পড়ন্ত বিকেলে ঘুরতে যাওয়া

সারাদিনের ব্যস্ততার পর বিকেলের মিঠেরোদে ঘুরতে বেরোলাম আমরা চার বন্ধু আলামীন, মামুন, ছালিম এবং আমি। গায়ের একটা পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। যে পথের একপাশে সুদীর্ঘ গাঙ আর অন্যপাশে বিশাল হাওর। হাওরের মধ্যে কিছু জায়গায় ধানক্ষেতও রয়েছে। সূর্যটা তখন পশ্চিম আকাশ থেকে মিঠে আলো ছড়াচ্ছিল। এক কথায়, সে বিকেলটা ছিল যেন কোনো চিত্রশিল্পীর আঁকা ‘চিত্র’। আমরা সবাই এই পরিবেশ দেখে খুবই আনন্দিত ও বিমোহিত হই। খানিক সময়ের জন্যে হলেও আমাদের দুঃখগুলো ডুবে যায় সমুদ্রের অতল গর্ভে। জীবনের দুখময় তপ্ত মরুতে বৃষ্টিসম প্রশান্তি খুজে পাই আমাদের অনুভুতিতে। তাইতো মামুন বলে উঠল, ‘যেন স্বপ্নিল কোনো ভূবনে হাটছি’। তার কথায় আমরা সহমত পোষণ করি। যাই হোক আমরা এই চোখ জোড়ানো, মন মাতানো পরিবেশ হেরিতে হেরিতে হাটতে থাকি সামনের দিকে। হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তা থেকে খানিক দূরে হাওরের একটা জায়গায় কয়েকসারি বড় গাছ যেগুলো চতুর্ভুজাকৃতির মতো দেখাচ্ছিল। দৃশ্যটি খুবই দৃষ্টিকাড়া ছিল। আমরা সেদিকেই এগুলাম এবং এক পর্যায়ে পৌছলাম। ‘আহ! কত সুন্দর জায়গা’, সকলেই বলে উঠলাম। ধীরে ধীরে জায়গার সৌন্দর্য হেরিলাম। এসব দেখে ছালিম বলে উঠল, ‘সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কতইনা সুন্দর’। আমরা মহান প্রভুর গুণকীর্তন করতে করতে সামনের দিকে এগুলাম। রাস্তা ছেড়ে হাওরের পতিত রাস্তায় হাঁটছি। ভালোই লাগছে। কিছুক্ষণ পরে খানিকটা দূরে গাঙের ঐ পাশে চোখে ধরা দিল মনোরম সরিষা ক্ষেত। এই জায়গায় আমরা চারজনই আজ প্রথম আসলাম। এক মনোরম দৃশ্যের পর আরেক মনোরম দৃশ্য, মনে হচ্ছে যেন পরিকল্পিত কোনো ‘সারপ্রাইজ’। যাই হোক, আমরা খ্বু আগ্রহী ওই সরিষা ক্ষেতের হলদে ফুলের স্পর্শে হৃদয়টাকে শান্ত করে তুলতে। ভাবছি গাঙের ঐ পাশে কিভাবে যাবো? হঠাৎ দেখলাম একটা সাঁকো, সকলেই ছুটলাম সেদিকে। সাঁকো পেরিয়েই বিশাল জায়গা জুড়ে সরিষা ক্ষেতের অপার সৌন্দর্য। যেন মনে হচ্ছে স্বপ্নিল কোনো রাজ্য ছুঁতে যাচ্ছি।
অবশেষে…সরিষার হলদে ফুলের স্পর্শ পেলাম। ইচ্ছে করছে প্রজাপতির মতো উড়ে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াতে। ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি হৃদয়ের অনুভুতি ব্যক্ত করছি আর সবাই হ্যা বোধক সম্মতি দিচ্ছে। সকলেই যেন সৌন্দর্যের বিমুগ্ধ রূপে আপন স্বপ্ন রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। আলামীন তো বলেই উঠলো, ‘এ কোন সৌন্দর্য? যা স্বপ্নের বাস্তব রূপ! ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, আমরাও সেখান থেকে ফিরে চললাম।
সত্যিই সেই মধুময় স্বপ্নিল বিকালটা অত্যন্ত আবেগপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ, অনুভুতিপূর্ণ ছিল।
যা স্মৃতির পাতায় চিরদিন রবে অমলিন।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *