রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর

রাসুলে পাক (সা.) এর বাহ্যিক আকৃতির বর্ণনাকে মুহাদ্দিসীনে কিরাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম তিরমিযী (র.) শামাইলে তিরমিযী’র প্রথম অধ্যায়ই এনেছেন- باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ রাসুলে পাক (সা.) এর خلق তথা বাহ্যিক আকৃতি প্রসঙ্গে। কুরআন ও সুন্নাহ যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর নির্ভরশীল সেহেতু রাসূল (সা.) এর প্রতি সর্বোত্তম দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত। কাফির মুশরিকরা রাসূল (সা.) এর প্রতি যেরূপ দৃষ্টিতে তাকাতো সেভাবে না তাকিয়ে ঈমানের নজরে তাকানো উচিত। হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী (র.) শামাইলে তিরমিযীর পূর্বোক্ত বাবের ((باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم ব্যাখ্যায় লিখেছেন, এই বাব হলো সে সকল হাদীস সম্পর্কে যা আল্লাহ তাআলা কর্র্র্র্র্তৃক তদীয় মহান রাসূল ও নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আকৃতি পরিপূর্ণরূপে সৃষ্টির বর্ণনায় এসেছে। এজন্য বলা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমানের পরিপূর্ণতার অংশ হলো এই বিশ্বাস রাখা যে, রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদন মুবারকে বাতিনী সৌন্দর্যের প্রতি নির্দেশক যত জাহিরী সৌন্দর্য একত্রিত হয়েছে, তদ্রুপ সৌন্দর্য অন্য কোনো মানুষের শরীরে একত্রিত হয়নি। এ বিষয়ে ইমাম কুরতুবী (র.) বর্ণনা করেন, কেউ কেউ বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়নি। যদি তা পূর্ণরূপে প্রকাশিত হতো তাহলে সাহাবায়ে কিরাম তাঁর দিকে তাকানো সম্ভব হতো না। আর কাফিরদের অবস্থা তো সেরূপ যেরূপ আল্লাহ তাআলা বলেছেন: تراهم ينظرون اليك وهم لا يبصرون ـ অর্থাৎ আপনি দেখবেন তারা আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করছে অথচ তারা দেখছে না। কোনো কোনো সুফী বলেন, অধিকাংশ মানুষ আল্লাহকে চিনতে পেরেছে কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে চিনতে পারেনি। কেননা মানবীয় পর্দা তাদের দৃষ্টিশক্তিকে ঢেকে দিয়েছে। (মোল্লা আলী কারী (র.) ‘জামউল ওসাইল ফী শরহিশ শামাইল’ পৃষ্ঠা-১০)।
বর্তমানে দেখা যায়, শয়তান যেভাবে আদম (আ.) কে মাটি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য (এহানত) করেছিল ঠিক সেভাবে শয়তানের দোসর কোন কোন আলেম নামধারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাটির নবী বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের কেউ কেউ তাবলীগী ও দেওবন্দের অনুসারী। অথচ তাবলীগী নেসাবের প্রণেতা ও দেওবন্দেীদের অনুসরণীয় বুযুর্গ শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া ছাহেব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূর বলেছেন। তিনি তাঁর শামাইলে তিরমিযীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে শামাইলে তিরমিযীর প্রথম অধ্যায়باب ما جاء فى خلق رسول الله صلى الله عليه وسلم ـ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘ গ্রন্থকার (ইমাম তিরমিযী) এই পরিচ্ছেদে এ সকল হাদীস উল্লেখ করেছেন যা হুযূরে আকদাস (সা.) এর বাহ্যিক আকৃতি বর্ণনায় এসেছে। হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুবারক সৌন্দর্য যথাযথভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নূরে মুজাস্সাম এর আকৃতি বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাসিয়া খাসাইলে নববী। পৃষ্ঠা -১০)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো হযরত যাকারিয়া ছাহেব প্রথমে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘‘নূরে মুজাস্সাম’’ বলেছেন। এরপর বলেছেন, নূরে মুজাস্সাম এর আকৃতি বর্ণনা করা সাধ্যের বাইরে। নি:সন্দেহে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদবের দিকে খেয়াল রেখে তিনি এরূপ বলেছেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আদবের দৃষ্টি রাখা মুমিনের জন্য ফরয।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অন্যান্য মানুষের মতো বলা কিংবা মাটির নবী বলা চরম দেয়াদবী। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সকল দিক থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এ বিষয়ে জাকারিয়া ছাহেব আল্লামা মানাভী (র.) এর উক্তি-উদ্ধৃতি করেছেন। তিনি শামাইলে তিরমিযীর প্রথম পরিচ্ছেদে ৫ম হাদীসের ‘ফায়দা’ অংশে লিখেছেন: মানাভী (র.) লিখেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এই আকীদা পোষণ করা বাধ্যতামূলক যে, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীর মুবারক যে সকল সুন্দর গুণে বিভূষিত অন্য কেউও এ সকল গুণে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমান হতে পারে না। এ বিষয়টি শুধুমাত্র বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং সিয়র হাদীস ও ইতিহাসের কিতাব এ জাতীয় বর্ণনায় পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা’আলা বাতিনী কামালতের সাথে সাথে জাহিরি পূর্ণতাও তাঁকে দান করেছিলেন। (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাশিয়া খাসাইলে নববী পৃষ্ঠা-১৬)باب ما جاء فى تواضع رسول الله (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিনয়) অধ্যায়ে ১৩ নং হাদীসে এসেছে- كان بشرامن البشر يفلى ثوبه ـ অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে একজন মানুষ ছিলেন। তার পোশাকের মধ্যে নিজেই উকুন তালাশ করতেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত জাকারিয়া ছাহেব লিখেছেন, উলামায়ে কিরামের তাহকীক হলো, হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরে উকুন হতো না। কারণ, শরীরের ময়লা হতে উকুনের সৃষ্টি হয় এবং ঘামের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর ছিলেন। সেখানে ময়লা থাকার সুযোগ কোথায়? (শামাইলে তিরমিযী মা’আ উর্দু হাশিয়া খাসাইলে নববী, পৃষ্ঠা -৩৫৪)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো: كان بشرامن البشرـ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হযরত যাকারিয়া ছাহেব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে سرا سرنور (আপাদমস্তক নূর) বলেছেন। তিনি চাইলে এখানে মানুষ বলতে মাটির মানুষ বলতে পারতেন, যেমনটি কিছু সংখ্যাক দেওবন্দী বলে থাকেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং নূর বলেছেন। দেওবন্দীদের অনুসারী দাবীদার যে সকল তথাকথিত ওয়াইজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাটির নবী বলে তারা আসলে কাদের অনুসারী বা ঠিকাদার সেটা খুঁজে দেখা দরকার। তারা বিচ্যুত হয়ে নজদের পানে ছুটছেনাতো?

Comments

comments

About

Check Also

আল-কুরআনের আলোকে একনজরে মহানবি স.-এর পরিচয় ও অধিকার

মহানবি স.-এর গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়-০১আল-কুরআন অনুসারে তিনি ছিলেন একাধারেÑ১. নবি২. রাসুল৩. উম্মি বা অক্ষরজ্ঞান অর্জন না …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *