কুরআন ও হাদীসে কুরবানী

আমার প্রাণ চায় বন্ধুর বিরহে মরিবার তরে,
আমার মন চায় তব পায়ে প্রাণ সঁপিবারে-
সৃষ্টির আদিতে আমার ভাগ্যে তোমার প্রেম জড়াইয়া দিয়াছো
তোমার বিরহে ব্যথায় আমার চোখের রক্তে মুখ ধুইয়া যাইতেছে
আমার প্রতি মুহুর্তের কাজ হইতেছে তোমার প্রেমের স্মরণ করা।
তোমার বিরহে আমার ভগ্যে কেবল রাতের তারকা গণনা করিতে হয়-
আমার প্রাণের আকাশ তোমার গলি ছাড়া আর কোথাও নাই-
হে সমীরণ, তুমি আমার জন্য সেই আকাশের কিছু ধূলিকণা বহিয়া আনো
তোমার বিরহে আমার প্রাণ এতো ভরিয়া গিয়াছে
যে আমার প্রাণ এখন এই দেহ পিঞ্জর ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে চায়-
তোমার বিরহ আমার জন্য দুঃসহ হইয়া উঠিয়াছে ও মৃত্যুই এখন শ্রেয়-
তোমার বিচ্ছেদ অসহ্য হইয়া পড়িয়াছে এবং মৃত্যুই এখন বরণীয়।
হে ভোরের বাতাস, পবিত্র হাবীব স. এর দরগায় আমার
যে ওয়াসী তার মন প্রাণ তোমার পায়ে সঁপিয়া দিতে চায়।
আলোচ্য কবিতাটিতে রসুলনোমা সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী রহিমাহুল্লাহ খুব চমৎকার করে আবেগঘন ভাষায় কুরবানীর গভীর ও প্রকৃত মর্ম তুলে ধরেছেন। তাই বিষয়টি আমাদের গভীর ভাবে উপলব্ধি করার মতোও। ইখলাস, নিবিষ্টতা, প্রেমের তীব্রতা বা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে হলেও প্রেমাষ্পদকে পাওয়ার তীব্র ব্যকুলতা-এটাই কুরবানীর শিক্ষা।
আসছে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। এদিনে মানুষ বিধান মোতাবেক বিভিন্ন পশু আল্লাহর রাহে কুরবানী করবে। এদিনের কথাও একই। ইখলাসের সাথে কুরবানী করতে হবে। মহব্বতের সাথে কুরবানী দিতে হবে। এজন্য আল্লাহ ও রসুল কুরবানী বলতে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন, সেটা আগে অন্তত হৃদয়ঙ্গম করতেই হবে। তা নাহলে মহব্বত ও ত্যাগ আসবে কিভাবে? এজন্য আসুন, সংক্ষিপ্ত এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমরা জানতে চেষ্টা করি- কুরআন ও হাদীসে কুরবানী সম্পর্কে কি আলোচনা রয়েছে।
আল কুরআনে কুরবানি :
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ত্যাগ তিতিক্ষèা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। এতে অন্য কাউকে অংশিদার করা যাবে না। কেননা, জাহেলি যুগে এমনটিরই প্রচলন ছিল। যেমন, প্রতিমাকে সন্তুষ্ট করা, মসিবত দূর করা, জানের সদকা দেওয়া, শুধু রক্ত প্রবাহিত করা, আর গর্দান কাটা এগুলো ইসলামী শরিয়তের প্রবর্তিত কুরবানির লক্ষ ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।”১
তাই রাসূল সা. জাহিলিয়াতের যুগে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবাই এর সকল প্রথা-পদ্ধতিকে সমূলে উৎপাটন করে একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের লক্ষে কুরবানির প্রবর্তন করেছেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আপনার প্রভুর জন্য ঈদের নামায আদায় করুন ও কুরবানি করুন।”২
এখানে আল্লাহ পাক নামাযের সাথেই কুরবানির কথা উল্লেখ করেছেন।
কুরবানি সংক্রান্ত আয়াতে ইখলাছকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, কারণ কুরবানি মূলত আল্লাহ প্রদত্ত একটি মহা পরীক্ষা। এর মাধ্যমে কুরবানি দাতাদের হৃদয়ে তাকওয়া বা খোদাভীতি ও প্রভু প্রেমের সৃষ্টি হয়। সুতরাং কুরবানি হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই উদ্দেশ্যে। নিজ বা দুনিয়াবী কোন স্বার্থ এখানে থাকতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহর নিকট পৌছায়না এর গোশত ও রক্ত, পৌছে তোমাদের তাকওয়া।”৩
সুতরাং, অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, কুরবানির উদ্দেশ্যে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।”৪


আল হাদীসে কুরবানির গুরুত্ব :
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “হে লোক সকল!প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রতি বছর কুরবানি করা আবশ্যক।”৫
রাসূল সা. কখনোই কুরবানি ত্যাগ করতেন না। প্রতি বছরই তিনি কুরবানি দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল সা. মদিনা শরীফে ১০ বছর অবস্থান করেছেন। আর প্রতি বছরই কুরবানি দিয়েছেন। তন্মধ্যে স্বহস্তে ৬৩টি উট কুরবানি করেন। বাকিগুলো হযরত আলী রা. এর কাছে সোপর্দ করেছেন। এক সাথে এতগুলো উট কুরবানি করা কুরবানির ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে।৬
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “কুরবানির দিন কুরবানি করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহর নিকট আর নেই।”৭
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়।”৮
রাসূল সা. বলেন, আজ আমাদের প্রথম কাজ হলো নামায পড়া, তার পরের কর্তব্য হলো, কুরবানি করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমার তরিকার উপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বেই কুরবানি করল, তার কুরবানি শুদ্ধ হয়নি; বরং তার কুরবানি শুধু গোশত খাওয়ার জন্য হলো। সাওয়াবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ কুরবানি কী? তিনি বললেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা বলল, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময় একটি করে নেকী আছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কী তাই? জবাবে তিনি বলেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময় ও একটি করে নেকী আছে।”৯
কুরবানির ফযিলত সম্বন্ধে তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফে এসেছে, “হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, কুরবানির দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা প্রিয়তর হতে পারে। কুরবানির পশুসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। আর কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট তা পৌছে। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানি কর।”১০
হাদীস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানি আদায়ের নিয়তে কুরবানি করে। (কিয়ামতের দিন) তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।”১১
পরিশেষে বলা যায়, কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠিন পরীক্ষা। এটা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়। এতে সামান্যতমও ত্রুটি করা যাবে না। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পারে। সে বিভিন্ন হিংসা-বিদ্বেষ, লৌকিকতা থেকেও মুক্তি পায়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হযরত ইবরাহীম আ. এর মত দৃঢ় মনে কুরবানি করার তাওফিক দান করুক। আমিন।৫
রাসূল সা. কখনোই কুরবানি ত্যাগ করতেন না। প্রতি বছরই তিনি কুরবানি দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল সা. মদিনা শরীফে ১০ বছর অবস্থান করেছেন। আর প্রতি বছরই কুরবানি দিয়েছেন। তন্মধ্যে স্বহস্তে ৬৩টি উট কুরবানি করেন। বাকিগুলো হযরত আলী রা. এর কাছে সোপর্দ করেছেন। এক সাথে এতগুলো উট কুরবানি করা কুরবানির ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে।৬
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “কুরবানির দিন কুরবানি করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহর নিকট আর নেই।”৭
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়।”৮
রাসূল সা. বলেন, আজ আমাদের প্রথম কাজ হলো নামায পড়া, তার পরের কর্তব্য হলো, কুরবানি করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমার তরিকার উপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বেই কুরবানি করল, তার কুরবানি শুদ্ধ হয়নি; বরং তার কুরবানি শুধু গোশত খাওয়ার জন্য হলো। সাওয়াবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ কুরবানি কী? তিনি বললেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা বলল, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময় একটি করে নেকী আছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কী তাই? জবাবে তিনি বলেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময় ও একটি করে নেকী আছে।”৯
কুরবানির ফযিলত সম্বন্ধে তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফে এসেছে, “হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, কুরবানির দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা প্রিয়তর হতে পারে। কুরবানির পশুসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। আর কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট তা পৌছে। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানি কর।”১০
হাদীস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানি আদায়ের নিয়তে কুরবানি করে। (কিয়ামতের দিন) তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।”১১
পরিশেষে বলা যায়, কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠিন পরীক্ষা। এটা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়। এতে সামান্যতমও ত্রুটি করা যাবে না। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পারে। সে বিভিন্ন হিংসা-বিদ্বেষ, লৌকিকতা থেকেও মুক্তি পায়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হযরত ইবরাহীম আ. এর মত দৃঢ় মনে কুরবানি করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

তথ্যসূত্র :
১. সূরা আনয়াম, আয়াত-১৬২।
২. সূরা আল কাউসার, আয়াত-০২।
৩. সূরা হজ্জ, আয়াত-৩৭।
৪. সূরা হজ্জ, আয়াত-৩৬।
৫. মেশকাত।
৬. তারীখে কুরবানী, পৃষ্ঠা-২১।
৭. মেশকাত।
৮. মেশকাত।
৯. ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২২৬।
১০. তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৪৯৩।
১১. সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৪২২।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *