খোকার নাম বাদল। প্রতিদিনই বনে জঙ্গলে ঘুরত সে। বনের একটি কোকিল পাখি ছিল তার খুব ভালো বন্ধু। প্রতিদিনই কোকিল বাদলকে গান শুনাত। বাদলও খুব আনন্দের সাথে বসে গান শুনত- কিন্তু হঠাৎ একদিন কোকিল বাদলকে গান শুনালো না। বাদল বলল, কী ব্যাপার! আজ আমাকে গান শুনাবে না? আর তোমার মনটাও আজ অন্য রকম দেখাচ্ছে কেন? কোকিল কেঁদে কেঁদে বলল, বনের শয়তান শিয়াল তার ছোট্ট দুটি বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে গেছে। একথা শুনে বাদলও খুব মর্মাহত হলো। বাদল বলল, বন্ধু তুমি একদম চিন্তা কর না, আমি তোমার বাচ্চা তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব। একথা বলে বাদল অনেক ভেবেচিন্তে গেল একটা মস্তবড় ষাঁড়ের কাছে। গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলল এবং সে বলল, ঐ শয়তান শিয়ালের আস্তানাটা ভাঙতে। ষাঁড়টি বিরক্ত হয়ে বলল, যা তো এখান থেকে। অসময়ে এসে বিরক্ত করছিস। ষাঁড়ের কাছ থেকে খালি হাতে চলে এলো বাদল। সে গেল রশির কাছে। গিয়ে রশির কাছেও সব খুলে বলল এবং শেষে বলল, সে যেন ঐ ষাঁড়টার গলায় পেচিয়ে ষাঁড়কে মেরে ফেলে। কিন্তু রশিও বাদলকে ফিরিয়ে দিল। রশিকে শায়েস্তা করতে বাদল গেল এক ইঁদুরের নিকট। ইঁদুরও বাদলকে তাড়িয়ে দিল। এরপর ইদুরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাদল গেল একটি কুকুরের নিকট। কিন্তু কুকুরও বাদলকে ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দিল। তারপরেও কুকুরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাদল গেল কিছু লাঠির কাছে। লাঠিও বাদলকে কোন সাহায্য না করে ফিরিয়ে দিল। লাঠিকে পোড়ানোর জন্য বাদল গেল সাহায্য চাইতে আগুনের কাছে। আগুনও বাদলকে তাড়িয়ে দিল। এখন আবার আগুনকে নিভানোর জন্য বাদল নদীর পানির কাছে গেলে নদীর পানিও তাকে ফিরিয়ে দেয়। নদীর পানি একেবারে শেষ করার জন্য বাদল গেল বনের একটি হাতির কাছে। হাতিও তাকে ল্যাজ নাড়িয়ে চলে গেল। বাদল হাল না ছেড়ে গেল ছোট্ট পিঁপড়ের কাছে। পিঁপড়েকে বাদল সব ঘটনা খুলে বলল। পিঁপড়ে তার দলবলসহ হাতিকে গিয়ে কামড়াতে লাগল। পিঁপড়ের কামড়ানো সহ্য করতে না পেরে হাতি সাহেব তাড়াতাড়ি গেলেন নদীর পানি খেয়ে দেয়ে একেবারে শেষ করতে। নদীর পানি সেই ভয়ে গেল আগুন নিভাতে। আগুনও ভয়ে আসল লাঠিগুলো পোড়াতে। লাঠি বাদলের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুকুরকে পেটাতে শুরু করে। কুকুর দু’চারটা খেয়ে দৌড়ে গিয়ে ধরল বিড়ালের ঘাড়ে। বিড়াল বাদলকে বলল, ভাই ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এক্কুনি যাচ্ছি ইঁদুরকে শায়েস্তা করতে। সেই ভয়ে ইঁদুরও গিয়ে রশি কাটতে লাগল তার দাঁত দিয়ে। রশিও নিজেকে রক্ষা করতে ষাঁড়ের গলায় গিয়ে পেচাতে আরম্ভ করল। মস্ত বড় ষাঁড়ও নিজের জীবন বাঁচাতে গেল সেই শয়তান শিয়ালের আস্তানা ভাঙতে। সবশেষে সেই চোর শিয়ালও ভয় পেয়ে নিজে গিয়ে জায়গা মতো কোকিলের বাচ্চা দুটিকে রেখে আসল।
কোকিল বাচ্চা দুটিকে পেয়ে খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাদলকে বলল, তুমি আমার কাছে কী পুরষ্কার চাও বন্ধু?
বাদল বলল, বন্ধু তোমার কাছ থেকে কোন পুরষ্কার চাই না। আমি শুধু চাই প্রতিদিনের মতই তোমার কন্ঠে গান শুনতে। তারপর কোকিল মনের সুখে গান ধরল-
কুহু কুহু কুহু কুহু।