বিজয়-কেতন

রাকিব সাহেব তাঁর স্ত্রী আর ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে রাতের খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়লেন। গভীর রাত, হঠাৎ দরজায় করাঘাতের শব্দে ঘুম ভাঙলো রাকিব সাহেবের পুত্র এনামুলের। সে ভয়ে শঙ্কিত হয়ে বাবাকে ডেকে তুললো। রাকিব সাহেব ধীরে ধীরে দরজা খুলতেই তড়িঘড়ি ঘরে ঢুকলো দুইজন পুরুষ। যাদের গায়ে ছিল হালকা পোষাক আর হাতে ছিল বন্দুক। তারা খুব ক্লান্তিমাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে মাটিতে বসলো। অতঃপর রাকিব সাহেবের কাছে একটু খাবার চাইল। এতক্ষণে রাকিব সাহেব বুঝতে পারলেন ইনারা পাকিস্তানিদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত সৈনিক। তিনি তার স্ত্রীকে তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করার জন্য বললেন। রাকিব সাহেব মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য। ইনারা খাবার সেরেই যখন বেরিয়ে যেতে চাইল তখন রাকিব সাহেবও তাদের সাথে যেতে চাইলেন। তারা সহমত দিল। রাকিব সাহেব তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছোট্ট দুই সন্তান এনামুল আর রিমার কপালে চুম্বন এঁকে দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় নিলেন।
দিন যায় মাস যায়, এনামুল তার বাবার অপেক্ষায় নিত্য মায়ের কাছে জানতে চায়, ‘বাবা কোথায় গেছেন? কখন ফিরে আসবেন?’
কিন্তু মায়ের মুখ স্তব্ধ থাকে!
এদিকে রাকিব সাহেব দেশের তরে লড়ছেন প্রাণপণে। তারা কয়েকজন সৈন্য মিলে একটি দল গঠন করে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তারা কোনোমতে কিছু খেয়ে বেঁচে আছেন আর দেহের সর্বশেষ শক্তি দিয়ে মিলিটারিদের প্রতিরোধ করছেন। মাঝে মধ্যে কয়েকজন আহত হচ্ছেন আবার কখনো কেউ শহীদ হয়ে যাচ্ছেন। দেশের জন্য তারা নিজেদের জীবনকে বাজী রেখেছেন।


একে একে পেরিয়ে গেলো দীর্ঘ নয়টি মাস। একদিন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা রাকিব সাহেবের লাশ নিয়ে এলেন তার বাড়িতে। রাকিব সাহেবের স্ত্রী-সন্তান পাথরের মতো হয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো শহীদ রাকিব সাহেবের লাশের পাশে। এনামুল অশ্রুসিক্ত আঁখিতে তাকিয়ে দেখলো পথে পথে সবাই মুক্তমনে স্লোগান তুলছে “জয় বাংলা,জয় বাংলা”। আর হাতে হাতে মুক্ত বেশে উড়ছে লাল সবুজে অঙ্কিত কাক্সিক্ষত সেই… “বিজয়-কেতন!

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *