কর্মের ফল

কোন কোন ক্ষেত্রে অঘটনও ঘটিযে় দেয়। তাকে একরূপ গরুর দালাল বলা যেতে পারে। ভালো দালালী পেলে দালালরা বাঁঝ গরু দুধের গাই হিসেবে চালিযে় দেয়। ছেরাফত আলীও উপযুক্ত
সেলামী পেলে অচল মেযে় সচল করে দিতে সক্ষম। তার কথা আল্লাহর দুনিয়ায় সকল মাইয়ারই সাধ-আহলাদ থাকে। কালা-কুচ্ছিত সকলেরই বিয়া দরকার। অচল চালাইতে পারলে জেয়াদা ফায়দা।
জেন্নাত আলী মুন্সীর বাড়ীতে একদিন ছেরাফত আলীর শুভ পদার্পণ ঘটে। এসেই সালামবাদ বলেন ; মুন্সী চাচা, ছাওয়ালতো চাকরী পাইলো।
এই বার বিয়া করাইবেন না?
জেন্নাত আলী মুন্সী বলেন : বিযে়তো করাইতে হবে। সবেমাত্র চাকুরী হলো। যাক না আরো কিছুকাল।
ছেরাফত আলী বলেন : দেরী করন ঠিক হইবে না, চাচা, আইজ কাইলগার পোলাপানের মতিগতি ভালো না।
জেন্নাত আলী মুন্সী বলেন : আমার ছেলে সে রকম না, মিয়া। তবে ভালো মেযে় পেলে বিযে় অবশ্য করানো যায়।
ছেরাফত আলী বলেন : শুভ কাজে বিলম্ব করতেই না, চাচা। পোলাপান যতো ভালোই অউক, আইজ কাইল প্রেমের
বড় ঠ্যালা। মাইয়া পোলাগো কাইত কইরা ফ্যালায়। শেষে ঘাট থুইয়া অঘাটে পড়লে মুছিবত।
জেন্নাত আলী মুন্সী বলেন : ভালো জাত বংশের মেযে়র খোঁজ থাকলে বলো।
ছেরাফত আলী বলেন : বহুৎ বহুৎ মাইয়ার খোঁজ আছে আমার পকেডে। মেট্রিক, আই.এ, বি.এ. যা চাযে়ন। এক্কেবারে ফাস্ট ক্লাস মাইয়া দিতে পারুম।
জেন্নাত আলী মুন্সী বলেনঃ আমার ছেলে সেকেন্ড ক্লাস। বাপু, আমার ফাস্ট ক্লাশের দরকার নাই। তবে পর্দা পুসিদা ওয়ালা বাড়ীর মাইয়া হওয়া চাই। হাদিসে আছে-‘আদ দাইউছু লাইয়াদ খুলুল জান্নাত।’বেপর্দার মাইয়া দাইউছ। ছাপ দোজখী হবে। তাদের জান্নাতে প্রবেশের অধিকার নেই।
ছেরাফত আলী বললেন : তয় চাচা, কোনো মুন্সী মৌলভীর মাইয়া দরকার। আপনার বি.এ. পাশ পোলায় মাইন্যা নেবে? আইজ কাইল পোলারা চায় অপটুডেট মাইয়া। রাস্তা ঘাটে হাইট্যা বেড়ায় কতো ডানাকাটাপরী। দেইখ্যা দেইখ্যা পোলাপানের চৌকইগেছে খারাপ অইয়া।
জেন্নাত আলী বলেন : মিছা বলোনি মিয়া। ভুল হযে় গেছে ছেলে ইংরেজি লাইনে পডি়যে়। আবার যদি ইংরেজি পড়া বউ ঘরে আনি, তবে গুষ্ঠিতে কবর জেয়ারতের লোকও মিলবে না। আওলাদ-বুনিয়াদ দিযে় আখেরাতেও কিছু পেতে চাই।
ছেরাফত আলী বলেন : একটা আমার খোঁজে আছে, চাচা। হাসানাবাদ গেরামের তোফেল ফরাজীর মাইয়া। বাড়ীতে পর্দা-পুসিদা আছে। তয় ফরাজী তেমন টাকা ওয়ালা লোক না। তয় খুব মুছল্লী মানুষ।
জেন্নাত আলী মুন্সী বললেন : এইটা আগে বলোনি কেন? আমারতো অই রকমই দরকার।
ছেরাফত আলী বলেন : তয় তারিখ দেন, কবে মেযে় দেখতে যাইবেন। আমি ফরাজীরে গিয়া খবর কই।
জেন্নাত আলী মুন্সী বললেন : ঠিক আছে আগামী জুমাবাদ যেতে পারি তুমি এসে আমাকে নিযে় যেযে়া।
ছেরাফত আলী বললেন : তইলে অহন আমি যাই। আপনে তৈয়্যার থাইক্যেন।
ছেরাফতের এই সম্বন্ধ করিযে় দিযে় মেযে় পক্ষ থেকে বেশী টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্য কোন টাকা ওয়ালা লোকের অচল মেযে় চালাতে পারলে রোজগার বেশী হতো। কিন্তু জেন্নাত আলী মুন্সীকে পাঠানো গেলনা। তাই তাকে অল্প পাওনার সম্ভাবনায় খুশি থাকতে হলো।
পাঁচ
জেন্নাত আলী মুন্সী হাসানাবাদ তোফেল ফরাজীর বাড়ীতে গেলেন মেযে় দেখতে। দেখলেন। শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালোই। খুব ফরসা না হলেও মোটামোটি সাদা বলতে হবে। কুরআন তেলাওয়াত করে শোনালো। সুরেলা কণ্ঠ। ছহি উচ্চারণ। মুন্সী সাহেব তেলাওয়াত শুনে খুশি হলেন। জেন্নাত আলী মুন্সী ফরাজীকে বললেন : আপনার মেযে় দেখে, তার কেরাত শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে। আপনি সম্বন্ধ করলে আমি রাজি আছি।
তোফেল ফরাজী বললেন : আমি গরীব মানুষ। যদি দয়া করে আমার মেযে়কে ছেলের বউ করেন আমি রাজী, খুশি আছি। তবে আপনার ছেলে গ্রাজুযে়ট এবং সরকারী চাকুরে। যদি দাবী-দাওয়া বেশি করেন, তবে আমার সাধ্যে কুলাবেনা।
জেন্নাত আলী মুন্সী বললেন : আমি ছেলের জন্য কোন যৌতুক চাইব না। আপনি খুশি হযে় মেযে় জামাইকে যা দিতে পারবেন, তাতেই হবে। আর, আমিও সাধ্যমত বউ সাজিযে় নেবো। এ বিষযে় আপনি কি বলেন?
তোফেল ফরাজী বললেন : আপনার যেমন কোনো দাবী নেই, আমারও মেযে়র জন্য কোন দাবী নেই। যা দেবেন তাতেই হবে। তবে আমার মেযে়র বিদ্যা কম। ছহিভাবে কোরআন পড়া শিখিযে়ছি। নামাজ- রোজার মাছলাও শিখেছে মোটমোটি।
জেন্নাত আলী মুন্সী বলেনঃ আমিও তো তাই চাই। পাশ করা বউ আমার দরকার নাই। আমার ছেলে বি.এ. পাশ করলেও রীতিমতো নামাজ- রোজায় আছে। আমার ঘরে নামাজী বউই দরকার। ছেলে ঈদের ছুটিতে বাড়ী আসবে। তখনই আল্লাহর মর্জি হলে বিযে় সম্পন্ন করে ফেলব।
ঈদের ছুটিতে শাহেদ আলী বাড়ীতে এলে তাকে বিযে়র কথা বলা হলো। মেযে়র মাত্র প্রাইমারী পর্যন্ত বিদ্যা শুনে তার মনঃপূত হলোনা। তার ইচ্ছে ছিল বউ অন্তত : মেট্রিক পাশ হোক। বাপের সিদ্ধান্তের উপর কথা বলা বেয়াদবী ভেবে তাকে নিরব থাকতে হলো।
যথাসমযে় হাসনাবাদের তোফেল ফরাজীর মেযে় নূরজাহানের বিযে়র কাজ সমাধা হযে় গেল শাহেদ আলীর সংগে। বউযে়র কোয়ালিফিকেশন না থাকলেও কোয়ালিটি অপছন্দ হয়নি শাহেদ আলীর। নম্র, ভদ্র, লাজুক মেযে়। নামাজ পডে় রীতিমতো। কথাবার্তায় বেশ পটু ও আবার স্বল্পভাষীও। মনে হলো নূরজাহান খুব বুদ্ধিমতীও। বিযে়র পর ৪/৫ দিনের বেশি বাড়ীতে থাকা সম্ভবপর হয়নি শাহেদ আলীর। কেননা যথা সমযে় অফিসে হাজিরা দিতে হবে। অতঃপর প্রতি সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়ীতে আসতো নিয়মিত। এভাবে কাটলো মাস ছযে়ক।
বউযে়র সঙ্গে শাহেদ আলীর বেশ ভাব জমে গেল। তার ইচ্ছা হলো বউকে সংগে নিযে় যায় চাকুরী স্থলে। একদিন
নূরজাহানকে বললেন : তোমাকে সঙ্গে নিযে় যেতে চাই, কি বলো?
: আমি যাবো না। … নূরজাহানের সংক্ষিপ্ত উত্তর।
: কেন যাবে না? তোমার কি আমার কাছে থাকতে ইচ্ছে হয়না।
: ইচ্ছে হলেই তো সব কিছু সম্ভব নয়। বুডে়া শ্বশুর-শাশুড়ী ফেলে তোমার সংগে আমি যেতে পারব না।
: একা থাকতে আমার যে ভালো লাগে না।
: একা থাকতে আমারও কি ভালো লাগে?
: তাহলে যাবে না কেন?
: বললাম তো শ্বশুর-শাশুড়ী বুডে়া বয়সে একটু খেদমত চান। তাদের আশা পূরণ করলে আল্লাহ খুশি হন। তাতে আমাদেরও ভালই হবে। তুমিতো প্রত্যেক সপ্তাহেই বাড়ীতে আসো আর কী চাই?
: আর কী চাই তুমি বুঝতে পার না? তুমি হাবা নাকি? বয়সাকলে বউকে সব সময় কাছে রাখতে ইচ্ছে করে যে।
: আরে, একটু সবুর করো। সবুরে মেওয়া ফলে।
: মেওয়া ফলতে ফলতে বুডে়া হযে় যাব যে।
: বলো তাহলে আব্বা-আম্মাকে। তারা হুকুম দিলে আমার কি আর যেতে অসাধ? আমারও সাধ-আহলাদের ইচ্ছা আছে। তবে মুরুব্বীদের রাজী-খুশি না করে কিছু করতে চাইন।
ছয়
আমাদের দেশে ঘুষের সুবিধা জনেক উল্লেখযোগ্য যে কযে়কটি স্থান রযে়ছে এর মধ্যে সাবরেজিস্ট্রী অফিস একটি শীর্ষস্থানীয় কিনা বলতে পারবো না, তবে একেবারে কম যায়না। জমিজমা ক্রয়-বিক্রযে়র মধ্যে বৈধ-অবৈধ কারবার রযে়ছেই। অফিসে টাকা ঢাললে নয়কে ছয় করা বিচিত্র কিছু নয়। কারো মরিয়াও জমি বিক্রি না করিয়া উপায় থাকে না। অফিসে টাকা ছড়াতে পারলে মৃত ব্যক্তির জমিও বিক্রি হযে় যায়। এমনকি একই জমি কযে়কবার বিক্রিতেও বাঁধা হয় না। এমন জায়গায় আবেদ আলী চাকুরী করেন। তিনি ঘুষ খান না। প্রথম দিকে তা ছিল সবার কাছে অবিশ্বাস্য। কতা উঠতো- যে ভাত খায় সে ঘুষ খাবে না, তা কি একটা কথা হলো? বাস্তবে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, সত্যিই আবেদ আলী সাবরেজিস্ট্রার ঘুষ নেন না। শেষে ফল এই দাঁড়ালো যে, তিনি জনপ্রিয়তা হারালেন। অফিসের কেরানী থেকে শুরু করে মুহুরী, এলাকার মাতব্বর, টাউট-বাটপাড়, জমিবিক্রির দালাল ইত্যাদি সর্ব মহলের বিরাগভাজন হলেন তিনি তাই একই অফিসে অধিক কাল তার থাকা সম্ভব হয় না। বদলীর পর বদলী চলতেই থাকে। এমনি ভাবে দু’বছর উত্তীর্ণ হলো। তার বদলী হযে় গেল নিজ জেলার বাইরে। এবার আর প্রতি সপ্তাহে বাড়ীতে যাওয়া সম্ভবপর হয় না। তার শাপেবর হযে় গেল। বাবা মাই বললেন- ‘আবেদ আলী এখন বউকে সঙ্গে নিযে় যা। আবেদ আলী চাকরী স্থলে বাসা ভাড়া নিলেন। সস্ত্রীক থাকেন। তার মানসিক প্রসন্নতা বাড়লো। কিন্তু ঘুষ বন্ধের চেষ্টা সফল হল না। তিনি ঘুষ না নিলেও কেরানীরা ঘুষ নেবেই। তাতে বদনামটা তারও ঘাডে় গিযে় চাপে। কিন্তু কী করবেন তিনি? কেরানীরা নিষেধ মানে না। বরং নিষেধ করলে ঘুষের অংক তারা বাডি়যে় দেয়। একটা গল্প তার মনে পডে় গেল। গল্পটি এই : এক ম্যাজিস্ট্রেট ঘুষ নিতেন না। তার পেশকার প্রতিটি মামলায় দাখিলী ফি বাবদে আট আনা ঘুষ নিতেন। তিনি জানতে পেরে একটা সাইনবোর্ড টাংগালেন এজলাসে। তাতে লিখা ছিল। আট আনা ঘুষ চলবে না। পেশকারের তাতে সুবিধা বেডে় গেল। যে কেউ মোকদম্মার আবেদন দাখিল করতে এলে তিনি সাইনবোর্ডটি দেখিযে় বলেন- সাহেবের হুকুম আট আনায় এখন আর চলবে না। দু’টাকাই দিতে হবে। আবিদ আলীর অফিসে তদবস্থা। শেষ পর্যন্ত তাকে হাদিসের এই কথার উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকলো না : ‘ তোমার সম্মুখে অন্যায় সংঘটিত হতে থাকলে হস্ত দ্বারা বাঁধা দাও। তা সম্ভব না হলে মুখে প্রতিবাদ কর। তাও সম্ভব না হলে মনে মনে ঘৃণা পোষণ কর।’ আবেদ আলীকে অবশেষে শেষের পথটিই বেছে নিতে হলো।
কথা হচ্ছিল শাহেদ আলী এবং তার স্ত্রী নূরজাহানের মধ্যে।
শাহেদ আলী বললেন : এ যুগে সৎ জীবন যাপন বড় মুশকিল।
নূর জাহান বললেন : মুশকিলের আসান আছে। মুশকিল দেখে ভয় করলে চলবে না।
শাহেদ আলী বললেন : ভযে়র কথা নয়। আমি ঘুষ খাই না। কিন্তু আমার অফিসেও ঘুষ চলে। বন্ধ করতেতো পারছি না। আমি ঘুষ না খেলেও বদনামটা আমারও হয়।
নূর জাহান বললেন : বদনামে পাপ নেই। পাপ হয় বদ কাজে। আখেরাতে সৎ কাজের পুরস্কার আছে। নবী-রসুলদেরও মুসিবত ছিল। শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)- এর মুসিবত কম ছিল না। ভযে়র কোনো কারণ নেই।
শাহেদ আলী বললেন : এই যে আমার ঘন ঘন বদলী, কেন হয় জানো? ঘুষ খাই না বলে আমার অফিস স্টাফ আমার উপর অসন্তোষ্ট। এমনকি পাবলিকও খুশি নয়। প্রভাবশালী পাবলিকেরা আমাকে সাপোর্টকরে না। বরং তারাও স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ না পাওয়ার কারণে আমার উপর ফাঁসীর দডি়র মতো বদলীর পরোয়ানা ঝুলেই থাকে।
নূরজাহান বলেন : তাতে কি? চাকুরীতো ঠিকই আছে। লোকসান কোথায়?
শাহেদ আলী বলেন : লোকসানও খানিকটা আছে। আমার প্রমোশন হয় না।
নূরজাহান বলেন : কোরআন পাকের সুরা দ্বোহায় আছে,‘নিশ্চয়ই তোমার জন্য এ কাল অপেক্ষা পরকাল উত্তম’। সুতরাং দুঃখ করার কোনো কারণ নেই। পরকালে তুমি প্রমোশন নিশ্চয় পাবে।
সাত
শাহেদ আলী মুছল্লী মোত্তাকী পরিবারের সন্তান। তাই ইংরেজি শিক্ষিত এবং আধুনিক পরিবেশে তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি। তার চাকুরী ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘুষ খাবার অবকাশ থাকলেও তিনি আদৌ সে পথে যাননি। আল্লাহ এবং রাসুলাল্লাহ (সাঃ)- এর বিধি-বিধান কখনও লঙ্ঘন করেননি। তার স্ত্রী নূরজাহানও অনুরূপ পরিবারে জন্মেছিলেন। তিনি কখনও স্বামীকে অবৈধ কর্মে প্ররোচিত করেন নি। শোনায় চাকুরীজীবীদের আধুনিকা স্ত্রীরা বিলাস ব্যাসনে এমনই আসক্ত হযে় পডে়ন যে, স্বামীদের কাছে থাকে তাদের অফুরন্ত চাহিদা। সেই চাহিদা মেটাবার প্রযে়াজনেও স্বামীদেরকে অবৈধ উপার্জনের পথে যেতে হয়। কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধবকে বলেন- আল্ট্রা মডার্ণ আপটুডেট মেযে় বিযে় করে মহামুসিবতে আছি, তাদের নিত্য নতুন শাড়ী-গয়না, প্রসাধনী পার্টি-সিনেমার রসদ যোগাতে যোগাতে কম্ম সারা। ঘুষ খাওয়া জানি খারাপ, জানি। কিন্তু অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিযে় চরতে হযে়, ঘুষ না খেযে় গত্যন্তর কোথায়?
নূরজাহানের শাড়ী গয়নার দাবী নেই। নাটক-সিনেমা-পার্টি-ক্লাবের বিলাসিতা নেই। যেটুকু একান্ত প্রযে়াজন, সেটুকু পেলেই তিনি খুশি থাকেন। বাসায় তার কাজের লোকের প্রযে়াজন হয় না। নিজের হাতে রান্না-বান্না করেন। তিনি অল্পতেই তুষ্ট। হিসেবী জীবন যাপনে তিনি অভ্যস্থ। আয় বুঝে ব্যযে়র পক্ষপাতী তিনি। তিনি কোরআন পাকের বাণীতে বিশ্বাসী। কুরআন পাকে বলা হযে়ছে; ‘অযথা খরচকারী শয়তানের ভাই’। তাই তার অপব্যয় নেই। অভাবও তার সংসারের ত্রিসীমানাতেও ডোকতে পারেনা। যথাসমযে় শাহেদ আলীর চাকুরীর মেয়াদ শেষ হলো। তিনি রিটায়্যার করলেন। হালাল উপার্জনের দ্বারা সৎ জীবন যাপন করেছেন। ছেলে- মেযে়দের শিক্ষা-দীক্ষা, বিযে়-সাদী যথারীতি সম্পন্ন করতে পেরেছেন আল্লাহর মর্জি। তবে শহরে বাড়ী-গাডি় কিছুই হয়নি। ব্যাংক ব্যালেন্সও হয়নি তেমন। তবে রিটায়্যারের পর এককালীন গ্রাচুযি়টীর টাকা পেযে়ছেন বেশ কিছু।
তিনি স্ত্রীকে বললেন : এবার আমি হজ্বে যেতে চাই। তোমার কি অভিমত?
নূরজাহান বললেন : আমার আর অভিমত কি? টাকা থাকলে হজ্ব ফরজ হযে় যায়। বাবা-মা বেঁচে থাকলে তাদের সম্মতির দরকার হয়। তারা এখন নেই বেঁচে নেই। ছেলে মেযে়দের বিযে় হযে় গেছে। শুধু মাসুদের বিযে় বাকী। সে তো ডাক্তারী পড়ছে, তার জন্য আর ভাবনা কি? তুমি হজ্বে গেলে আল্লাহ চাহেন তো না খেযে় মরবার কারণ নেই। তোমার আর বাঁধাটা কোথায়? তুমি স্বাচ্ছন্দ্যে হজ্বে যেতে পারো। তবে, তোমার আব্বাতো হজ্ব করতে পারেননি। তার জন্য ওমরাও করে আসতে পারো।
শাহেদ আলী বললেন : তাতো অবশ্য করবো যদি আল্লাহ সুযোগ দেন। আমার ইচ্ছা, তোমাকে নিযে়ই হজ্বে যাই। এ বিষযে় কি বলো?
নূরজাহান বললেন : তোমার ইচ্ছার উপর আমার কি বলার থাকতে পারে? তুমি সংগে নিলে আমারও হজ্ব করার নসীব হয়। এটাতো মহা আনন্দের কারণ।
(চলবে)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *