সালাফি উত্থান; প্রতিরোধের এইতো সময়

গত পবিত্র শবে বরাতের কথা। এক বন্ধু ফেসবুকে শবে বরাতকে তুচ্ছ করে স্ট্যাটাস দিল। তার সাথে এ বিষয়ে অনেক তর্ক করলাম। একটা কথা ভেবে খুব অবাক হলাম, যে ছেলেটি গত বছরও শবে বরাতে সারা রাত ইবাদাত করেছে সে কি না এবার বিপরীত মেরুতে! কারণ কী? কারণ একটাই; এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তথ্য প্রযুক্তির সাথে এখন সে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। ইন্টারনেট আর টিভি চ্যানেলগুলোতে এখন ইসলাম বলতে যে কেবল সালাফিদের ইসলাম প্রচার হচ্ছে একথা বলাই বাহুল্য। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার পক্ষে রয়েছে সুস্পষ্ট যুক্তি। উলামায়ে কেরাম তাদের মতের পক্ষে রচনা করেছেন শত সহস্র জ্ঞানগর্ব কিতাব। এসব কিতাব পড়লে যে কেউই সরল সঠিক পথের খোজ পাবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট বা টিভি চ্যানেলে হক্বপন্থি উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি খুবই নগন্য। এই স্থানটা দখল করে আছে ওয়াহাবি, সালাফিরা। আর বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সবার উপর প্রাধান্য দিচ্ছে প্রযুক্তিকে। ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্যও তারা দ্বারস্থ হচ্ছে প্রযুক্তির। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। তরুণদের মাঝে যারা আগ্রহ নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় তারা হারিয়ে যাচ্ছে সালাফিবাদের ভ্রান্ত ইসলামে। এই সমস্যাটা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারন করেছে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কারণ প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক দিয়ে এরাই সবচেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রায় সব মুসলমানই যেখানে হানাফী মাযহাবের অনুসারী সেখানে বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বুকের উপর হাত বাধে, সূরা ফাতেহার পর উচ্চস্বরে আমিন বলে, রুকোতে যাওয়ার আগে কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মসজিদে গেলেই বিষয়টা সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। এরা অন্য মাযহাবের অনুসরণ করে তা না। তারা এসব শিখেছে তথাকথিত ইসলামী চিন্তবিদদের লেকচার থেকে। যেসব লেকচার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো সাইবার ওয়ার্ল্ড জোড়ে। এমনও মসজিদ আছে যেখানে বাংলায় জুম্মার খুতবা দেওয়া হয়। পবিত্র রমযানে তারাবীর নামায পড়তে গিয়ে প্রতিদিন মুখোমুখি হতে হয় নতুন এক বিপত্তির; আট রাকাত শেষ হওয়ার পর মুসল্লিদের একটা বিশাল অংশ বের হয়ে যায়। ভাবটা এমন যে আর এক রাকাত বেশি পড়লে পাপ হবে। মসজিদে তখন কেমন জানি একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করে। যখন আবার নামায শুরু হয় তখন উচ্চস্বরে আমিন আর কানে আসেনা। বুঝা যায় যারা বেরিয়ে গেছে তাদের বেশির ভাগই মাযহাব অস্বীকারকারী সালাফি। এদেরকে দেখে সরলমনা আরো কিছু লোক বেরিয়ে যায়; তাদের দল ভারী হয়। এই চিন্তাটা তাদের মাথায় একবারও আসেনা যে মসজিদের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য হলেও এমন ভাবে বের হয়ে যাওয়া উচিত নয়। মাথায় আসবেই বা কেমনে? তাদের মাথাতো ওয়াশ হয়ে আছে জাদুকরী লেকচারের মাধ্যমে। এসব লেকচার শুনে যে তারা কেবল ভ্রান্ত পথে যাচ্ছে তা না। এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সঠিক ইসলামের ধারক বাহক আলেমদের তুচ্ছজ্ঞান করা শুরু করেছে। আমার পরিচিত এমন অনেকেই আছে যারা বাংলাদেশের প্রায় সকল আলেমকেই (সালাফী ইমামরা ছাড়া) মুর্খ অথবা ভ্রান্ত মতাবলম্বি মনে করে। এদের সংখ্যা অতি দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো লিখলাম। এদেশের তরুণ সমাজ কত দ্রুত সালাফিদের প্রতি অকৃষ্ট হচ্ছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আসলে সহজেই বুঝা যায়। সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখনই শেষ সময় তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার। এজন্য দরকার সাইবার জগত এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে হক্বপন্থি উলাময়ে কেরামের ব্যাপক উপস্থিতি। তা না হলে সে দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এদেশের প্রশাসনযন্ত্রের দখল নেবে সালাফিরা। হক্বপন্থি আলেমদের নিয়ে নাস্তিক মুরতাদরা এখন যেমন কটাক্ষ করে, তেমনি কটাক্ষ করা শুরু করবে আরেকটি শ্রেণী। নাস্তিকদের কটাক্ষ কেউ গায়ে না মাখলেও সালাফিদের কটাক্ষ হবে ভয়াবহ। কারণ তারাও থাকবে আলেমদেরই পোশাকে, আলেমরা যে ধর্মের অনুসরণ করেন তারাও তো সে ধর্মের অনুসারী।

Comments

comments

About

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *