ধূম্রদের অভিযান

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৮ম পর্ব
ঘাস ফড়িং আকৃতির রোবটযন্ত্রগুলোতে পর্যাপ্ত জ্বালানী প্রদান করলেন জন মেড়ী। অভিযানে পাঠানোর উপযুক্ত করে ‘ডিন’ নামক ক্ষুদ্র রোবটগুলো রকেট ‘ভ্যাজ’ এর নির্ধারিত স্থানে রাখলেন তিনি। ১৪ ঘন্টা পর ‘ভ্যাজ’ ছুটে যাবে মহাকাশ স্টেশনের দিকে। মহাকাশ স্টেশনটি বেশ দূরে নয়। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২২০ মাইল উপরে একটি কক্ষপথ ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে এটি। ‘ভ্যাজ’ এর গন্তব্য মহাকাশ স্টেশন হলেও ‘ডিন’ রোবটগুলোর গন্তব্য বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
জন মেড়ী ‘ডিন’ গুলো দিয়ে ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে তল্লাশী চালিয়ে ড. আশরাফের গোপনীয় বাসস্থান ও গবেষণাগারগুলো চিহ্নিত করতে চান প্রথমে। তারপর পরবর্তী অভিযানে ড. আশরাফসহ তার গবেষণাগারকে পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা জন মেড়ীর আসল উদ্দেশ্য।
কেবল প্রতিশোধ নিতেই জন মেড়ীর এই উদ্যোগ নয়। অধ্যাপক আবু সালেহের কাছ থেকে ড. আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন জন মেড়ী। তিনি স্পষ্ট দেখতে পান ড. আশরাফ বিশ্বের সব বিজ্ঞানীদের টপকিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখনই ঠেকানো না গেলে আগামী দিনের একমাত্র সফল বিজ্ঞানী হয়ে যাবেন ড. আশরাফ।
এমন আশঙ্কায় জন মেড়ী স্বীয় অনুগত বিজ্ঞানীদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন, যে কোনো উপায়ে হোক ড. আশরাফকে পৃথিবী থেকে সরাতে হবে। আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের অন্য কারো মহাকাশ বিজ্ঞানে এবং সামরিক বিজ্ঞানে অগ্রসরতা সহ্য করা যাবে না। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে। হয় আমাদের অনুগত থাকবে নয়তো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হবে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই ড. আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেন জন মেড়ী। রকেট ‘ভ্যাজ’কে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে পাঠালেন মহাকাশ স্টেশনে। মহাকাশ স্টেশন মূলত একটি বিশাল মহাকাশযান। কয়েকটি কৃত্রিম উপগ্রহের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ কৃত্রিম উপগ্রহও বলা যায় একে। সাধারণত প্রতিটি কৃত্রিম উপগ্রহের শরীর ধাতু সঙ্করের ফ্রেম দিয়ে তৈরি। এতেই উপগ্রহের সব যন্ত্রপাতি থাকে। এর পাওয়ার সিস্টেম প্রসেস পৃথিবী থেকে সব সময় মনিটর করা হয়। উপগ্রহে একটি অনবোর্ড কম্পিউটার থাকে যা একে নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে। তদরূপ মহাকাশ স্টেশনের প্রতিটি অংশে গবেষণাগার ও নানান যন্ত্রপাতিতে ঠাসা রয়েছে। এর মধ্যে অবস্থানরত গবেষকরা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সবসময় একটি যোগাযোগ সেতু তৈরি করে যান। এই বিজ্ঞানীগণ মহাকাশ স্টেশনে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন। পরে আসেন অন্য দল। বিশাল এই উপগ্রহের সব কিছু তদারকি ও গবেষণা করা তাদের একমাত্র কাজ হয়ে থাকে। মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা করা বা মহাকাশকে ভালোভাবে জানা এবং মহাকাশের আরো গভীরে পৌছার মূল লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি এজেন্সি ‘ন্যাশনাল এ বোনটিকাল এন্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)’ মহাকাশ স্টেশন পরিচালনা করে।
প্রকাশ্যে অনেক মহৎ উদ্দেশ্য বর্ণনা করে মহাকাশ স্টেশনের যাত্রা হলেও গোপনে যুক্তরাষ্ট্র এটার বৃহৎ সুফল নিজেদের সামরিক স্বার্থে ব্যবহার করে যাচ্ছে বলে রাশিয়ার মহাকাশ বিজ্ঞানীদের প্রবল ধারণা। এর অনেক প্রমাণও পেয়েছেন তারা। তারা স্পষ্ট দেখেছেন ‘নাসা’র উৎক্ষেপন করা প্রতিটি উপগ্রহে বিশেষ গোপন ক্যামেরা এ সেন্সর লাগানো থাকে। এছাড়া কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের ইতিহাসও ‘নাসা’র এই ব্যাপারটি প্রকাশ্য করে দিয়েছে।
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত রাশিয়া প্রথম ‘স্পুটনিক’ নামক একটি ছোট্ট কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৭৭ কিলোমিটার দূরে সফলভাবে আকাশে স্থাপন করে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভয় পেয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে শুরু করে ঠান্ডা যুদ্ধ। আমেরিকানরা মনে করল এই উপগ্রহ দিয়ে রাশিয়া পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে। তাই যুদ্ধ হলে এটাকে ঠেকানো যাবে না। ফলে তারা সমস্ত শক্তি, মিলিটারী, গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত যত উদ্ভাবনীর জন্য ঝাপিয়ে পড়ল। পুরো পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। আজও সেই মেরুকরণ বিদ্যমান। যদিও চীন, ভারত, জাপান ও ফ্রান্স কিছু নতুন মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু মূল দ্বন্দ্বটা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল।

রাশিয়ার সেই মহাকাশ কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে আমেরিকা পরের বছর ১৯৫৮ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি গঠন করে ‘এডভ্যান্স রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (আরপা)। মাত্র ১৮ মাস পর তারা মহাকাশে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ ছাড়তে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে ‘আর পা-ই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করে যা ইন্টারনেট হিসেবে পরিচিত। এই পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ৬৪টি দেশের নিজস্ব উপগ্রহ রয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫৬টি দেশের উপগ্রহ ছিল আকাশে। কৃত্রিম উপগ্রহ আকাশে উৎক্ষেপণে রাশিয়া রয়েছে শীর্ষে। ২০১৫ সালের তথ্যানুযায়ী রাশিয়া ৬৬০০ টি, আমেরিকা ১৩০০টি, চীন ২১৩টি, জাপান ১৫০টি এবং ভারত ৬০টি কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করেছিল মহাকাশে। বর্তমানে এর হিসাব অনেক বেশি। তবে সেগুলোর সব আজ আর সচল নেই। মাত্র ১,৩০৫টি কৃত্রিম উপগ্রহ সচল আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। বাকিগুলোর সাথে নেই কারো যোগাযোগ। ধ্বংস কিংবা নামিয়েও আনা হয়নি। ধারণা করা হয়, মহাকাশে আবর্জনার সাথে মিশে গেছে সেই সব কৃত্রিম উপগ্রহগুলো। এগুলো আজ আকাশ পথকে করে রেখেছে বেশ ঝুকিপূর্ণ।
কৃত্রিম উপগ্রহকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো পৃৃথিবী বা চাঁদ বা অন্য কোনো গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে ঘুরছে। এই কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটগুলোর কোনোটির কাজ হলো সৌরজগতের গ্রহ, সূর্য ও দূরবর্তী ছায়াপথের ছবি সংগ্রহ করা। কোনোটির কাজ হলো, আবহাওয়াবিদদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়াসহ সব ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস বর্ণনা করা। তবে সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করা হয়েছে যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করতে। টেলিভিশন সম্প্রচার, বিশ্বজুড়ে এবং উড়ন্ত জাহাজে ফোন কলের ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে ও জিপিএস সিস্টেম কাজে স্যাটেলাইট একমাত্র ভরসা। উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণা, বন্যপ্রাণীর চরে বেড়ানো পর্যবেক্ষণ, অ্যাস্ট্রোনমি ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা, নগরায়ন কাজে, বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয়, দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজ ও উড়োজাহাজের অবস্থান ট্র্যাকসহ ইত্যাদি কাজে স্বতন্ত্র স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশ দৃষ্টিগোচর হয়। এই কারণে ভূপৃষ্টে স্থাপিত কোনো যন্ত্রের চেয়ে অধিক দ্রুত পৃথিবী পৃষ্ট নিরীক্ষণ ও ছবি তুলে নিখুঁত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে স্যাটেলাইট। এর সবচেয়ে বড় সুফল হলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খবরাখবর নিমিষেই পাওয়া তথা তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর অন্যতম প্রকার হলো ‘মিলিটারী স্যাটেলাইট’। এই স্যাটেলাইট শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এর মূল কাজ হলো-নিউক্লিয়ার মনিটরিং, রাডার ইমেজিং, ফটোগ্রাফি ও শত্র“র গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা। ‘জিইও স্যাটেলাইট’- গোটা পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ একই সাথে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এই প্রকারের ৩টি স্যাটেলাইট সমন্বয় করে জুড়ে দেয়া হলে পুরো পৃথিবীকে এক সাথে দেখতে পাওয়া সম্ভব। সব প্রকারের স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করতে আলাদা মহাশূন্য যান ব্যবহার করতে হয়। এ ধরণের যান ২ প্রকারের। ‘অপচয় যোগ্য রকেট’, প্রকারের যানগুলো স্যাটেলাইট স্থাপনের পর ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে ‘মহাশূন্য শাটল’ প্রকারের যানগুলো স্যাটেলাইট স্থাপনের পর ফিরে আসে এবং বার বার তাকে ব্যবহার করা যায়। এ ধরণের রকেট যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে পারমানবিক বোমা বহনের জন্য তৈরি করা হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে এর গতির বহির্মুখী শক্তি ওকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে, কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। মহাকাশে বায়ুর অস্থিত্ব থাকে না বলে এটি বাধাহীনভাবে পরিক্রমণ করে। এগুলোর পরিক্রমণ গতি সব সময় ডিম্বাকৃতির। আর জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে সৌরশক্তি। এদের গায়ে সৌরকোষ লাগানো থাকে যা দ্বারা সূর্য থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করে।
কৃত্রিম উপগ্রহের প্রথম সংঘর্ষ ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি। সাইবেরিয়ার ৭৮৯ কিলোমিটার উপরে আমেরিকার ‘ইরিডিয়াম-৩৩’ এবং রাশিয়ার ‘কসমস-২২১৫’ উপগ্রহ একে অপরের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা খেয়ে দু’টিই ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া স্যাটেলাইটকে মিশাইলের মাধ্যমে ধ্বংস করাও সম্ভব।
মহাকাশ স্টেশনে আমেরিকার অংশে হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো প্রকট শব্দ ও নড়ে ওঠার কারণ পরখ করতে গিয়ে জাপানের বিজ্ঞানী মার্ক ম্যাটনী বিষয়টি প্রথম লক্ষ্য করেন। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জন মেড়ীর পাঠানো নভোযানটির আসল উদ্দেশ্য জানতে পারেন তিনি। মহাকাশ স্টেশনে যে দেশগুলোর গবেষণাগার ও মহাকাশ বিজ্ঞানী রয়েছেন তার মধ্যে জাপানের গবেষণাগার বেশ সমৃদ্ধ এবং মহাকাশ বিজ্ঞানী মার্ক ম্যাটনী খুবই অভিজ্ঞ। মহাকাশ স্টেশনে এখন ৮টি দেশের ৮টি গবেষণাগার এবং সেসব দেশের একেকজন বিজ্ঞানী অবস্থান করছেন।
মার্ক ম্যাটনী সাথে সাথে ফ্রান্সের সহকর্মী বিজ্ঞানীর কাছে এই তথ্য পাঠান এবং আমেরিকা অংশের প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখতে সচেতন বার্তা দেন। তিনি মার্কিন বংশোদ্ভুত। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি জাপানের মহাকাশ গবেষণা এজেন্সির প্রধান গবেষক হয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সাল থেকে জাপান ও ফ্রান্সের মহাকাশ গবেষণা এজেন্সির সাথে বাংলাদেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বেশ ভালো সম্পর্ক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। সম্পর্কের সূত্র ছিল, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাপান ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় নিজস্ব উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ। পরবর্তীতে উক্ত দেশ দুটির আন্তরিকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা নিজ দেশেই ‘বঙ্গবন্ধু-২’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু-৩’ স্যাটেলাইট প্রস্তুত করে বাংলাদেশ থেকেই মহাকাশের কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম হন।
আজ ২০ শতকের শেষ প্রান্তে ড. আশরাফের নেতৃত্বে মহাশক্তিশালী ও উন্নতমানের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা এজেন্সি ‘কর্কটক্রান্তি’। এই স্যাটেলাইটের মতো কোনো স্যাটেলাইট এখনো কেউ তৈরি করতে পারেনি। ‘বিএসএ৭১’ নামের এই মহাকাশ যান সূর্যের এতোটা কাছে পৌছতে পারবে যা বিশ্বের স্পেস এজেন্সিগুলোকে অবাক করে দেবে। ‘বিএসএ-৭১’ স্যাটেলাইট বুধ গ্রহের কক্ষপথের ভেতর থেকে ছবি তুলবে এবং বিভিন্ন তথ্য পাঠাবে। উৎক্ষেপনের পর এটা নিজ থেকেই সৌরজগতের গভীরে প্রবেশ করবে। এটি সূর্যের ৪২ মিলিয়ন কিলোমিটারের কাছাকাছি পৌছে যাবে। সূর্যের প্রখর তাপে মহাকাশ যানটির সামনের অংশ ৫০০ ডিগ্রির মতো গরম হয়ে যাবে। ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে তাপ প্রতিরোধ যানটিতে পুরো ঢাল ব্যবহার করা হবে। ড. আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন-কিভাবে সৌর ঝড় তৈরি হয় এবং সৌরজগতের চারপাশে অগণিত কণা ঘুরে বেড়ায় সে সব তথ্য দেবে ‘বিএসএ-৭১’ স্যাটেলাইট। সবচেয়ে বড় যে কাজটি এটা করতে পারবে তা হলো, সৌরজগতের সব কৃত্রিম উপগ্রহের গতিবিধি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। ড. আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যটি দেননি তা হলো-এটি ‘নাসা’র অবৈধ কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের স্যাটেলাইটগুলোর কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে বিঘœ ঘটাতে সক্ষম হবে। প্রয়োজনে যে কোনো স্যাটেলাইটকে সবার অলক্ষ্যে বিকল করে দিতে নিপুনতা দেখাতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে ‘বিএসএ-৭১’ সম্পর্কে ড. আশরাফ যা বলেছেন তা শুনে ‘নাসা’র বিজ্ঞানীগণ তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিলেন। তারা এটাকে অলীক স্বপ্ন আর হাস্যকর হিসেবে দেখলেন। তাদের দাবি, এই ব্যাপারটি একমাত্র ‘নাসা’ ছাড়া কেউ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
মার্ক ম্যাটনীর পাঠানো বার্তা পেয়ে ফ্রান্সের মহাকাশ বিজ্ঞানী আমেরিকার স্যাটেলাইট অংশের প্রতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালালেন। অবশেষে উভয় বিজ্ঞানী বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে টার্গেট করে সুযোগের অপেক্ষা করছে আগন্তক রকেটটি। এই রকেটের ভেতর অবস্থান করছে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির গোয়েন্দা রোবট। মার্ক ম্যাটনী বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা এজেন্সি ‘কর্কটক্রান্তি’র কাছে বার্তাটি পাঠালেন বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে।
মহাকাশ স্টেশনের বার্তা পেয়ে ড. আশরাফের বেশ সতর্কতা করলেন। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সব গবেষনাগার ও টাওয়ারগুলোয় পাহারা জোরালো করে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধূম্রদের কাছে। তিনিও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এক রাতে উপযুক্ত সুযোগে মহাকাশ স্টেশন থেকে রকেট ‘ভ্যাজ’ ছুটে চলে ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকা শহরের ১১০ মাইল উপরে এসে বাইরে ছুঁড়ে দেয় ক্ষুদ্রাকৃতির গোয়েন্দা রোবট ‘ডিন’দের। পরের দিন ৮০টি ‘ডিন’ ঘিরে ফেলল পুরো ঢাকা শহর। ২টি ডিনের সোলার লাইট ব্যাটারির সংযোগ পাচ্ছিল না বলে ৭৮টি ডিনের পাঠানো তথ্য পাচ্ছিলেন বিজ্ঞানী জন মেড়ী। ৩ দিন থেকে ঢাকার প্রতিটি টাওয়ারের কক্ষগুলো চষে বেড়াচ্ছে ডিনরা। কিন্তু ড. আশরাফের গবেষণাগার ও অবস্থানের কোনো তথ্য তারা দিতে পারল না। ৪র্থ দিন জন মেড়ী ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির সম্মুখিন হন। ডিনরা নতুন কয়েকটি টাওয়ারে ঢুকছে এমন সিগনাল পাঠানোর পর পরই এক এক করে সিগনাল প্রেরক ঐ ৪৮ ডিনের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকে তিনি জানলেন, এই টাওয়ার গুলোতে ঢুকার সাথে সাথে ডিনগুলো আটক হয়ে গেছে। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা বাইরে থেকে কিছুই জানা যাচ্ছে না। জন মেড়ী নির্দেশ দিলেন এই বিশেষ ধরণের টাওয়ারগুলো চিহ্নিত করে রাখতে এবং একটি থেকে অপরটির দূরত্ব কত তার তথ্য দিতে। ডিনগুলো সব ধরণের তথ্য পাঠাল। তিনি তথ্য বিশ্লেষণ করে মহাকাশ স্টেশন থেকে এগুলোর সঠিক দূরত্ব হিসেব করলেন। এখন থেকে মারাত্মক ঝুকির মধ্যে পড়ল ড. আশরাফের গবেষণাগার ও অবস্থানের টাওয়ারগুলো। এখন যে কোনো সময় এই টাওয়ারগুলোকে বেছে বেছে মাটির সাথে সম্পূর্ণ মিশিয়ে দিতে পারবেন জন মেড়ী। এই ঢাকায় পরবর্তী অভিযান শুরুর আগে সাফল্যের আত্মতৃপ্তিতে জন মেড়ী অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নিয়ে আনন্দ ভোজের আয়োজন করলেন। (চলবে)
(৭ম পর্ব)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *