আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী র. : অন্ধকারে এক দীপ্ত আলোর মশাল

মানুষই আনিল এতো ধন-মান নিজ হাতে আহরিয়া
পারো কি আনিতে একটি মানুষ নিখিল বিত্ত দিয়া।
সকল মত ও পথের উর্ধ্বে উঠে পবিত্র ইসলাম ধর্মই মানুষের সর্বোত্তম পরিচয় দিয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি, মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। একটি মানুষ- একটি পরিবার, একটি জনপদ কিংবা একটি জাতির কর্ণধার হতে পারে। প্রত্যেক মানুষই তার নিজস্ব গণ্ডিতে মর্যাদাবান এবং অতীব প্রয়োজনীয়। আদম সন্তানের জন্যই আল্লাহ নদ-নদী পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগরের অপূর্ব সৌন্দর্য সাজিয়ে রেখেছেন সুন্দর এই বসুন্ধরা। এই সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য মানুষ ছুটে চলেছে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এ যেনো এক দুরন্ত নেশা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র আমাদের পরতে পরতে জাগায় শিহরণ। সুন্দর এই পৃথিবীতে সবাই বাঁচতে চায়। কিন্তু তা হয় না এবং হবেও না। তাইতো বিশ্বকবি বলেছেন-
মরিতে চাইনা আমি সুন্দর এ ভূবনে
মানবের মাঝে আমি বাচিবারে চাই,
এই সূর্য করে-এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।
বাংলা সাহিত্যে একটি কথা আছে যে, মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে। কথা ঠিক, তবে যে মানুষটির প্রায় শতবৎসরের জাজ্বল্যমান কর্মময় জীবনকে গলাটিপে হত্যা বা জিন্দা দাফন করা হয়, তখনও কি ঐ মানুষটি বেঁচে থাকেন তার কর্মের মধ্যে, না কি মারা যান? তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের ধর্মীয়, সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক-সামাজিক এবং শিক্ষাঙ্গনে এক অপরিহার্য নাম সুনামগঞ্জ। গণমানুষের চিত্তে, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পাশাপাশি ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় দিগন্তের ফোয়ারা বইয়ে দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জননন্দিত আলিম-উলামা, কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও আউল-বাউলগণ। সমাজ-সামাজিকতা এবং ধর্মীয় পরিমণ্ডলে এ অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাতন গ্রামের কৃতিসন্তান, ওলীয়ে কামিল আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। কারো সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে বা বলতে গেলে তার সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকতে হয়, ইতিহাসের কিংবদন্তি এই অমর ব্যক্তি সম্পর্কে আসলে কিছুই জানি না। সামান্য কিছু জেনেছি, এই জানাকে জানা বলা যাবে না। না জানার কারণ হচ্ছে এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ সম্পর্কে কেউ কিছু লিপিবদ্ধ করে রাখেনি! যা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায়? যেটুকু জেনেছি- ২০১৫ সালের মে মাসে সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের উজানীগাও গ্রামে (আমার খালার বাড়ী এবং সেই সুবাধে আমার বর্তমান অবস্থান এখানে হওয়ায়) এক শুক্রবার জুমুয়ার নামাজে যাই উজানীগাও জামে মসজিদে; নামাজ শেষে বাজারের দিকে যাচ্ছি। মসজিদ, মাদরাসা, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বাজার সবই পাশাপাশি। বিদ্যালয়ের গেইটে চোখ পড়তেই লেখা দেখি জয়কলস উজানীগাও রশিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাতা “আলহাজ্ব হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী”। একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা একজন হাফিজ সাহেব! এই প্রথম দেখলাম এবং অবাক হলাম! বিদ্যালয়ের বয়স হিসাব করলাম প্রায় নব্বই বছরের কাছাকাছি। ভাবলাম উনি কি জীবিত? এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলাম (বয়স ৪০ হবে) আপনি কি হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী সাহেবকে চিনেন? উনি বললেন না। আরেক মুরব্বী (বয়স আনুমানিক ৬৫ হবে) প্রশ্ন করলাম আপনার বাড়ী কি উজানীগাও? তিনি হ্যা সূচক উত্তর দিলেন। বললাম আপনি কি হাফিজ সাহেবকে চিনেন? তিনিও বললেন না। তবে তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, আমাদের গ্রামের প্রবীণ কোনো মুরব্বীকে জিজ্ঞেস করলে উনার সম্পর্কে জানতে পারবেন। কয়েকজনের নামও বলে দিয়েছিলেন। মনে খুব কষ্ট লাগলো যে, এরা কোন ধরণের মানুষ, যারা গ্রামের মানুষকে চিনে না! বাজারের দিকে গেলাম যদি কোনো মুরব্বীকে পাই, মনের মধ্যে আবার প্রশ্ন যে, চেনা নেই, জানা নেই, কোথাকার কোন মুরব্বীকে কোথায় গিয়ে খুঁজবো, আর কে কি ভাববে? এরচেয়ে না খুঁজাই ভালো। বাজারের অনেক আশ্চর্যজনক কীর্তি (!) শুনেছি আরো আগে থেকেই। জয়কলস বাজার নামেই পরিচিত এবং এক সময়ের বিখ্যাত বাজার ছিলো এটি। এখানে লঞ্চঘাট ছিলো। ভাটি অঞ্চলের কয়েক উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই লঞ্চঘাট। একসময় এখানে ঢাকা-চট্রগ্রাম, খুলনা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। কালের স্রোতে সবই বিলীন হয়ে গেছে! ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে, হাতে গোনা কয়েকটিমাত্র দোকান-ঘর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাজারটি। আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে জানার ইচ্ছা বেড়েই চলছে, কিন্তু উপর্যুক্ত তথ্য পাওয়ার মতো কোনো মানুষ পাচ্ছি না! পরে অনেক অনুসন্ধান এবং অনেক সাধনা আর অনেক মানুষকে বিরক্ত করার বদৌলতে জানতে পারি যে, আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বাড়ী আসলে উজানীগাও নয়! তাঁর বাড়ী সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাতন গ্রামে। একথা শুনে আরেকটু হতভম্ব হলাম আমি! পরে একদিন গেলাম গোলাপগঞ্জ। যদি কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ? তবে সন্ধান পেলাম তার ছোট ছেলে আতিক চৌধুরীর। তিনি আবার সিলেট শহরের বাসিন্দা, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি! মোবাইলে কথা হয়েছে। তার কাছে তার বাবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার বাবা অনেক বড় মাপের একজন আল্লাহর ওলী ছিলেন। যদিও বাবার কোনকিছুই আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি। বাবার ইন্তেকালের সময় আমি অনেক ছোট ছিলাম, তাই বেশী কিছু বলা যাবে না। তিনি কিছু মানুষের নাম-ঠিকানা দিলেন যোগাযোগ করার জন্য। সাধ্যমতো যোগাযোগ করার চেষ্টা করি এবং সব মিলিয়ে জানতে পারি যে, আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন কুতবুল আউলিয়া হজরত আবু ইউসুফ শাহ মুহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অন্যতম খলিফা। তার জন্ম ও শৈশবকাল সম্পর্কে অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। তিনি ভারতের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীন-ইসলামের খেদমত করেছেন। ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী শাহ আরেফিন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্মৃতি বিজড়িত টিলায় অনেকদিন অবস্থান করেছেন। তাঁর হাতে অনেক বিধর্মীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁর সর্বশেষ অবস্থান ছিলো সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উজানীগাও গ্রামে। তবে, মাঝেমধ্যে লাউগাং ও উমেদপুর গ্রামে অবস্থান করতেন। এসব এলাকায় প্রত্যেক রামাদ্বান মাসে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে তারাবীর নামাজ পড়াইতেন। বেশিরভাগ সময় থাকতেন উজানীগাও।

উজানীগাও কত সালে এসেছিলেন, তা কারো জানা নেই। আনুমানিক ১৮৬০/৬৫ সালের দিকে। তার আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক মানুষ মুরিদ হন তার কাছে। দ্বীন-ইসলামের খেদমতের পাশাপাশি তিনি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উজানীগাও জামে মসজিদ। (ইন্তেকালের পূর্বপর্যন্ত তিনিই ছিলেন এই মসজিদের মুতাওয়াল্লী)। তাই উজানীগাও-এর কিছু মানুষের কাছে তিনি এখনো মুতাওয়াল্লী সাহেব হিসাবেই পরিচিত। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন উজানীগাও মাদরাসা (তৎকালীন এম ই মাদরাসা, যখন অন্য ধর্মের মানুষও মাদরাসায় পড়ার সুযোগ ছিল)। সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছর, ১৯২৬ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত মাদরাসা চলার পর হঠাৎ একদিন তিনি বললেন যে, এই মাদরাসাকে আর মাদরাসা রাখা যাবে না, এটাকে বিদ্যালয় করে ফেলা উচিত! (বলতে গেলে এটা উনার একটি জীবন্ত কারামত) যেহেতু প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই তার হাতে, এমনকি তিনি নিজে জায়গা ক্রয় করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাই এখানে কারো হস্তক্ষেপ ছিলোনা। এজন্য মাদরাসা থেকে বিদ্যালয় করে গেছেন। বিশেষ করে একটি মাদরাসা ২৬ বছর চলার পর বিদ্যালয় হওয়ার কাহিনী আমার জানামতে এটাই প্রথম! ১৯৫১ সালে নামকরণ করা হয় জয়কলস জুনিয়র বিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালে করা হয় (উনার নামানুসারে) আজকের “জয়কলস উজানীগাও রশিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়”। সবদিক থেকে এই বিদ্যালয় সুনামগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এবং শুনেছি বর্তমানে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ সরকারীকরণ হয়ে গেছে। একসময় আশেপাশে যখন আর কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ছিলনা, তখন ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো। বর্তমান ছাত্র/ছাত্রী ৯০০ এবং শিক্ষক ১৫ জন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী এমনকি শিক্ষকরাও জানেন না, প্রতিষ্ঠাতার পরিচয়! যা নিমকহারাম জাতি হিসাবে আমাদের সামনে আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল! তবে তাদেরকে দোষারোপ করা যাবে না। কারণ তাদেরকে জানানো হয়নি। পূর্বপুরুষরা যেখানে জানেন না, উত্তরসূরীরা না জানাটাই স্বাভাবিক? তাইতো কবি বলেছেন-
“কেহ কি তোমার মহিমার লাগি করেছিল ত্যাগ উত্তোলন,
বিকল তোমার সৃষ্টি যন্ত্রে বাধিল নিয়মে কোন সে জন।
তব নাম লয়ে যুগিয়াছি আমি একা মুসলিম অমিত বল,
কখনো ভুতলে মেতেছি সমরে আলোড়িয়া কভু সিন্ধুজল।
ধর্মযাজক বিশ্বাসহীন ধর্মে নাহিক আস্থা হায়,
বিদ্যুৎ সম নাহি সে স্বভাব-নাহি উষ্ণতা বক্তৃতায়।
বেঁচে আছে শুধু আজানের প্রথা কোথা সে বেলাল ভক্তিমান,
দর্শন আজই পুথির বিধান গাজ্জালীর নেই সেই শিক্ষাদান।
এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র/ছাত্রী, মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ দেশ-বিদেশে সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। মাদরাসাকে বিদ্যালয় করার পিছনে আমি নিশ্চিত যে, লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলেন! উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ্য যে, উনার মেঝ ছেলে হাফিজ মাওলানা রফিক আহমদ চৌধুরী ১৯৯০ সালে উনার নামে (উজানীগাও রশিদিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা) একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শুরু থেকে প্রায় চার বছর মাদরাসা ভালোই চলছিল। তিনজন ছাত্র হাফিজও হয়েছিলেন। অদৃশ্য কারণ বশতঃ ১৯৯৪ সালে মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ পঁচিশ বছর যাবত মাদরাসাটি বন্ধই আছে। উনার পরিবারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পরও মাদরাসাটি কেন যে চালু হচ্ছে না, তা আল্লাহ মালুম! শুনেছি মাদরাসা পরিচালনা কমিটিও নাকি আছে, জানিনা ঐ বন্ধ মাদরাসায় তারা কি পরিচালনা করেন? হজরত বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী বলেছিলেন যে, এলাকার লোকজনকে নিয়ে মাদরাসাটি যেন চালু করার ব্যবস্থা করি। মাদরাসাটি চালু করতে আমি চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি এবং আমার এই ব্যর্থতার মধ্যে বিশাল এক সফলতা নিহিত আছে! সাক্ষী আছেন উজানীগাও গ্রামের গণ্যমান্য কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ। এক মুরব্বীর কাছে শুনেছি যে, আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আমন্ত্রণে উনার পীর ও মুরশিদ হজরত ইয়াকুব বদরপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহিও উজানীগাও এসেছিলেন এবং শামসুল উলামা হজরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিও কয়েকবার এসেছিলেন। ইতিহাসের কিংবদন্তী এই মহামানব ১৯৫৩ ইংরেজি ১৩৫৯ বাংলার পাঁচই মাঘ মহান রব-এর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমান পরপারে। উনার ইন্তেকালও ছিল একটি কারামত, (উল্লেখ্য যে উনার কারামত সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে বৃহৎ একটি বই লেখা যাবে অনায়াসে)। তার ছোট ছেলে আতিক চৌধুরী বলেছেন- বার্ধক্যজনিত কারণে উনাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ‘মেডিকেল বোর্ড গঠন’ করেও উনার কোনো রোগ ধরা পড়েনি। ১৩ই মাঘ উনার ভাতিজা হাবিবুর রহমান উনাকে দেখতে গেছেন ঢাকায়, ফিরে আসার পথে ভাতিজাকে বলে দিয়েছেন যে, তোমার সাথে এটাই আমার শেষ দেখা, আর কোনোদিন দেখা হবে না। আমি ১৫ই মাঘ বুধবার চলে যাবো। আল্লাহর কি কুদরত! ঠিকই ১৫ই মাঘ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাতিজার সাথে আর দেখা হয়নি কোনদিন! মহান এই আল্লাহর ওলীকে নিয়ে আসা হয় তার জন্মভূমি গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাতন গ্রামে। নিজ বাড়ীর আঙিনায় মসজিদের পাশে (সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নিকটবর্তী) তাকে দাফন করা হয়। এ যেন জাতীয় কবির সেই অমর বাণী-
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই,
যেন ঘোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
পারিবারিকভাবে ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ এবং ৪ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। আল্লামা হাফিজ আব্দুর রশিদ চৌধুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি যদিও আজ আমাদের মাঝে নেই। উনার পরিচয়টা জাতির কাছে তুলে ধরতে আমরা করেছি চুড়ান্ত অবহেলা আর গাফলতি? তবে, তিনি থাকবেন অনন্তকাল চির ভাস্বর হয়ে, তার প্রতিষ্ঠিত উজানীগাও জামে মসজিদ এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিটি বালুকণায় মিশে। প্রতিবছর ১৫ই মাঘ তাঁর বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে পালিত হয় তাঁরই ঈসালে সাওয়াব মাহফিল।
ইতিহাসের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি প্রায় তিন বছর যাবত। যাদের কাছে গিয়েছি তারা অনেকেই না জানলেও দোয়া করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে। পক্ষান্তরে কিছু মানুষ ভেবেছেন যে, না জানি এখানে আমার কোন স্বার্থ! এ যেন এক ইতিহাসের বিরুদ্ধে আরেক ইতিহাসের জবানবন্দী! বিশ্বকবি যে বলেছিলেন-
সাত কোটি সন্তানের হে- মুগ্ধ জননী,
রেখেছ গণতন্ত্রী করিয়া মানুষ করোনি।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *