গল্পকথায় বাস্তবতা

অহংকারের পরিণাম
মানুষ সৃষ্টি আগে পৃথিবীতে জ্বিন জাতির বসবাস ছিল। একসময় তারা আল্লাহকে ভুলে অনাচারে লিপ্ত হল। তাদের নির্মূল করার জন্য আল্লাহপাক ফিরিশতাদের পাঠালেন। সবশেষে দেখা গেল একটা বাচ্ছা জ্বিন বেঁচে আছে। তার নাম আযাযিল। আরেক নাম ইবলিস। ফিরিশতাদের মায়া হল। তাকে মারলেন না। আল্লাহর কাছে আবেদন জানালে তাকে ফিরিশতাদের দলভুক্ত করে দিলেন। তার ইবাদত বন্দেগিতে খুশি হয়ে আল্লাহ পাক ফিরিশতাদের শিক্ষক বানিয়ে দিলেন।
আল্লাহপাক আদম (আ.) কে বানালেন। জান্নাত রাখলেন। সবকিছুর নাম শিক্ষা দিলেন। শ্রেষ্টত্বের মর্যাদা দিলেন। আল্লাহ তা‘লা ফিরিশতাদের আদেশ দিলেন : ‘আদমকে সিজদা করো।’ সকল ফিরিশতা সিজদা করলেন। কিন্তু ইবলিস সিজদা করলো না। তার মনে অহংকার। সে আগুনের তৈরি। আর আদম মাটির তৈরি। সে নিজেকে শ্রেষ্ট মনে করলো।
অহংকার পতনের মূল। অহংকারে সে আল্লাহর আদেশ মানলো না। আল্লাহপাক তাকে ফিরিশতাদের দল থেকে তাড়িয়ে দিলেন। জান্নাত থেকেও বের করে দিলেন। সে হলো অভিশপ্ত শয়তান।
হযরত আদম (আ.) কে সম্মান না করায় তার সকল মর্যাদা নষ্ট হলো। জান্নাত থেকে চিরতরে বিতাড়িত হল। সে শপথ করলো, মানুষকে জান্নাতের পথ থেকে সরাবে। জাহান্নামে নেবার চেষ্টা করবে। তাই শয়তান মানুষের বড় শত্র“্
যারা আল্লাহর পথে চলবে, তারা জান্নাত যাবে। আর যারা শয়তানের পথে চলবে তারা জাহান্নামে যাবে। আমরা বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই ।
আল্লাহপাক সৃষ্টিকুলে একজন প্রভু
কোন অহংকারীকে ভালবাসেন না কভু।

হাতিবাহিনী ও আবাবিল
বায়তুল্লাহ মানে আল্লাহর ঘর। বায়তুল্লাহার আরেক নাম কাবা শরীফ। বায়তুল্লাহর অবস্থান মক্কা শরীফে। দুনিয়ার মানূষ হজ্ব করতে মক্কায় যান। বায়তুল্লাহ তওয়াফ করেন।
ইয়েমেনের গভর্ণর আবরাহা একখানা সুদৃশ্য গীর্জা তৈরি করলো। বায়তুল্লাহর পরিবর্তে তার গীর্জায় যাওয়ার জন্য মানুষকে জানানো হলো। তার উদ্দেশ্য সফল হলো না। তার মনে হলো মক্কার ঘর থাকলে কেউ তার ঘরে আসবেনা। তাই সে আল্লাহর ঘর ধ্বংস করতে চাইলো।
আবরাহা বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মক্কায় উপস্থিত হলো। তার বাহিনীতে হাতিও ছিলো। তাদের মুকাবিলা করার মতো শক্তি মক্কার লোকদের ছিলো না। লোকজন ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেলো।
কাবার খাদিম হযরত আব্দুল মুত্তাবিলব। কাবার গিলাফে ধরে কেঁদে কেঁদে দুআ করলেন: হে আল্লাহ, আপনার ঘর আপনি রক্ষা করুন।
আবরাহা তার হাতি বাহিনীকে কা‘বা ঘর ভাঙ্গতে পাঠালো। এদিকে আল্লাহ তায়ালা পাঠালেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। ছোট ছোট পাখি । আবাবিল। তারা ঠোঁটে ও পায়ে করে ছোট ছোট পাথর (কংকর) নিয়ে আসলো। পাখিদের কংকর নিক্ষেপে আবরাহার সৈন্য হাতি একেবারে ধ্বংসা হয়ে গেলো। ধ্বংস হলো আবরাহা। আল্লাহর ঘর টিকে রইলো। টিকে থাবে কিয়ামত পর্যন্ত।

নমরুদ ও মশাবাহিনী
আল্লাহ তায়ালা নমরুদকে সমগ্র দুনয়ার বাদশাহী দান করেছিলেন। কিন্তু সে আল্লাহকে ভুলে মূর্তি পূজায় লিপ্ত হল। তাকে হেদায়াতের জন্য আল্লাহপাক হযরত ইব্রাহীম (আ.) মকে পাঠালেন। তিনি নমরুদকে এক আল্লাহর উপর ঈমনা আনতে ও তাঁর ইবাদত করতে বললেন। সে মানলোনা। সে ইব্রাহীম (আ.) কে মেরে ফেলতে চাইলো।
সে বিরাট অগ্নিকুন্ড তৈরি করলো। ইব্রাহিম (আ.) কে সে অগ্নিকুন্ডে ফেলে দিলো। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে আগুন তাঁর কোন ক্ষতি করলো না। তিনি সুস্থ অবস্থায় বের হয়ে এলেন।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) নমরুদকে আবার আল্লাহর কথা শুনালেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সে কথা শুনলো না। সে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে চাইলো। একদিন সে ময়দানে সৈন্য সমাবেশ করলো।
আল্লাহপাক পাঠালেন মশাবাহিনী। পাহাড় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে মশা বেরিয়ে এলো। ছড়িয়ে পড়লো যুদ্ধের ময়দানে। নমরুদের লোকলস্কর, হাতি-ঘোড়া সবকে কামড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুললো। যে যেদিকে পারলো পালিয়ে জান বাচালো।
একটা মশা নমরুদের নাকের ভেতর দিয়ে মগজে পৌছে গেলো। মশা দেয় কামড়। নমরুদ দেয় লাফ। বাপরে বাপ। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তার জন্য একটা চিকিৎসার ব্যবস্থা হলো। মাথায় জুতা-পেটা করা। এ কাজে চাকর বাকরতো ছিলই। যে তোকে দেখতে আসতো, সেও জুতা-পেটা করতো। একদিন একলোক খুব জোরে দিলো জুতার বাড়ি। মাথা ফেটে নমরুদ গেলো মরে। আর মশা গেলো উড়ে।

নূহের কিশতি
হযরত নূহ (আ.) ছিলেন প্রথম রাসুল। তিনি সাড়ে নয়শ বছর ইসলামের দাওয়াত দিলেন। মাত্র চল্লিশজন লোক ঈমান আনলো। বাকিরা কাফির রয়ে গেল। কাফিররা রাসুলকে নানাভবে কষ্ট দিতো। ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো। মুমিনদেরকে জ্বালাতন করতো। অবশেষে তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলেন কাফিরদের শাস্তির জন্য। দুআ কবুল হলো।
আল্লাহ তায়ালা নূহ (আ.) কে নৌকা তৈরির আদেশ দিলেন। অনেক বড় একখান নৌকা তৈরি হলো। জাহাজও বলতে পারো। মরুভুমির দেশে নৌকা কোন কাজে লাগে? কাফিরদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ চরমে পৌছলো। নূহের কিশতিকে তারাগণ শৌচাগার বানিয়ে ফেললো।
একদিন এক অন্ধ গেলো পায়খানা করতে। পা পিছলে নৌকার ভেতর পড়ে গেলো। পায়খানার ডুবে একাকার হয়ে যখন উঠলো, তার চোখ তখন ভালো হয়ে গেছে। ঘটনা জানাজানি হলে, যত রোগী ছিলো সবাই ছুটলো নৌকার উদ্দেশ্যে যে যার ঘটিবাটি করে যেভাবে পারলো সংগ্রহ করলো তাদেরই মলমূত্র। একসময় সাফ হয়ে গেলো সব। পরে যারা আসলো তারা ধুয়ে মুছে নৌকাকে ঝকঝকে তকতকে করে ফেললো।
অতঃপর কাফিরদের শাস্তির সময় আসলো। আল্লাহপাক তাঁর রাসূলকে জানালেন। তিনি ঈমানদারদের নিয়ে জাহাজে ঊঠলেন। সব জীবজন্তু একজোড়া করে আর বৃক্ষলতা, ফলমূল শষ্যবীজও সাথে নিলেন।
মাটির নিচ থেকে পানি উঠতে লাগলো। আকাশ থেকে তুমুল বৃষ্টি নামলো। দেখতে দেখতে বন্যা হয়ে গেলো। এমন বন্যা কেউ আগে দেখেনি, পরেও দেখবেনা। যাকে বলে মহাপ্লাবন। সাথে ঝড় তুফান।
মুমিনদের নিয়ে তরী ভাসরো। বড় বড় ঢেউয়ে হাবুডুবু খেতে খেতে তলিয়ে গেল অবিশ্বসাীরা। নূহ (আ.) এর এক ছেলে ছিল অবিশ্বাসীর দলে। সে ও ডুবে মরলো। কারো চিহ্ন পর্যন্ত রইলো না আর। নৌকার আরোহী ছাড়া আর কোন জনপ্রাণী বেঁচে রইলো না। পাপ তাপ অনাচারে সকল আবর্জনা ধুয়ে মুছে পবিত্র হলো পৃথিবী।
পাহাড় পর্বত সব ডুবে একাকার। হেলে দুলে অথৈ পানিতে ভাসতে ভাসতে চল্লিশদিন পর কিশতি ঠেকলো জুদি পাহাড়ে। হযরত নূহ (আ.) সঙ্গীদের নিয়ে নেমে এলেন মাটিতে। পৃথিবীতে আবার নতুনভাবে শুরু হলো মানব বসতি।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *