ভেলেন্টাইনটস ডে বিশ্ব ভালবাসা দিবস : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

ভালবাসা চারটি অক্ষরের সমন্বয়ে খুব ছোট একটি শব্দ, আরবিতে মুহাব্বাত ও ইংরেজিতে লাভ বলে। আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে মানুষের অন্তরে ভালবাসা স্থাপন করে দিয়েছেন। ভালবাসা প্রথমত দুই প্রকার (১) বৈধ ও পবিত্র (২) অবৈধ ও অপবিত্র।
বৈধ ও পবিত্র ভালবাসা : পবিত্র ভালবাসা বলতে আমরা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা, সন্তান ও পিতা-মাতার মধ্যে ভালবাসা,স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সহ সমস্ত বৈধ পন্থার ভালবাসাকেই বুঝি।
অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা : বিবাহের পূর্বে নারি পুরুষরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকেই অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা হিসেবে গণ্য করা হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি করে অন্য সব মাখলুকাতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এমনকি নবীদের সর্দার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত বানিয়েছেন। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত সর্ব প্রথম নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা রাব্বুল আলামীনকে ভালবাসা এবং তার হাবীব রাসুলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসা।
তাইতো একজন বিশ্বাসী আল্লাহকে ভালবাসবে সবচেয়ে বেশি; কোরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে:
অর্থ : আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (২:১৬৫)।
একজন মু’মীন আল্লাহকে ভালবাসার সাথে সাথে আল্লাহর প্রিয়তম হাবিবকেও ভালবাসবে! কোরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে;
অর্থ: নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ। (৩৩:৬)।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ভালবাসা : ‘ভালবাসা বা মুহাব্বাত’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালবাসেন।’ (২:১৯৫)।
কারো সাথে মহব্বত-ভালোবাসা ও শত্রুতা পোষণ কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই রাখতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে।
(ক) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বাধিক মহব্বত করবে।
(খ) কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে মহব্বত করতে হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করবে। অন্য কোন উদ্দেশ্যে করবে না।
(গ) কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে মন্দ জানতে হলে শুধুমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তেই মন্দ জানবে। (মুসনাদে আহমাদ)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পরকে ভালবাসে, কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে রহমতের ছায়ায় স্থান দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’ (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৫)।
ভেলেন্টাইনটস ডে বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস: এক অবৈধ, অপবিত্র, নোংরা ও জঘন্য দিবসের নাম ভেলেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস, দিবসটি মুসলমানের কোন দিবস নয়। ইতিহাস গবেষকদের লিখনী থেকে পাওয়া যায় পৌত্তলিক ও মূর্তি পূজারীদের মাধ্যমে এ দিবসটির জন্ম চতুর্থ শতকে! ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে এর জন্ম হলেও ‘ঠধষবহঃরহব উধু’ নামে এর চর্চা শুরু হয় ১৭৩৭ সালে। ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার করার পর সেন্ট ভ্যালেইটাইনসের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। রাজা তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে ১৪ ফেব্র“য়ারি মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই ধর্মযাজকের মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিও ১ম ১৪ ফেব্র“য়ারিকে ‘সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। এই দিবসটি প্রথমদিকে যদিও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুভূতি ও গাম্ভীর্য নিয়ে পালন করা হতো কিন্তু পরবর্তীতে পশ্চিমা নগ্নতার প্রভাবে এ দিবসটি নারী-পুরুষদের অবৈধ মিলনমেলার এক অনন্য অনুষ্ঠানে পরিণত হয়ে উঠে!


পশ্চিমা কালচারে নগ্নতা অশ্লীলতা তথা নারি পুরুষের অবাধ মেলামেশা, মদ পান সহ সব ধরনের অপকর্ম খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, কিন্তু ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী বা মুসলিম প্রধান দেশে এটা শুধু অস্বাভাবিকই নয় বরং একটি জঘন্য পাপ এবং গর্হিত অপরাধ। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। পশ্চিমা কালচারে আসক্ত তথাকথিত কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয় অপরিণামদর্শী হলুদ মিডিয়া এর ব্যাপক প্রচারণা করে। আর যায় কোথায়! পাপের এই মোক্ষম সুযোগ লুফে নেয় বাংলার অসভ্য তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন বৈধ ভালবাসার পরিবর্তে বাসা বাঁধে অপবিত্র অবৈধ ভালবাসা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের সমাজের হর্তাকর্তারা হয়তো জানেননা এর পরিণতি কত ভয়াবহ! মানব জাতির চিরশত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। সে শুধু জাহান্নামের পথেই টেনে হিঁচড়ে নেবে না বরং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করে ছাড়বে।
বড় আফসোস নিয়ে বলতে হয়, মানুষ যখন ঠধষবহঃরহব উধু বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন কি পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিল? অবশ্যই ছিলনা! আজ পৃথিবীতে পবিত্র ভালবাসার বড়ই অভাব। তাই একটি নির্দিষ্ট দিবস পালন করে ভালবাসা প্রকাশ করতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো ভালবাসা নামক পুতঃপবিত্র বস্তু থাকতে পারে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে আল্লাহর গজবের কিঞ্চিত আলামত আমরা দেখতে পাই! এই জঘন্য পাপের পরিণতিই হলো মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠে যাওয়া। আর তাইতো পেটের সন্তান অবাধে মা বাবাকে খুন করছে, ভাই ভাইকে হত্যা করছে! আরো কতো কি!
ঠধষবহঃরহব উধু বা বিশ্ব ভালবাসা দিবসের ইতিহাস ও এর পরিণতি জানার পর কোন মুসলিম যুবক যুবতী এ দিবসটি পালন করতে পারে না। কারণ এ দিবসের সাথে যিনা নামক জঘন্য পাপ, কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা জড়িত। এ দিবসের প্রচলন করে পৌত্তলিকরা, মুশরিকরা। যে দিবসের সাথে ঈমান বিরোধী এতগুলো উপকরণ যুক্ত সে দিবস একজন মুসলিম কিভাবে পালন করতে পারে?
একজন মুমিন মুসলমান যদি সত্যিই তার সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসে তাহলে তাঁকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে এবং মেনে চলতে হবে তার মালিকের সে ঘোষণা যা তিনি প্রদান করেছেন স্বীয় কালামে পাকে, “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *