বাবুইরা কি এখন অন্ধকারে খায়?

গাঁয়ের বাড়িতে সন্ধ্যার পর প্রায়ই কারেন্ট চলে যেত। পুরো বাড়িটি তখন ভুতুড়ে আর রহস্যময়ী হয়ে উঠতো। ঘরে ঘরে জ¦লে উঠতো সন্ধ্যা বাতি, হারিকেন। তবে জোছনা রাত হলে মাঝে-মধ্যে সবাই উঠোনে বেড়িয়ে আসতাম। হোগলা, মাদুর বা খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে বড়রা গল্পের আসর জমাত। আমরা বাচ্চারা মেতে উঠতাম নানা রকম দুষ্টমিতে। কখনো বরফ পানি, কানামাছি, পলাপলি ইত্যাদি খেলায়। আবার কখনো তর্ক জুড়ে দিতাম- কার বেশি সাহস বা কার কাছে বেশি পাখির বাসার খবর আছে অথবা কে এক সাথে বেশি জোনাকি ধরেছি ইত্যাদি।
কখনও জোনাকি কৌটার ভেতর ভরে অন্ধকারে নিয়ে দেখতাম কারটায় বেশি আলো হয়। আবার কখনো কখনো জোনাকির পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ঘাটপাড়ের ভুতের আস্তানার কাছ পর্যন্ত যেয়ে থমকে যেতাম। এভাবে খেলতে খেলতে কেউ ব্যথা পেয়ে ভ্যা… করে কেঁদে উঠলে বড়দের আড্ডা খানিকটা থেমে যেত। তারপর আদর, রাগ বা ধমক দিয়ে কার্যকারী পদ্ধতি গ্রহণ করে শান্ত বানিয়ে পাশে বসাতো। আমারা তখন বাধ্য হয়েই পাশে বসে থাকতাম। ধীরে ধীরে আবার মেতে উঠতো হাসি-ঠাট্টা, গাল-গল্পে। মনে পড়ে বড়দের ভেতরও প্রতিযোগিতা চলতো, কার কয়টা কবিতা কতটুকু পর্যন্ত মনে আছে। কে ধাঁধাঁ বা শিল্লুক বলে সবাই কে বেশিক্ষণ আটকাতে পারে। আরো তাদের ছোটবেলার গল্পসহ ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, শিক্ষনীয় বা হাসির গল্পও চলতো।
একবার আমরা একটি জোনাকি ধরা নিয়ে ঝগড়া বাধালাম। শুরু হলো বড়দের উপদেশ বাণী- “ওরাও তো একটা প্রাণী। ওদের কষ্ট দিতে নেই।” এক-একজন এক-একটা বলতে বলতে এক সময় সেটা গল্পের মতো হয়ে উঠলো।
শোন- বাবুই পাখি রাতের খাবার জোনাকির আলোতে খায়। এমন গল্প শুরু হলে আমরা হা করে শুনতাম। ফাঁকে ফাঁকে বোকা বোকা প্রশ্নও করতাম। সেদিনও করেছিলাম- কেমন করে খায়?
বলেছিল- প্রথমে ঠোঁটের মাথায় করে একটু কাদা নিয়ে বাসায় রাখে। তারপর একটা জোনাকি ধরে নিয়ে কাদার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। তারপর জোনাকির পিছন দিয়ে আলো জ¦লে আর বাবুইরা রাতের খাবার খায়। আমরা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতাম। এভাবে এক সময় ভুলেই যেতাম কেউ ব্যথা পেয়েছিলো বা করো সাথে ঝগড়া হয়েছিলো।
এর মাঝে হঠাৎ কারেন্ট চলে আসতো। আমরা একযোগে সবাই চিল্লাইয়া উঠতাম। আর দু-একদিন তাড়াতাড়ি কারেন্ট চলে আসলে কিছু গল্প মাঝ পথেই থেমে যেত। তখন কারেন্টের উপর খুব খুব রাগ হতো। আর মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে আগামী দিনের কারেন্ট যাওয়ার অপেক্ষায় হাসতে হাসতে সবাই ঘরে ঢুকতাম। আমাদের দেশেও যদি এভাবে সবার ঘরের বিজলী বাতি এক সাথে নিভে যেত! আবার এক সাথে জ¦লে উঠতো আলো…!

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *