‘আল-লাবান আল মুজাফ্ফাফ’ বলে। সরাসরি মায়ের বুক থেকে দুধ পান করার মতো উপকারিতা এ দুধে নেই। তাছাড়া এ কথা ডাক্তারগণও স্বীকার করেছেন যে, মায়ের বুক থেকে দুধ বের করে অন্য কোন মাধ্যমে শিশুকে খাওয়ানো নিরাপদ নয়, কেননা তাতে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ঠির সম্ভাবনা রয়েছে।
৪। এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাহ্যত দৃষ্ঠিতে মুসলমানগণ হারামে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৫। পৃথিবীর অধিকাংশ ফকীহগণ মিল্ক ব্যাংক পদ্ধতিকে হারাম বলেছেন।

বিকল্প ব্যবস্থা
ইসলামে সকল সমস্যার সুন্দর, বাস্তবমুখী এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান রয়েছে। যে সকল শিশুর জন্য জন্মদাত্রী মা ছাড়া অন্য মহিলার দুধ প্রয়োজন তাদের জন্য দুধ মাতা নিয়োগ করা। দুধমাতা নিয়োগ করে শিশুকে দুধ পান করানো সকল দিক থেকে নিরাপদ। এর জন্য সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি সংস্থা করা যেতে পারে। সংস্থার কর্মীরা দুধ পান করাতে আগ্রহী মহিলাগণের তথ্য সংরক্ষণ করবেন। অনলাইন ভিত্তিক পরিচালিত হবে সংস্থাটি। এতে আগ্রহী সকলেই সহজে যুক্ত হতে পারবেন। অধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পদ্ধতির উপকারি সেবা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
এ পদ্ধতি নিয়ে উপরোক্ত পর্যালোচনা একান্ত ব্যক্তিগত। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক নিয়ে এটি কোন সিদ্ধান্ত নয়। তবে নব-আবিষ্কৃত এ মাসআলা নিয়ে উলামায়ে কিরামের গবেষণামূলক সিদ্ধান্ত সময়ের দাবী। আর যেহেতু বিষয়টি ইসলামী শরীআতের সাথে সম্পর্কিত তাই উলামায়ে কিরামের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে মিল্ক ব্যাংকের সর্বপ্রকার কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা জরুরী। সর্বোপরি, একটি বিষয় হালাল এবং হারাম হওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরী হলে সে বিষয়টি বর্জন করাই উত্তম।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *