মাদরাসা শিক্ষা প্রসারে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্’র অবদান

উলামায়ে কিরামগণ নবীগণের উত্তরসূরি অর্থাৎ, ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ আর এই ওরাসাত হলো ইলমের ওরাসাত। ইলমে দ্বীনের প্রচার প্রসার ও রক্ষার দ্বায়িত্ব হল ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ তথা হক্বানী আলিম উলামাদের।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই ওরাসাতের দ্বায়িত্ব পালন করার জন্য যুগে যুগে এমন কিছু উলামায়ে কিরামের আবির্ভাব ঘটেছে যারা নিজেদের জীবনের সবকিছু কুরবান করে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে দুনিয়ার জমিনে প্রচার করেছেন, উম্মতে মুহাম্মদীকে সরল সহজ তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে পরিচালিত করতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিংশ শতাব্দীতে তেমনি এক মহান ব্যক্তিত্ব ‘ওয়ারিসে রাসুল’ ছিলেন শামসুল উলামা, যুগের মুজাদ্দিদ, রঈসুল কুররা ওয়াল মুফাসসিরীন, মুরশিদে বরহক্ব, সিলেট তথা বাংলাদেশের গৌরব হজরত আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্।
বিশাল ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে গড়ে তুলেছিলেন জাগরণী আন্দোলন। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে এবং ভ্রান্ত মতবাদের করালগ্রাস থেকে এদেশের ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধকে রক্ষার স্বার্থে তিনি জীবদ্দশায় বহুমুখী খেদমত করেছেন। সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোসহীন সংগ্রামী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশে তথা উপমহাদেশে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের তত্ত্বাবধানে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অতি প্রাচীন। উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষার সূচনা হয় ১৭১১ সালে, মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পর। বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা আলিয়া মাদরাসা এবং ১৮৬৬ সালের ৩০ মে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিংশ শতাব্দীর সাত দশক পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়নের নামে এ উপমহাদেশে বহু শিক্ষা কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১ অক্টোবর ১৯১৪ সালে ইংরেজ সরকার কর্তৃক ‘নিউ স্কিম মাদরাসা’ কোর্স, ১৯০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম কওমি প্রতিষ্ঠান, ১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৬৩-৬৪ সালের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন এবং ১৯৭০ সালের শামসুল হক কমিটির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃত অস্বীকৃত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকারের পক্ষে ১৯৭৫ সালের ২০ জানুয়ারি মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যসূচিতে বিরাট পরিবর্তন করা হয়। আলিয়া মাদরাসাগুলো জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মূলস্রোত ধারায় চলে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয় আশির দশকে। ১৯৮৫ সালে দাখিলকে এসএসসি, ১৯৮৭ সালে আলিমকে এইচএসসি সমমান করে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অনেক আন্দোলন শেষে ২০০৬ সালে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত আইন-০৬ জাতীয় সংসদে পাস হলে ফাযিল স্নাতক ও কামিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মর্যাদা লাভ করে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নের প্রত্যেকটি আন্দোলনে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইংরেজ বেনিয়ারা ছলে-বলে-কৌশলে মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা, ও মর্যাদা হরণ করার জন্য পদে পদে যেসব ষড়যন্ত্র আরোপ করেছিল, আলিয়া ও কওমি মাদরাসা শিক্ষার বৈপরীত্য ছিল তারই একটি ফসল। বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবে সম্পূর্ণ সরকার বিচ্ছিন্ন বা দেশদ্রোহী না হয়ে ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ আলিয়া মাদরাসার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ছাহেব কিবলা’র সুদূরপ্রসারী চিন্তা চেতনাকে কওমি পন্থীরা তখন সমর্থন না করলেও সরকারের সাথে সমন্বয় রেখে মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি পাওয়ার প্রয়োজন কতখানি, ২০১৮ সালে এসে খুব ভাল করে বুঝেছেন!! দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স মান পাইয়ে দিয়ে কওমিরাও আলিয়ার পথে তাদের নতুন যাত্রা শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ আঞ্জুমানে মাদারিসে আরাবিয়া
বাতিলপন্থীরা যখন সরলপ্রাণ মুসলমান ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ঈমান, আক্বিদা নষ্ট করার ঘৃণ্য পাঁয়তারা করছিল, ঠিক তখনি আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশ আঞ্জুমানে মাদারিসে আরাবিয়া’। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে ছাহেব কিবলাহ’র সহযোগী হিসেবে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অন্যতম হলেন, আল্লামা গোলাম হোসাইন সৎপুরী, আল্লামা ইসহাক আহমেদ চৌধুরী বিশ্বনাথি, আল্লামা হাবিবুর রহমান রারাই, আল্লামা আব্দুস সালাম তেলীকোনি, আল্লামা ইরশাদ হোসাইন গোয়াহরী, আল্লামা আব্দুল জব্বার গোটারগ্রামী। সংগঠনের আওতাধীন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে একতাবদ্ধ হয়ে মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস সঠিক আক্বিদার ভিত্তিতে পরিচালনা করে সরলমনা মুসলমানদের ঈমান আক্বিদাকে হেফাজত করতে পারে, শুরু থেকেই এই সংগঠন সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলে। মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে এই সংগঠন নিয়মিত যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হল: (ক) প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ। (খ) মেধার বিকাশে বৃত্তি পরীক্ষার প্রচলন। (গ) শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নে টিচার ট্রেনিং। (ঘ) শিক্ষার্থীদের আখলাক্ব ও আক্বাইদী প্রশিক্ষণ এবং গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ নিজের তহবিল থেকেই ব্যয়ভার বহন করেছেন, ইন্তেকালের পরেও পারিবারিক ভাবে তা অব্যাহত আছে। বর্তমানে এ সংগঠনটি পরিচালনার জন্য ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি এবং প্রশাসনিক, পরীক্ষা ও প্রকাশনা, পাঠপরিকল্পনা ও পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত উপকমিটি রয়েছে। সিলেট বিভাগের ৬টি কামিল মাদরাসা সহ প্রায় দুই শতাধিক ফাদ্বিল, আলিম, দাখিল, ইবতেদায়ি পর্যায়ের মাদরাসা ও শতাধিক হাফিজিয়া মাদরাসা এর সদস্য।

জমিয়াতুল মোদাররেছীন
শতাধিক বছরের ঐতিহ্যধন্য মাদরাসা শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন হল জমিয়াতুল মোদাররেছীন। কিন্তু ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনকালে এটি আজকের মতো সাংগঠনিকভাবে এমন মজবুত, সুগঠিত, সক্রিয় ও প্রাণবন্ত ছিল না। বাংলাদেশের প্রথিতযশা আলেম উলামারা পাকিস্তান আমলে এর সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও এ সংগঠন শক্তিশালী রূপ লাভ করে ‘১৯৭৬ সালে’ বাংলাদেশ আমলে এসে। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান ছাহেব এর সভাপতি নির্বাচিত হন। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন এর উপদেষ্টা। এই সব মহান ব্যক্তিদের আন্তরিকতার কারণে সংগঠনটি রাজধানীর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত হতে থাকে। বাংলাদেশের হক্বপন্থী প্রায় প্রতিটি মাদরাসার শিক্ষক এর সাথে সম্পৃক্ত হন। ব্রিটিশ আমল এবং পাকিস্তান আমলে বেসরকারি মাদরাসার শিক্ষকরা ছিলেন অবহেলিত, তাদের অনুদান ছিল যৎসামান্য। ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্ধের আন্দোলন ও ত্যাগের বিনিময়ে আজ সকল বেসরকারি মাদরাসার শিক্ষক সমাজ সরকারি স্কেলে পাচ্ছেন ১০০% বেতন। পাচ্ছেন চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, অবসর ভাতা, কল্যাণ ভাতা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষকতা আজ এক আকর্ষণীয় পেশায় পরিণত হয়েছে।

স্বতন্ত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
মাদরাসা শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ জীবনের শেষ লগ্নে এসেও বাংলাদেশে একটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সফল আন্দোলন করে গেছেন। দেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং মাদরাসার ফাদ্বিল ও কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের সমমান প্রদানের যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবি ছিল এ দেশের মাদরাসা শিক্ষার শুভাকাক্সক্ষী ও ইসলামপ্রিয় জনতার শত বছরের দাবি। এ যৌক্তিক দাবি এক সময় গণদাবিতে পরিণত হয়। কিন্তু ২০০৬ ইং সনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের সরকার সরলমনা মুসলমানদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে পাশ কাটিয়ে ফাদ্বিল ও কামিল মাদরাসাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে ফাদ্বিল ও কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের মান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২৪ আগস্ট ২০০৬ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং এ লক্ষ্যে একটি কেবিনেট উপকমিটিও গঠন করা হয়। উক্ত কেবিনেট উপকমিটির এক সভায় মাদরাসা শিক্ষা বিরোধী এক সদস্য মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি জেলায় একটি করে মাদরাসা নির্বাচন করে সেগুলোর ফাদ্বিল-কামিলকে ডিগ্রি ও মাস্টার্সের মান প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন। সরকার কর্তৃক গৃহীত এ সিদ্ধান্তে দেশের ওলামা-মাশায়েখদের উপর বিষাদের ছায়া নেমে আসে। হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারি আলেম-উলামা, সর্বোপরি যুগে যুগে হক্কানী আলেম-উলামা ও পির-মাশায়িখ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে এটা আল্লাহর মাক্ববুল অলি আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ মেনে নিতে পারলেননা। মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে এরকম হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঠিক সেই মুহুর্তে তাঁর সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়াকে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদাররেছীন এবং আল্লামা ছাহেব কিবলাহ রাহিমাহুল্লাহ্ প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে মাদারিছে আরাবিয়াও এক যোগে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ২৮ আগস্ট ২০০৬ ইং তারিখে স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাহেব কিবলার নেতৃত্বে সিলেট সিটি পয়েন্টে এক মহাসমাবেশের আহবান করা হয়। উক্ত মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ ইং ছাহেব কিবলাহ প্রায় পাঁচ শতাধিক গাড়ির বহর ও হাজার হাজার মানুষ নিয়ে পূণ্যভূমি সিলেট থেকে সকাল ১০ ঘটিকায় রাজধানী অভিমুখে লংমার্চের জন্য রওয়ানা হোন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র এই আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের সকল ইসলামি দল ও পির-মাশায়েখগণ একাত্মতা প্রকাশ করলেও সরকারের শরীক দল জামায়াতে ইসলামি এর বিরোধিতা করতে থাকে। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই মাদরাসাকে ন্যস্ত করার জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। আন্দোলনের বিরোধিতা এবং তাঁকে কটাক্ষ করে জামাতের তখনকার এক পাওয়ারফুল নেতা এক সম্মেলনে ফুলতলী ছাহেব কিবলাহকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘পির ছাহেব! বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। মাথায় কাজ করে না। লংমার্চ-ঢংমার্চ এগুলোয় কাজ হবে না। ঘরে বসে থাকুন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রাহিমাহুল্লাহ্ এর কাছে এ খবর পৌঁছানো হলে তিনি বললেন, ‘যে আমাকে ঘরে বসে থাকার কথা বলে, আল্লাহ তাকেই ঘরে বসিয়ে রাখবেন। আমি রাজপথে থেকেই মৃত্যু বরণ করব।’ আল্লাহর অলির কথা বাস্তবে প্রমানিত হল। জেলখানার মধ্যে সেই প্রভাবশালী নেতার বসে থাকা আল্লাহর অলির সাথে বেয়াদবিরই পরিণাম কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। সামছুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রাহিমাহুল্লাহ্’র আন্দোলনের ফসল আজকের স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবতার মুখ দেখেছে। বাংলাদেশের পির-মাশায়েখ, আলেম-উলামার শত বছরের প্রাণের দাবি এবং ছাহেব কিবলাহ রাহিমাহুল্লাহ্ এর জীবনের শেষস্বপ্ন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করে মুসলমানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে।
ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ্ যদি তখন সে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তাহলে হয়তো বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষার বিরাট ক্ষতি হয়ে যেত। দেশের ইসলামি মাদরাসা তথা ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে এর স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলতো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ঐতিহাসিক ভুমিকা পালন করার জন্য তার মাকবুল অলিকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আমাদেরকে তার পথের পথিক হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

তথ্য সুত্র:
১. আল্লামা ফুলতলী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি স্মারক ২০১৪।
২. দৈনিক ইনকিলাব সেপ্টেম্বর ২০১৩।
৩. আলিয়া মাদরাসার ইতিহাস, লেখক: আব্দুস সাত্তার, প্রকাশক: ইসলামি ফাউন্ডেশন, ২০০৪।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *