খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৫৬. একবার ফুদাইল বিন ইয়াসার, সুফিয়ান বিন উয়াইনা ও আব্দুল্লাহ বিন মুবারক ওহাব বিন ওরদ (রহ.)’র কাছে খুরমার আলোচনা করলে ওহাব বিন ওরদ বললেন, খুরমা আমার প্রিয় খাদ্য। কিন্তু আমি খুরমা খাওয়া পরিত্যাগ করেছি। কেননা মক্কায় খুরমা এখন যুবাইদা ও অন্যান্য বাগানের খুরমার সাথে মিশে গেছে। আব্দুল্লাহ বিন মুবারক বললেন, আপনি যদি এ ধরনের সুক্ষè সুক্ষè বিষয় ধরেন, তাহলে রুটি খাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়বে। ওহাব জিজ্ঞেস করলেন, কেন? উত্তরে ইবনে মুবারক বললেন, মূল জমি পার্শ্ববর্তী জমির সাথে মিশে গেছে। এ কথা শোনামাত্র তিনি বেহুশ হয়ে পড়েন। সুফিয়ান বিন উয়াইনা আব্দুল্লাহ বিন মুবারককে বললেন, আপনিতো এ লোককে হত্যা করেন ফেললেন। আব্দুল্লাহ বিন মুবারক বললেন, আমরা তো উদ্দেশ্য ছিলো তিনি যাতে এ ধরনের সুক্ষèতা পরিত্যাগ করেন। জ্ঞান ফিরে আসলে ওহাব বিন ওরদ কসম করে বললেন, আমি আর জীবনে কখনোও রুটি খাবো না। সত্যিই তিনি তারপর হতে শুধু দুধ পান করতেন। একবার তাঁর মা কিছু দুধ তাঁকে পান করতে দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুধ কোথা হতে আনা হয়েছে? মা উত্তরে বললেন, অমুক ব্যক্তির বকরীর বুধ। তিনি দুধের পেয়ালা পান করার জন্য মুখের কাছে নিলেন, তৎক্ষণাৎ আরেকটি প্রশ্ন করে বসলেন যে, বকরীটি কোথায় চরত, মা এবার চুপ করে রইলেন। ওহাব বিন ওরদ ঐ দুধ আর পান করলেন না। কেননা বকরীটি এমন জমিতে চরত যেখানে জনসাধারণের কিছু হক ছিলো। মা বললেন, পান করে ফেল আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। ওহাব বললেন, আমি তা পছন্দ করি না যে, মাগফিরাতের আশায় ইচ্ছাপূর্বক একটি নাফরমানি করবো। (আল হালালু ওয়াল হারামু, গাজ্জালী (র.)
৫৭. হজরত আবু বকর (রাদ্বি.) বলতেন, আমি এতটা ভয় আর আশান্বিত যে, যদি কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হয়, আজ একজন ব্যতীত আর কেউই দোযখে যাবে না, তবে আমি মনে করি যে, দোযখী আমি ব্যতীত আর কেউই নয়। আবার যদি বলা হয় যে, আজ একজন ব্যতীত আর কেউই জান্নাতী হবে না। তবে আমি আশা করি সে জান্নাতী আমি ছাড়া আর কেউ নয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে পরিণাম কি হবে সে সম্বন্ধে কেউই অবগত নয়। এ বিষয়ে কেউ অবগত হলে শয়তানেরও তার পরিণতি সম্বন্ধে জ্ঞান থাকতো। কারণ যে ফেরেশতাদের ওস্তাদ ছিলো, সাত হাজার বছরের ইবাদতের পুঞ্জি তার ছিলো। তার আমল আরশের পাখার উপর রাখা ছিলো। (মাজালিছে গাজ্জালী)
৫৮. হজরত আউন বিন মুআম্মার বলেন, একদিন হজরত উমর বিন আব্দুল আজিজ তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ফাতেমা! আজ আঙুর খেতে মনে চাইছে। তোমার কাছে কি এক দিরহাম হবে? ফাতেমা বললেন আমি কোথায় পাব? আপনি তো আমিরুল মু’মিনীন, অথচ আপনার কাছে একটি মাত্র দিরহাম নেই যা দিয়ে কিনতে পারেন। হজরত উমর বিন আব্দুল আজিজ বলেন, তুমি যে অর্থের কথা বলছো তা দিয়ে আঙুর খেতে না পাওয়া আমার প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ করুণা। সেই অর্থের অপব্যয় করলে জাহান্নামের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতাম না। ফাতেমা বর্ণনা করেন, খলীফা হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমার স্বামী হজরত উমর বিন আব্দুল আজিজের গোসল ফরজ হতে দেখিনি। (তারীখুল খুলাফা)
৫৯. খলিফা উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.)’র স্ত্রী হজরত ফাতেমা বলেন, খলিফা রাষ্ট্রীয় কাজ শেষে বাড়িতে এসে সেজদায় নিজের মাথাকে লুঠিয়ে দিতেন, অঝোর ধারায় কেঁদে চলতেন এবং মুনাজাত করতেন। এভাবে এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। যখন ঘুম ভাঙতো তখন থেকে সারা রাত আবার এভাবেই কাটিয়ে দিতেন। ওজন্যই ওলীদ বিন সায়েব বলেন, আমি খলিফা উমর বিন আব্দুল আজিজের চেয়ে বেশি খোদাভীরু লোক কাউকে দেখিনি। (তারীখুর খুলাফা)
৬০. আতা বিন বিরাহ বলেন, হজরত উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.)’র স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আব্দুল মালিক আমাকে বলছেন, উমর বিন আব্দুল আজিজ ফিলাফত প্রাপ্ত হওয়ার পর ঘরে এসে জায়নামাজে বসে এমনভাবে কাঁদতে লাগলেন যে তার দাড়ি অশ্র“সিক্ত হয়ে উঠল। আমি আরজ করলাম, আমিরুল মু’মিনীন! আপনি এত কাঁদছেন কেন? তিনি জবাবে বললেন, ফাতেমা! আমার কাঁধে উম্মতে মোহাম্মদিয়ার বোঝা চাপানো হয়েছে। আমি সকল ক্ষুধার্ত, গরিব, মুমূর্ষ, বস্ত্রহীন, উৎপীড়িত, বন্ধি, মুসাফির, বৃদ্ধ, এতিমসহ পৃথিবীর সকল দুর্ভাগ্য লোকদের ভাগ্য নিয়ে ভাবছি। আর এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার প্রশ্নের জবাব যদি দিতে না পারি সে জন্য কাঁদছি। (তারীখুল খুলাফা)
৬১. আতা খুরাসানী (র.) বলেন, একবার হজরত উমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.) গোলামকে পানি গরম করে আনতে বললেন, গোলাম রাষ্ট্রীয় রন্ধনশালা থেকে পানি গরম করে আনলেন। খলিফা একথা জানতে পেরে রাষ্ট্রীয় রন্ধনশালায় জ্বালানী বাবদ এক দিরহাম প্রদান করেন। (তারীখুল খুলাফা)

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *