মানবতার ফেরিওয়ালা

ইসলামপূর্ব যুগ। কত অশান্তি অরাজকতায় ভরপুর ছিল সমস্ত বিশ্ব। অজ্ঞতার অন্ধকারে সমস্ত বিশ্ব আচ্ছাদিত ছিল। মানুষে মানুষের অধিকার কী তা জানতই না। আসলে বলতে গেলে ‘মানবতা’ শব্দটাই কেউ জানত না তখন। তাদের কুরুচিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা বেলেল্লাপনায় ভরপুর সাংস্কৃতিক আচার আচরণ দেখে বিরক্ত হয়ে সে যুগের নাম দিয়েছেন ‘অন্ধকার যুগ’। মহান আল্লাহ্ যখন ইচ্ছা করলেন এ পথভ্রান্ত মানুষদেরকে সুপথে আনবেন তখন তাঁর প্রিয় হাবিবকে এ ধুলির ধরায় প্রেরণ করলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাল্যকাল থেকেই ভাবতেন সমাজের অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষদের নিয়ে। এই প্রথম একজন ভাবলেন মানুষের অধিকার নিয়ে। নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকেই শুরু হয় ইসলাম প্রচার। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একত্ববাদের ডাক পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন। সাথে মানুষের জীবনের যাবতীয় বিষয়ের সমাধান সমৃদ্ধ মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মতবাদ প্রকাশ করেন তার নাম হলো ইসলাম। এমন এক দুর্দিনে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরার বুকে রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদের ডাক দেন যখন সমস্ত পৃথিবীতে এক অরাজকতা বিরাজ করছিল। সেখানে কোন ধর্ম মত তো ছিলই না (যদিও কিছু মানুষ একত্ববাদের বিশ্বাসী ছিলেন তথাপি তারা সংখ্যায় একেবারে নগণ্য ছিলেন)। এমনকি সেখানে মানুষদেরকে মানুষই মনে করা হতো না। নারীদের অবস্থা আর কি বলার আছে তা তো সবারই জানা। তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারদের থেকেও অবহেলা করা হতো। আর দাসদের অবস্থা তো আরও নাজুক ছিল। এই যখন পৃথিবীর অবস্থা তখন ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব। ইসলাম ধর্মই প্রথম সুর তুলে মানুষের অধিকার নিয়ে। ইসলামই প্রথম উত্থাপন করে নারীরা যে মানুষ তাদেরও যে পুরুষের মতোই পৃথিবীতে বাঁচার খাওয়ার অধিকার আছে। ইসলামই প্রথম দাস প্রথার বিলোপ করে। যেখানে মানুষের অবস্থা এতো করুণ ছিল, বিভৎস ছিল মানবতা সেখানে ইসলামই প্রথম মানবতা নামের একটি অচিন শব্দের আবিষ্কার করে। কত ঘাত প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি সহ্য করে ইসলাম আরব থেকে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত বিশ্বজুড়ে। এমনকি পৃথিবীর শেষ সীমানা আমেরিকা মহাদেশ পর্যন্তও গিয়ে পৌঁছে ইসলামের বাণী, মানবতার বাণী। সারা বিশ্বে মানবতার জয়গান ফেরি করে বেড়িয়েছে ইসলাম। ইসলামের বাহকগণ সমস্ত পৃথিবীর মানুষদের মানবতার দীক্ষা দিয়েছেন। বেশি দূর চিন্তার প্রয়োজন নেই আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ নিয়ে চিন্তা করলে বুঝা যাবে সমস্ত পৃথিবী কি ছিল আর ইসলাম কিভাবে সমস্ত পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। ইসলাম আগমনের পূর্বে আমাদের এ উপমহাদেশে ঘৃণ্য বর্ণবাদ তথা নিম্ন বংশের লোকদের উপর উচ্চবর্ণের লোকদের অত্যাচারের স্ট্রিমরোলার চলছিল। নিম্ন বর্ণীয় লোকেরা তখন মানুষ বলেই বিবেচিত হতো না। কিন্তু ইসলাম এ সকল বর্ণবাদ ছিন্ন করে সমতার এক অভূতপূর্ব আহ্বান নিয়ে আগমন করে। ইসলাম ধর্ম আগমনের ফলে আমাদের জঞ্জালযুক্ত উপমহাদেশ এক নতুন সাড়া ফেলে। মানুষের অন্তরে ইসলাম ধর্মের সুমহান বাণী মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় আঘাত করে। তাছাড়া এর বাহকগণের নিষ্কলুষ চরিত্র, অপরিসীম সহনশীলতা, মানবতাবোধ সবকিছুই উন্নত রুচিবোধ সম্পন্ন ছিল। যা ইতোপূর্বে মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি। মানুষ আশ্চার্যাম্বিত হয়ে দলে দলে মানবতার জয়গান গাইতে গাইতে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া শুরু করে। তবে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যাদেরকে হেদায়াত দান করবেন না বলে লিখে দিয়েছেন তারা সেই সব মানুষ যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ থেকে অদ্যাবধি রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। আবুজাহেল, আবুলাহাব, উতবা, শায়বাদের দোসররা কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামের দোষ-ত্র“টি খুঁজে পাবে না। কারণ এটাতো শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা এ ধর্মকেই নির্বাচন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা অন্বেষণ করবে তা গ্রহণ করা হবে না।’

মানুষের অধিকারের কথা সমস্ত পৃথিবীব্যাপি ইসলাম ফেরি করে বেড়িয়েছে। এর বাহকগণ কত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে এ জীবন ব্যবস্থাকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন। যারা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন হলো বিকৃত মনোভাব পরিত্যাগ করে সুস্থ মস্তিষ্কে একটু চিন্তা করুন, ইসলামের কোন বিধান মানবতা বিরোধী? আপনি সমস্ত জীবনভর চিন্তা করেও ইসলামের কোন বিধান মানবতার পরিপন্থী পাবেন না। আমি নির্দ্ধিধায় বলতে পারি এ মহান ধর্মের কোন একটি বিষয়ও মানবতা বিরোধী নয় বরং প্রত্যেকটা বিষয়েই মানবতার জয়গান উচ্চারিত হয়েছে। আমি বলিষ্ট চিত্তে বলতে পারি যে, যদি আজ পৃথিবীর সর্বত্র ইসলামী আইন কায়েম হয় তাহলে পৃথিবীতে এতো নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা হবে না, সর্বত্র শান্তির ছোয়ার এক মনোরম আবহ বিরাজ করবে। এখন যদি কোন বিকৃত মনোভাবের লোক প্রশ্ন করে কিভাবে এত নিশ্চিত হলেন? তাহলে আমি বলব অতীত ইতিহাস থেকে। খোলাফায়ে রাশেদার যুগে কি শান্তির আবহ বিরাজ করেনি? ইসলামের পঞ্চম খলিফা বলে খ্যাত হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে কি কোন বিশৃঙ্খলা ছিল? মানুষের পরিবর্তনের সাথে সাথে জীব-জন্তুর মাঝেও পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। আরও ভূরি ভূরি প্রমাণ আমাদের চক্ষুর সামনে জ্বলজ্বল করছে।
তাই যারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না বা কতিপয় লোকের উগ্রতা দেখে ইসলামকে দোষারোপ করেন তা কিন্তু কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। কারণ আপনি আগে ইসলাম সম্পর্কে জানুন অতঃপর মন্তব্য করুন। ইসলাম কখনো উগ্রতাকে সমর্থন করেনি বরং নিষেধ করেছে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে যত যুদ্ধ করেছেন তার প্রায় সকলটি ছিল প্রতিরক্ষামূলক। কাফেররা আক্রমণ করার পর মুসলমানরা আক্রমণ ঠেকিয়েছেন, পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তাই আমি বলি বর্তমানে যারা মানবতার সুমধুর বাণী আওড়াচ্ছেন আপনারাই কতটুকু মানবতা লঙ্ঘন করছেন তা একটু ভেবে দেখেছেন কি? ইউরোপ, আমেরিকায় বর্ণবাদ চলছে। মানবতার অবমাননা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। যেখানে আজও মানবতা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, অথচ তাদেরই মুখে আজ মানবতার বড়ো বড়ো স্লোগান।
ইসলাম বিদ্বেষভাবাপন্ন লোকদের বলি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বেশি করে জানুন, সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন, তাহলে হঠাৎ আপনার অজান্তেই মুখ ফসকে বের হয়ে যাবে এইতো মানবতার ফেরিওয়ালা। এই তো শান্তির অগ্রদূত।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *