তিনি প্রিয় আমরা প্রেমিক

সৃষ্টিজগতের সর্বোত্তম সৃষ্টি, মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, বিশ্বনবী, সারা বিশ্বের বিস্ময় রহমতুল্লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালিন, নূরে মুজাসসাম, সিরাজাম মুনীরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের সকলের চেয়ে প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব, তিনিই আমাদের ঈমান, তিনিই শাফিউল মুজনিবীন, তিনিই কাওছারের মালিক, তিনিই আল্লাহর মাহবুব বান্দা ও শ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা আমাদের ঈমানের সর্বোচ্চ দাবি। তাঁর প্রতি ভালোবাসাই আমাদের ঈমানের পূর্ণতার মাপকাঠি। এ ব্যাপারে হজরত আনাস (রাদ্বি.) বর্ণিত হাদিসে নববী হলো-আন্না রাসূলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বালা, লা-ইয়ু’মিনু আহাদুকুম হাত্তা আকুনা আহাব্বা ইলাইহি মিন ওয়ালিদিহী ওয়া-ওয়ালিদিহী ওয়ান্ না-সী আজমাঈন। অর্থ-নিঃসন্দেহে রাসূলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা এবং সকল মানুষ হতে অধিক প্রিয় হব।
বিশ্বনবীর প্রতি যার যতবেশি প্রেম, তার ঈমান ততবেশি মজবুত, তার ঈমানের ওজন আর সাধারণ মুমিনের ঈমানের ওজনের মধ্যে প্রভেদ বিদ্যমান। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বি.)’র নবী প্রেম ছিল সকলের চেয়ে বেশি, এজন্য তাঁর ঈমানের ওজন সকলের চেয়ে ভারী। নবী প্রেমের কারণেই হজরত আবু বকর (রাদ্বি.)’ ‘আফদ্বালুন নাসি বা’দাল আম্বিয়া’ উপাধিতে ভুষিত। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বি.)’র নবীপ্রেমের এক জ্বলন্ত উদাহরণ নিম্নরূপ-

হিজরতের রাতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হজরত আবু বকর (রাদ্বি.) ঘর থেকে বের হয়ে রাত্রিবেলায়ই উভয়ে ছত্তর গুহার দিকে রওয়ানা হন। ‘সিরাতে মুস্তাফা’ গ্রন্থের বর্ণনানুযায়ী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছত্তর গুহার প্রতি রওয়ানা হলে তাঁর প্রতি নিবেদিত প্রাণ হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বি.) খুবই ছটফট করছিলেন। কখনো তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দিয়ে চলতেন, কখনো পেছনে, কখনো ডানে আবার কখনো বামে চলতেন। পরিশেষে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, হে আবু বকর! কি ব্যাপার কখনো সামনে চলছ, কখনো পেছন দিয়ে। হজরত আবু বকর (রাদ্বি.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার যখন এ ধারণা হয় যে, পেছনের দিক দিয়ে কেউ আপনার তালাশে আসছে, তখন আমি পেছন দিয়ে চলি; আর যখন এ ধারণা হয় যে, সামনে কেউ ওৎপেতে বসে আছে, তখন আমি সামনে চলি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, হে আবু বকর (রাদ্বি.)! এতে কি তোমার এ উদ্দেশ্য যে, তুমি নিহত হবে আর আমি বেঁচে যাব? হজরত আবু বকর (রাদ্বি.) বললেন, হ্যাঁ, ইয়ারাসূলাল্লাহ! ঐ পবিত্র সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন। আমি এটাই চাচ্ছি যে, আমি নিহত হই আর আপনি বেঁচে যান।
উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে আমরা নবী প্রেমিক হওয়ার জ্বলন্ত নমুনা পেয়ে গেলাম। আমাদেরকে শুধু মুখে নয়, কাজে-কর্মে বাস্তবে নবী প্রেমিক হতে হবে। তাহলেই আমরা বলতে পারব তিনি প্রিয়, আমরা প্রেমিক।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রিয়তম মহান আদর্র্শ, তাই তাঁর বরকতময় জীবন, কথা, কার্যাবলির অনুসরণ অনুকরণ আমাদের উপর অপরিহার্য। আলখুতবাতুল ইয়াকুবিয়ায় উল্লেখ আছে, আল্ইত্বাআতু দাল্লাতুন আলাল হুববী অর্থাৎ আনুগত্য মহব্বত আছে বলে প্রমাণ করে। তাই মহব্বতের জন্য আনুগত্য অপরিহার্য। কবির ভাষায়-তা’সির রাসূলা ওয়া আন্তা তায্আমু হুব্বাহু+হাজা লাউম্রী ফিল ফিয়ালু বাদিউ, লাউ কানা হুব্বুকা সাদিকান্ লাআতা’ তাহু + ইন্নাল মুহিব্বা লিমান ইউহিব্বু মুত্বিউ। অর্থাৎ-তুমি রাসূলের নাফরমানীও করছ আবার তাঁর মহব্বতেরও দাবি করছ। আমি শপথ করে বলছি তোমার এ পন্থা খুবই আশ্চর্যকর। তোমার মহব্বত যদি সত্য হত তাহলে অবশ্যই তুমি তাঁর (রাসূলে) অনুসরণ করতে। নিঃসন্দেহে প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের অনুগত হয়ে থাকে।

Comments

comments

About

Check Also

আল-কুরআনের আলোকে একনজরে মহানবি স.-এর পরিচয় ও অধিকার

মহানবি স.-এর গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়-০১আল-কুরআন অনুসারে তিনি ছিলেন একাধারেÑ১. নবি২. রাসুল৩. উম্মি বা অক্ষরজ্ঞান অর্জন না …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *