মহান আল্লাহ তায়ালার বৈচিত্রময় সৃষ্টির এক অনুপম নির্দশন হল ঋতু। আর বৈচিত্র্যময় এই ষড় ঋতুর অপার সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম ও বরকতময় একটি ঋতু হল শীত। ঋতু চক্রের আবর্তে খেজুরের রস, পিঠালি গুড়, ক্রোড়ভর্তি খই, খড়-পাতার আগুন পোহানো, রোদে ফেলা ধান হতে মোরগ, পাখি তাড়ানো, কোয়াশার চাঁদরে ঢাকা ভোর ও সন্ধ্যা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় এই অপূর্ব শীতকাল।
শীতের সকালে আবির্ভাব হয় কুয়াশাচ্ছন্ন এক মনোহর রূপ। সুবহে সাদিকের পর মুয়াজ্জিনের আযান মিনার থেকে মিনারে ভেসে বেড়ায়। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে মহান খোদার মহত্বের সুর। মুসলমানরা তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে ছুটে যান মসজিদে। কুয়াশার বুক ভেদ করে ফুটে উঠে আলোক রশ্মি। ঘাসের উপর বসে শিশিরের মেলা। কুয়াশাভেজা সবুজ ঘাসের ডগায় সূর্যের সোনালি কিরণ চিকচিক করে।
হাড় কাঁপানো হিমবায় আর ভারী কোয়াশার মধ্য দিয়ে কোরআন বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছোট ছোট শিশুরা ছুটে চলে মকতবে। প্রকৃতিকে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে ফুটে অসংখ্য জাতের ফুল যা প্রকৃতিকে এনে দেয় নতুন এক প্রাণের স্পন্দন। শীতে দুপুরের রোদ হয় খুব প্রখর। এই প্রখর রোদে মাঠে যারা ধান কাটেন বা রাস্তার পাশে বসে থাকা রাখাল ছেলেটি কিংবা মায়ের কথায় ধান পাহারায় মাঠের কোনে বসে থাকা ঐ ছেলেটি কিছুটা বিরক্তিবোধ করলেও গোসলের পর এই প্রখর রোদটাই সবার প্রিয় হয়ে উঠে- ঘড়ির দিকে না তাকালে শীতকালের সময় বুঝাই যায় না বেলা কতটুকু হলো-অজান্তে বেলা পার হয়ে বিকেল চলে আসে-প্রখর রোদ ধীরে ধীরে মিষ্টি হতে থাকে। মাঠে মাঠে শুরু হতে থাকে শিশুদের সমাগম। বিভিন্ন মাঠে চলে ভিন্ন ভিন্ন খেলা। মাঝে মাঝে বুড়োগণ মাঠের কোনে খড় জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নেন আর বিভিন্ন ধরনের গল্পে মেতে উঠেন। ধীরে ধীরে আবার কুয়াশা তার চাদর দিয়ে ঢেকে নেয় পুরো এলাকা। গোধূলিলগ্নে রাখাল গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে। গরুর পিছনে ছোট ছোট শিশুরা দল বেঁধে দৌড়াদৌড়ি করে।
শীতের সন্ধ্যাটি হয় বড় মধুর। শীতকাল ব্যস্ততায় ঘেরা মানুষের জীবনে নিয়ে আসে একটুখানি অবসরের বার্তা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকে শীতকালীন ছুটি। তাই পরিবারের সবাই মিলেমিশে আনন্দে মেতে উঠার ঘটে মোক্ষম সুযোগ। আর তখন যদি খেজুরের রসের সাথে গরম পিঠা বা রং চায়ের সাথে থালাভর্তি খই থাকে তাহলে জমে উঠে বেশ। শীতকাল শুধু একটা শীতের ঋতু নয় বরং উপভোগের সময়। শীতকাল মুমিনের জন্য দুনিয়াবি দিক থেকে যেমন উপভোগ্য তেমন দ্বীনি দিক থেকেও উপভোগ্য। আর তাইতো রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘শীতকাল মুমিনের জন্য বসন্ত স্বরূপ।’ (মুসনাদে আহমদ-১১৫৬৫)। শীতকাল খোদাপ্রেমিকদের জন্য তাদের মাশুকের সাথে প্রেম বিনিময় করার এক উৎকৃষ্ট মৌসুম। শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিনরা রাত্রীকালীন ইবাদত করতে পারেন। আর দিন ছোট হওয়াতে সহজে রোজাও রাখতে পারেন। যেমন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হয়রত ওমর (রা.) বলেন- শীত ইবাদতকারীদের জন্য গনিমত স্বরূপ। আবার হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন- শীতকালীন গনিমত হলো রোজা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) বলেন- হে শীত তোমাকে স্বাগতম। শীতকালে বরকত নাজিল হয়। শীতকালে রাত দীর্ঘ হয় তাই ইবাদত করার সুযোগ মিলে। এছাড়াও শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা আমাদেরকে জাহান্নামের শীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ফলে বন্দারা আল্লাহর কাছে পানাহ চায় আর আল্লাহ তার বান্দাহদেরকে জাহান্নামের কষ্টদায়ক শীতের শাস্তি থেকে মুক্তি দান করেন। যেমন, রাসুল (সা.) বলেন- যদি কোন বান্দা তীব্র ঠান্ডার সময় বলে- ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আজকের দিনটি কতই না শীতল। হে আল্লাহ আপনি আমাকে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি দান করুন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন- এক বান্দাহ আমার নিকট তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি তাকে মুক্তি দিলাম।