কবিতা তার কাব্যরস হারাচ্ছে

দিন যত পেরুচ্ছে কবিতা যেন তার ভেতরে থাকা কাব্যরসগুলো একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে। একটা সময় ছিল যখন কবিতা পড়লে অন্যরকম একটা প্রশান্তি পাওয়া যেত, কবিতার মাঝে হারিয়ে যাওয়া যেত, কবিতার প্রেমে পড়া যেত। কিন্তু আজ এক একটা বিরক্তিকর কাব্য যেন খুবলে খায় হৃৎপিণ্ড, কোথায় হারালো সে কাব্যরস, কোথায় খুঁজবো তারে! উত্তর অজানা।
আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে আমি যতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি তাতে আমার মনে হয় আমাদের ব্যাপক তাড়াহুড়া এর জন্য অনেকটাই দায়ী। আমরা ধৈর্য ধরতে ভুলে গেছি, আমরা মনের আকুতি গুলো কলমের কালিতে ফুটিয়ে তুলতে ভুলে গেছি, আমরা নিজের মনের কথাগুলো নিজের জন্য লিখতে ভুলে গেছি। আমাকে লিখতে হবে, রোজই কিছু না কিছু লিখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড দিতে হবে, বস্তার পর বস্তা লাইক কমেন্ট করতে হবে, আমি কি লিখছি তাতে কাব্যরস থাকুক বা না থাকুক, পড়ে কেউ মজা পাক বা না পাক, মুঠোয় মুঠোয় লাইক পাচ্ছি, দায়সারা বস্তাপঁচা কমেন্টগুলো তো পাচ্ছি, ব্যাস আমি হয়ে গেছি সেলিব্রেটি, যাই লিখিনা কেন-কই কেউ তো বলে না আমি খারাপ লিখছি! আমি এখানে ভুল লিখেছি! কই কেউতো শুধরে দিতে আসে না! তাহলে আমি তো ভালই লিখি। এত লোক কি আমায় মিথ্যে বলবে! কবিতা তার মিষ্টি স্বাদগুলো এভাবেই হারায়।
আমাদের ধৈর্যটা অনেক কমে গেছে, আমরা লিখে তা কিছুদিন রেখে দিতে ভুলে গেছি, লিখার সাথে সাথেই তা পোস্ট করতে হবে, এ ধরনের মানসিকতা অনেকটা দায়ী, কোন লেখা লিখার পড়ে কিছুদিন রেখে দিলে তারপরে সেটা নিজেরই যদি পড়া হয়, তাহলে কোথায় কোথায় ত্র“টি রয়ে গেছে তা নিজেই বোঝা যায়, ঠিক করার সুযোগ থাকে, নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে, কবিতাটাকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকে।
আসলে কবিতাগুলো আগের মত শ্র“তিমধুর হয় না, এত ভালো কবি তার দোষ গুলো ধরব এই ধরনের মানসিকতা থেকে কাছের মানুষগুলোর ভুলগুলো ঠিক করে দেয়া হয় না, আমি তো লিখতেই পারিনা ও তো তাও লিখছে সেখানে আমি কি ভুল ধরব, এ মানসিকতাটাও অনেক বড় অন্তরায়। কবিতার স্বাদ বুঝতে হলে কবিই যে হতে হবে এমন কোন কথা নেই। পাঠক হওয়াটাই যথেষ্ট। কিংবা আমার কি দায় পড়েছে অন্যের লেখা ঠিক করে দেবার, অন্যের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার! এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাহলেই আবার হয়তো আমরা ফিরে পাবো সেই আগের মতন কবিতার মাঝে কাব্যরস।

Comments

comments

About

Check Also

বিয়োগের মিছিলে আর এক নাম হযরত মাওলানা মুফতী রফীকুল ইসলাম রহ.

সূচনা০৩ মার্চ ২০২০। মঙ্গলবার। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টা। আমি ৮ম শ্রেণির ০৩ জন ছাত্রকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *