রোহিঙ্গা সমস্যা : একটি পর্যবেক্ষণ

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙে রূপান্তরিত হওয়া, একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়, অন্যদিকে সবচেয়ে বর্বর প্রতিষ্ঠানের নাম-রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের একটি রূপ হল- সে আদর্শ ও জন-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। এ রূপটি সৌভাগ্যক্রমে কখনো কখনো দেখতে পাওয়া যায়। তবে সাধারণত রাষ্ট্রের দ্বিতীয় রূপটির সাথেই আমরা পরিচিত, তা হল- রাষ্ট্র চরম ফ্যাসিবাদী ও নার্সিসিস্ট একটি প্রতিষ্ঠান। সে নিজের ভালোর জন্য যা ইচ্ছা করতে পারে। কাউকে মাথায় তুলে রাখতে পারে, প্রয়োজনে মেরে পুঁতে ফেলতে পারে। সে নিজেকেই সুন্দর ভাবে। নিজের ভাল ও সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছুই সে দেখেনা। এছাড়াও, রাষ্ট্র নানাধরণের সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগে। সময় ও স্থানভেদে এসব সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ বদলায়। রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরস্থ সবকিছুকে নিজের করাধীন করতে চায়। যদি কাউকে করাধীন করার “যথেষ্ট লাভজনক কারণ” না থাকে, তবে তাদেরকে সরিয়ে ফেলতে চায়। রাষ্ট্রের কাছে মাটির সন্তানদের চেয়ে মাটির গুরুত্ব ঢের বেশি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান আমাদের মাটি চেয়েছিল। এই মাটি হাসিল করার জন্য তারা লক্ষলক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। আজ মিয়ানমারের প্রয়োজন আরাকানের মাটি। এজন্য মনুষ্যত্ব ও বিশ্ব-জনমতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরাকানের মুসলমানদেরকে গণহত্যা, গণধর্ষণ আর গণ-বিতাড়ন করছে সুচি নেতৃত্বাধীন জান্তা সরকার। রাষ্ট্রের কাছে তার নিজস্ব কিছু “মানবাধিকার” থিওরি থাকে। এ থিওরিগুলো সংবিধানের পাতাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। পড়তে গেলে আবেগে কান্দন চলে আসে। মনে হয়, আহা! কত্তো মহান! তবে এগুলোর বাস্তবায়ন কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি এবং লোকচক্ষুর অগোচরে দু’চারজন ব্যতিক্রমী মানুষের দয়ার্দ্র মানবসেবা ব্যতীত অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না। যে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ছারখার করছে, মিয়ানমারকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মুসলিম নিধনে শরিক হয়েছে- তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও মানবাধিকারের কথা রয়েছে। যে ভারত মিয়ানমারের মুসলিম নিধনকে স্বীকারই করতে চাচ্ছেনা, নাম না জানা কোন এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে, আবার নিজদেশ থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বায়না ধরেছে- তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও কিন্তু মানবাধিকারের লম্বা লম্বা আবেগময় কেচ্ছা রয়েছে। আমি নিশ্চিত, মিয়ানমারের সংবিধানেও মানবাধিকার ও আদর্শের ফিরিস্তি দেয়া আছে। লিখতে ভাল লাগে, এজন্য সবাই লেখে। কিন্তু বোকা রোহিঙ্গারা বুঝেনা যে, মানবাধিকার মূলত নাগরিকদের অধিকার। এ পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে, মানুষ পরিচয়ে কারো কোন সম্মান নেই, কোন অধিকার নেই, কোন দাম নেই, কোন দাবী নেই। যার অধিকারের প্রয়োজন, তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রের দরবারে মাথা নুইয়ে প্রার্থনা করতে হবে। এরপর যদি মহামান্য রাষ্ট্র মনে করেন যে, উক্ত প্রার্থনাকারী রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য, ভোটের জন্য, উপার্জনের জন্য, ব্যবসার জন্য, ভোগের জন্য, লাভের জন্য উপযোগী, তবেই কেবল করুণা মিলতে পারে। তবেই কেবল মানবাধিকার পাওয়া যেতে পারে। যতই মানুষ হও ভাই, লাভ নেই। যতক্ষণ তোমার মাথায় রাষ্ট্রের টিকি লাগবেনা, ততক্ষণ তুমি কিছুই না। তুমি থাকলেও কিছুনা, চলে গেলেও কিছুনা। বাঁচলেও কিছুনা, মরলেও কিছুনা। কে বলে মানবাধিকারের প্রতিশব্দ ঐঁসধস জরমযঃং? এটি চরম ভুল ও মিথ্যা কথা। মানবাধিকারের প্রতিশব্দ হচ্ছে চধংংঢ়ড়ৎঃ. রোহিঙ্গাদের দোষ মাত্র দুটি। এক, তাঁরা বৃহদাংশে মুসলিম (কয়েক ঘর হিন্দুও রয়েছেন)। দুই, তাঁরা মাটির সন্তান হলেও রাষ্ট্রের সন্তান নয়। এছাড়া, মানুষ হয়ে জন্ম নেয়াটাই রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। কাক হলে, বিড়াল হলে, তেলাপোকা হলে এতো বিপদে পড়তে হতোনা। বিড়ালে বিড়ালে মারামারি হয়। কিন্তু কখনো একজাতের বিড়াল অন্যজাতের বিড়ালের অস্তিত্ব বিলিন করে দেয়ার জন্য গণ-বিড়াল-হত্যা চালায় না। এটি পশু সম্প্রদায়ের পশুত্বের খেলাফ। গণহত্যা কেবলই মানব সম্প্রদায়ে বৈধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রসংশনীয়। দেখেন না? কয়েকটি রাষ্ট্র মিয়ানমারের “সন্ত্রাস বিরোধী” অবস্থানের প্রশংসা করছে! এ প্রশংসা মূলত গণহত্যার জন্যই! কিন্তু, মিয়ানমার রাষ্ট্রের সম্পদ না হলেও রোহিঙ্গারা তো মানুষ। এরা রাষ্ট্রহীন হতে পারে; ভূমিহীন নয়। কেবল মুসলিম বলে আজ এদেরকে ঘরছাড়া করা হচ্ছে! আধুনিক সুসভ্য পৃথিবীতে এতোবড় অন্যায় হয়ে যাবে? বারবার হতে থাকবে? তাহলে কী ফায়দা এতো মানবাধিকার, মূল্যবোধ আর সম্প্রীতির গান গাওয়ার? বৌদ্ধ ধর্মে তো জীবহত্যা মহাপাপ! আজ অসহায় নিরীহ মানুষগুলোকে এভাবে অত্যাচার করতে কারো একটুও মনে বাধেনা? সবাইকে ঠেলে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কিভাবে এতো শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে? ত্রাণের টাকায় কদিন চলবে? জেনেভা কনভেনশনে সাক্ষর করার পরও কিভাবে মিয়ানমার দু’দেশের সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রাখে? কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেই বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব শেষ? জাতিসংঘ, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেউ কোন পদক্ষেপ নেবেনা? মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে চীন এতো বড় অত্যাচারেও মুখ বুজে সমর্থন দিয়ে যাবে? শতাধিক রাণীর হেরেমখানা থেকে কখন বের হবেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজারা? কখন নিজেদের কামড়াকামড়ি ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীর হালচাল নিয়ে একটু মাথা ঘামাবেন তাঁরা? মুসলিম বিশ্বের এতোগুলো নামকরা হামবড়া সংগঠন আছে! কেবল গোশত-রুটি খাওয়ার জন্য? সবকটি প্রশ্নের উত্তর আছে। সবাই জানে, কিন্তু কেউ দেবেনা। নেতারা স্বার্থের কাছে ঈমান বিক্রি করে বসে আছে। আমরা কর্মহীন হয়ে হাহাকার করে যাচ্ছি। জানি, কেউ শুনবেনা। তবুও বিনীত আবদার- রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধ হোক। এসব অন্যায় হচ্ছে। খুব খুব খুব বড় অন্যায় হচ্ছে। অসহায় মানুষগুলোকে রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীক স্বার্থের গেঁড়াকল থেকে মুক্তি দেয়া হোক। একদিন, অন্তত একদিনের জন্য তাঁরা মানুষের পরিচয়ে, মানুষের সম্মান নিয়ে বাঁচুক। মানুষ যদি নাই বাঁচল, তাইলে এতো রাষ্ট্র আর মানবাধিকার দিয়ে কী করবেন?

আসুন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জেনে নেই।
পনেরশ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অস্ট্রিক জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কুরুখ নামক একটি শাখাগোষ্ঠী পূর্ব ভারত থেকে বার্মার পশ্চিম দিকের আরাকান অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। প্রথমে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও পরে আরব বণিকদের প্রচারে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় এই জনগোষ্ঠী। জাতিগত দিক থেকে এরা উপমহাদেশীয় অঞ্চলের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতো শংকর। শংকর বলা হয় সেসব জাতিগোষ্ঠীকে যাদের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রক্ত প্রবাহিত। আরাকানের অধিবাসীরা অস্ট্রিকদের সাথে সাথে পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানদের মিশ্রণে সৃষ্টি। বার্মা ছাড়াও পূর্ব ভারত ও আমাদের চট্টগ্রামে এদের অবস্থান। আরাকান অঞ্চলের পূর্বনাম রোসাং/রোহাং থেকে এদের নাম হয়েছে রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ও রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী। ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দে উগ্র বৌদ্ধ রাজবংশ মগদের আগমন ঘটে। আমরা যে “মগের মুল্লুক” বাগধারাটি বলি, সেটি এসেছে মগ রাজবংশের যাচ্ছেতাই শাসন ব্যবস্থা থেকে। মগদের হাতেই প্রথমবার এ অঞ্চলের ভূমিপুত্র রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস, গণহত্যার ইতিহাস, গণধর্ষণের ইতিহাস, লুটপাটের ইতিহাস, আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি-দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়ার ইতিহাস, মসজিদ ধ্বংস করার ইতিহাস। তবে কিছু আলো জ্বলেছিল ইতিহাসের কয়েকটি পাতায়। মধ্যযুগের আরাকান রাজসভা ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির লীলাভূমি। যে বাঙালি মহাকবি আলাওলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, তিনি মুলত আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহাঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। রাজা বোদাওফায়ার সময় থেকে চরম বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে রোহিঙ্গাদেরকে ম্যান্ডেটরি সিটিজেনশিপ দেয়া হয়। রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে মায়ানমারের এসেম্বলিতে এমপি হয়েছিলেন এম.এ. গাফফার, সুলতান আহমদ সহ কতিপয়। কিন্তু ১৯৮২ সালে জেনারেল নে উইন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেন। এরপর থেকে ইতিহাস আবার নতুন মোড় নেয়। ১৯৯১-৯২ সাল থেকে শুরু হয়ে সর্বশেষ ২০১৬ থেকে তাঁদের উপর মানবিতিহাসের বর্বরতম নিপীড়ন চলছে। রোহিঙ্গাদেরকে গণহত্যা, গণধর্ষণ, আগুন এবং বিতাড়ন করার ভয়ানক চিত্র পৃথিবীর সবকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুযায়ী, রোহিঙ্গারা নাগরিক অধিকার তথা লেখাপড়া, চলাচল, অর্থনৈতিক, বৈবাহিক ও ধর্মীয় অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। সাম্প্রতিক সময়ের রোহিঙ্গা নির্যাতনের কেন্দ্রে রয়েছে মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। এতে প্ররোচনা দিচ্ছে বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু আসিন উইরাথু ও তার অনুসারীরা। এছাড়া আরো একজনের বড় ভূমিকা রয়েছে এ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পেছনে। জি, ঠিক ধরেছেন। তিনি “শান্তির পায়রা” অং সান সুচি। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনাবলী নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের পর আমি কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করার প্রয়োজন মনে করছি। সিদ্ধান্তসমূহ নিম্নরূপ- ১. রোহিঙ্গারা ঐতিহাসিকভাবে বার্মার অধিবাসী। যদি তর্কের খাতিরে বলা হয় যে, এরা পরবর্তীতে এ অঞ্চলে এসেছিল। তাহলে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সেই “পরবর্তী” কয়েকশ বছরের “পূর্ববর্তী” কেচ্ছা। আর শুধু রোহিঙ্গা কেন? পৃথিবীর সভ্যতাসমূহের ইতিহাস খুলে দেখুন। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী কখনো না কখনো একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর করেছে। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সভ্যতা বিকাশের অন্যতম উপাদান। সুতরাং যে জাতির সন্তানরা তাঁদের দেশের এসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্ব করেছে, হঠাৎ করে কোন এক বর্বর শাসক আর কতিপয় ধর্মান্ধগুরুর কলমের খোঁচায় সেই মাটি থেকে মাটির পুত্রকন্যাদেরকে মাটিহীন করা যায়না। ২. রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং প্রশ্নাতীত। বিগত বছরগুলোতে সরকারি হিসেবেই আমাদের দেশে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে। প্রকৃত হিসেবে তা দশ লক্ষের অধিক। শুনতে খারাপ লাগলেও বলছি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অত্যন্ত অদক্ষ এবং অপরাধপ্রবণ। বাংলাদেশের নাম ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে এরা নানাবিদ অপরাধে জড়িত হয়। এজন্য কেবল তাঁদেরকে দোষারোপ করাও ঠিক নয়। জীবনভর তাঁদেরকে এমন একটি পরিবেশে রাখা হয় যে, তাঁরা শিক্ষা ও নৈতিকতার পাঠ পড়তে পারেনা। মানবিক আবেদন বলে সীমান্তের দ্বার উন্মোচনের কথা আমি নিজেও বলি। তবে চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মতো ওভার-পপুলেটেড দেশ এতো বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ভার কিভাবে বহন করবে? মায়ানমার কি আদৌ এদেরকে ফেরত নিতে চাইবে? এই অদক্ষ জনশক্তিকে বাংলাদেশ কী কাজে লাগাবে? রাখবে কোথায়? দানের টাকা দিয়ে কদিন এদের ভরণপোষণ করা সম্ভব হবে? সুতরাং, বাংলাদেশ কেন সব রোহিঙ্গাদেরকে নিজের বুকে টেনে নিচ্ছেনা- এপ্রশ্ন করার পূর্বে উপরোক্ত পয়েন্টগুলো একবার হলেও ভেবে দেখবেন। ৩. রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ করার একমাত্র পথ হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ। সে যুগ নেই যে, কয়েকটি রাষ্ট্র এক হয়ে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মুসলিম দেশগুলোর সে ঐক্য, শক্তি বা ইচ্ছা কোনটিই নেই। তাছাড়া মায়ানমারের উপর চীন, ভারত ও ইসরাইলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ হাত রয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে জনমত গঠন করা। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস তথা লেখনি, বক্তৃতা-বিবৃতি, র‌্যালি-প্রটেস্ট ইত্যাদি জনমত গঠনের শ্রেষ্ঠ উপায়। ৪. নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপর এতো ভরসা না রাখাই ভাল। এযাবৎ যারা নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, তাঁদের জীবনচিত্র দেখলে বুঝতে পারবেন যে, অর্ধেকই শান্তি নয়; বরং অশান্তিতে পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য। সুতরাং বার্মার শান্তি-কইন্যার উপর এতো রাগান্বিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি তেমনি, যেমনটি হওয়ার কথা ছিল। ৫. আইনসম্মত উপায়ে নিজের এবং কমিউনিটির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে সাধ্যমত সহায়তা করার চেষ্টা করুন। নানা ধাতব্য সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছে। তাঁদের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌছে দিন। এতে অসহায় মানুষগুলোর কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে। গতকাল আইএসের হাতে ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায় নির্যাতিত হয়েছিল। আজ বার্মিজ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে আরাকানের মুসলিমরা হচ্ছে। আগামীকাল আরো কিছু আসবে। মানবজাতির অতিত, বর্তমান, ভবিষ্যত- সবই রক্তঝরা। এ রক্তগ্রোতে দু’চারটি ইয়াজিদি কিংবা রোহিঙ্গা ভেসে গেলে সুসভ্য মানবজাতির কিছুই আসে যায়না। তবু, মানুষ হওয়ার তাগিদেই কথা বলা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *