চুরি করার জন্য এক যুবক বাদশাহর বাড়ি গেল। ঘরের বাইরে থাকা অবস্থায় সে শুনলো বাদশাহ তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করছেন। বাদশা বলছেন-যে ব্যক্তি তাকবীরে উলার সাথে ৪০ দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহর খুশির জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তার সাথে আমি আমার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেবো।
চোর একথা শুনে চুরি বাদ দিয়ে ফজর থেকে বাদশাহর মসজিদে নামাজ শুরু করে দিল। এভাবে চলতে থাকে দিন। ৩৯ দিন পর বাদশা খবর নিয়ে জানতে পারলেন এক যুবক একটানা ৩৯ দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত তাকবিরে উলার সাথে আদায় করছে। বাদশা খুশি হয়ে এই যুবককে খবর দিলেন।
কিন্তু যুবক বাদশার সংবাদে আসে না। এভাবে ৪০ থেকে ৪২ দিন হয়ে যায়। তবু যুবকটি এলো না।
বাদশাহ আবার খবর দিলেন। তখন যুবক বাদশার দরবারে যেতে বাধ্য হল। বাদশাহ যুবককে ভালো করে দেখে বললেন-শুনো হে যুবক। আমি ওয়াদা করেছি তোমার মতো নেককার কারো সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো। আমার মেয়েকে বিয়ে করতে তোমাকে বল প্রয়োগ করছি না। আমি শুধু জানতে চাই, কেন খবর পাওয়ার পরেও তুমি বাদশার আদেশকে অমান্য করে আসলে না?
যুবক বললো-বাদশাহ জাহাপনা, আপনি জানেন না আমি কেমন লোক। আমি মোটেও ভালো মানুষ ছিলাম না, বরং মহাপাপী এক চোর ছিলাম। আপনার ঘর চুরি করতে গিয়ে আপনার মুখের প্রতিজ্ঞা শুনে নেককার মানুষ হওয়ার অভিনয় করতেই মসজিদে ঢুকেছিলাম। প্রতারণামূলক আপনার মেয়েকে বিয়ে করাই আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এখন আমার সেই ইচ্ছা আর নেই।
বাদশা বলেন-তার পরও তোমার কাছেই আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই। বাদশা দেখলেন তার কথা শুনে যুবকের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে।
এবার যুবক আসল ঘটনা বাদশাহকে খুলে বলল-বাদশা জাহাপনা, মসজিদে নামাজের ভেতর ৪০ দিনের দিনও আমি রাজকুমারি আর রাজ্য হাসিল করার স্বপ্ন দেখতে ছিলাম। কিন্তু ৪০তম দিনের শেষ নামাজের শেষ রাকাতের শেষ সেজদায় আমি এমন এক প্রশান্তি অনুভব করলাম যা জান্নাতের প্রশান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার হৃদয় প্রশান্তিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে! আমি পার্থিব জীবনের সব আনন্দ বেদনা সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম। আমার দয়াময় আল্লাহ যেন আমার অন্তরে তাঁরই ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। আমার হৃদয় এখন পাল্টে গেছে। আজ আমি ধন-সম্পদ চাই না, নারী-রাজ্য, প্রাচুর্য, সুখ-আনন্দ কিছুই চাই না। আজ চাই শুধু নামাজের সেজদার ভেতর পাওয়া সেই জান্নাতি প্রশান্তি। যুবকের কথা শুনে বাদশা আশ্চর্যের সাথে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।