একটি হৃদয়ছোঁয়া বুক রিভিউ :‘আশিক কাঁদে দীদার পেতে’

‘তোমরা কান্নাকাটি করো। কাঁদতে যদি না পারো, তো কান্নার ভান করো।’
ইবনে মাজা’র যুহদ অধ্যায়টি খুলে দেখলেই পাবেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসটি জ¦লজ¦ল করছে।
আপনি কি জানেন, এই হাদীসটি নবীজীর ‘জামেউল কালাম’ এর অর্ন্তভূক্ত! অর্থাৎ নবীজী হাজার কথাকে একটি কথায় প্রকাশ করেছেন।
আপনি কি অনুভব করতে পেরেছেন যে, এই হাদীসটি আমাদের জন্য কত বড় সান্তনা! কত বড় পাথেয়!
আল্লাহ যেন বলছেন, আমার নেক বান্দারা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় আমার আযাবের ভয়ে, আমার রহমতের আশায় ঝর্ণা বহায়! তোমার হে বান্দা, সে তাওফীক হয় না। তোমার বুকে কান্না জমে না! তোমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে না! শক্ত তোমার দিল! মুরদা তোমার কলব! অনুভূতিহীন তোমার হৃদয়! তবু হে বান্দা, তেমাকে আমি ভাসিয়ে নিতে চাই। এক কাজ করো; কাঁদতে পারো না, তো কান্নার ভান করো। কাঁদতে পারে না সবাই; কান্নার ভান করতে কে না পারে! তাতেই আমি খুশী হবো, তোমার ভান দেখেই আমার দান নেমে আসবে। কান্নার ভান কেউ পছন্দ করে না, আমি করি।
আগেই বলেছি, প্রিয় নবীজী হাজার কথাকে এক কথাতেই প্রকাশ করে ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। তিনি জানেন, এর বেশী বলার প্রয়োজন হবে না। এরপরেরটুকু আমার উম্মতের মধ্য থেকে কেউ না কেউ সম্মুখে আনবে।
হ্যাঁ, তিনি ঠিকই বলেছেন। আমিও তো তাঁর উম্মত। তাই হাজার কথার সেই কথাগুলোর একটা আমি (নবীজীর উক্ত হাদীসের আদলে) বলতে চাই-
‘তোমরা প্রেম করো, ভালোবাসো। ভালোবাসতে না পারো; ভালোবাসার ভান করো।’
ওদিকে আবার কুরআন পাকে আল্লাহ ফরমায়েছেন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে (মুহাম্মাদ স. কে) অনুসরণ করো।
নবীজী যেন বলছেন, আমার মুখলিস উম্মতেরা তো আমার প্রেমে ভাস্বর হয়ে আছে, আমার মহব্বতে তাদের হৃদয় দেওয়ানা হয়ে আছে। তোমার হে উম্মত, সে প্রেম নসীব হয় না। শক্ত তোমার দিল! মুরদা তোমার কলব! অনুভূতিহীন তোমার হৃদয়! তবু হে উম্মত, তোমাকেও আমি নবী ভালোবাসতে চাই। ইশকের জোয়ারে তোমাকেও কাছে আনতে চাই। এক কাজ করো; ভালোবাসতে পারো না, তো ভালোবাসার ভান করো। ভালোবাসতে পারে না সবাই, কিন্তু ভালোবাসার ভান কে না পারে! তাতেই আমি খুশী হবো। তোমার ভান দেখেই আমার দান নেমে আসবে, আমার মমতা ছুঁয়ে যাবে। ভালোবাসার ভান কেউ পছন্দ করে না, আমি করি।
-তাহলে কি বুঝা গেলো হে পাঠক! এখনো কি ভাবতে পেরেছেন যে, নবীজীর ওই হাদীসটি আমাদের মতো অধমদের জন্য কত বড় সান্তনা!

যে কথা বলার জন্য এতো কথা পড়ার জন্য আপনাকে বাধ্য করলাম হে আমার লেখার পাঠক! তার মূল বিষয়বস্তু হলো, প্রিয় ভাই নাতের রাজা কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন রচিত “আশিক কাঁদে দীদার পেতে” কাব্যখানা।
আমাদের এই প্রিয়ভাই চেয়েছিলেন ঠিক এমনই। অর্থাৎ আমি প্রেমিক না হতে পারি, প্রেমের ভান তো অবশ্যই ধরতে পারি।
জগতের কত কত উম্মত প্রেমিক সেজে সফল হয়েছে; কিন্তু আমার সে তাওফীক হয় না। হে নবী! আমি আপনার এতোটাই পর নাকি? ভাগ্যিস, আপনার এই হাদীসটাই আজ আমার অসহায়-সম্বল। তাই আমি প্রেমিক না হতে পারি, প্রেমের ভান অবশ্যই ধরতে পারি।
কত মানুষ তোমার প্রেমে ডুবে গিয়ে কত কবিতা গান লিখেছে, অত:পর তারা সফল হয়েছে। কবিতা গান লেখার প্রাপ্তিতে তার বিভোর হয়েছে। প্রিয় মুবীন ভাই এ কাব্যখানা লিখে- আমার বিশ^াস, সে কামনাটিই করেছেন। আমার এও বিশ^াস, সুফল প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়েছেন তিনিও। আহা! সে আনন্দ, সে সুখ কতই না অনাবিল…
যুগে যুগে সূফী শায়েরদের কবিতা ঘাটলে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান হবেই যে, অধিকাংশ সূফী শায়েরগণ কবিতা রচনা করে কিংবা কবিতা গেয়ে প্রিয় নবীজীর কদম পাকে ইশক অর্পণ করেছেন। অত:পর নিজেদের শরীরে এর রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন।
যে প্রেম শরীর ভেদ করে, তা স্বার্থের প্রেম, ক্ষণিকের প্রেম। সেই প্রেম হলো সুখে বিপরীতে অসুখের, সেই প্রেম হলো শান্তির বিপরীতে অশান্তির, সে প্রেম হলো স্বস্তির বিপরীতে অস্বস্তির। অতএব সেই প্রেমই খাঁটি, সেই প্রেমই প্রশান্তির, সেই প্রেমই স্বস্তির- যা অন্তর ভেদ করে।
কবিতা হলো সেই প্রেম প্রকাশের, সেই প্রেম নিবেদনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু কবিতা যদি কলমের ডগা দিয়ে বের হয়, তাহলে সন্দেহ নেই সেই প্রেম ফেক। আর যদি অন্তর ভেদ করে বের হয়, তাহলে তা স্বার্থক, পরিপূর্ণ।
কিন্তু দুনিয়ার বুকে একমাত্র রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেম এমনই, যা অন্তর থেকে নি:সারিত হয়। কারণ এ প্রেম ফেক হতে পারে না। এ প্রেম এমনই, যাতে সবাই সমানসমান ভাগ বসাতে পারে। কেউ কারো প্রতি হিংসা রাখে না। সকলেই চায় নবীজীকে ভালোবেসে স্বর্গে উঠবে।
যাই হোক, কথা আর বাড়াচ্ছিনা। প্রিয় ভাই কবি রফীকুল ইসলাম মুবীনের সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “আশিক কাঁদে দীদার পেতে”- এর প্রত্যেকটি কবিতাই তার অন্তর থেকে নি:সারিত। বইটি আমি পড়েছি। বেশীরভাগ কবিতাই বারবার পড়েছি। কিছু কিছু কবিতা সুর তৈরী করে পড়েছি।
প্রিয় পাঠক! আপনাদেরকে বোঝানোর জন্য, কিংবা আকর্ষণ করার জন্য বইয়ের কয়টা পংক্তি তুলে ধরবো! শুধুই কলেবর বাড়বে। তারচে আপনিই পড়ে দেখেন, ঐশী ধ্যানে ডুবতে সাহায্য করে কিনা! আপনার দীলে নিখাঁদ প্রেমের অংকুর হয় কিনা!
আর হ্যাঁ পাঠক! এই বইখানা পড়বেন, শর্ত আছে। সেই শর্তের আদলে যদি পড়তে পারেন, তাহলেই পাঠ-রস উপভোগ করতে পারবেন; নচেৎ নয়। হয়তো বলবেন, পড়বো; শর্ত লাগবে কেন? -আরে ভাই! ক্ষ্যান্ত হোন। ভয় নেই। আমার বলা শেষ করতে দেবেন তো! শর্তটা তেমন কিছু না। মূলত: বলতে চাচ্ছি,
-আপনি যে এই বইখানা পড়বেন, এর জন্য লাগবে হৃদয়; ভেজা হৃদয়। লাগবে আপনার আবেগ; আর্দ্র আবেগ।
শক্ত শুকনো মাটিতে গাছ লাগায়ে (রোপণ করে) কি আপনি কখনো শান্ত থেকেছেন! কখনো কি দেখেছেন, শক্ত শুকনো মাটি শুধুমাত্র কুপিঁয়েই ধানের বীজ সরাসরি বপন করেছে! না, কখনোই দেখেন নি। বরং এমনটি যে করবে, তাকে আপনি পাগল বলবেন।
পাঠক! বুঝতে পেরেছেন মনে হয় আমার কথা! কাব্যখানা পড়তে গেলে একটি ভেজা হৃদয় নিয়ে আপনাকে পড়তে হবে, নইলে আমি কিন্তু আপনাকে পাগল বলে ফেলবো। এই কাব্যগ্রন্থের কয়টা পংক্তি পড়েই দেখুন-
১.
ও নামের দুরুদ জপে পাই যে কত শান্তি
ও নামের উছিলাতে দূর হয়ে যায় ভুল ভ্রান্তি
ও নামের স্মরণেতে খুলে যায় মনের তালা
প্রিয় নাম মুহাম্মাদ গলার মালা…
২.
চেপে রয়েছে দীলে কত যাতনা
তুমি জানো অভাগার সব বেদনা
দয়ার সাগর নবী দয়া করো
না হয় আমি শুদু কাঁদবো।
যতদিন তোমায় না পাবো…
৩.
নদী তুমি কোন মোহনায় চলছো নিরবধি
একটু দাঁড়াও তোমার কাছে করছি মিনতি
তোমার ¯্রােতের সাথে আমার যাও নিয়ে সুদূরে
যেন ঐ মদীনার বন্দরে মোর তরীটা ভীড়ে…
৪.
কষ্টে ভরা এই জীবনে পাইনি সুখের দেখা
তোমায় পেলে বদলে যাবে আমার ভাগ্য রেখা
তুমিহীন এই হৃদয় বাগে খুশবো রাঙে না…

পাঠক! কি চমৎকার- অন্তর নি:সারিত এই কথামালা। এগুলো পড়লে এমনিতেই শুকনো হৃদয় ভিজে যায়। কাব্যখানা পড়া আপনার জন্য একারণেই জরুরী যেন আপনার জীবনখানা প্রশান্তির হয়, আপনার হৃদয়খানা প্রাণবন্ত হয়, উপভোগ্য হয়, তৃপ্তির হয়, সুখের হয়।
আরে ভাই! প্রেম তো সুখ পাওয়ার জন্যই। প্রশান্তির হাতছানি তো প্রেমেই। প্রেম ছাড়া জিকির করা যায়! প্রেম ছাড়া কাউকে স্মরণ করে মজা পাওয়া যায়?
‘আশিক কাঁদে দীদার পেতে’ বইটি প্রকাশ করেছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ঘাস’। রকমারি.কম থেকেও আপনি অনলাইনে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। জেল বাঁধাই ৮০ পৃষ্ঠার ঝকঝকে বইটির মূল্য মাত্র ১৫০ টাকা।

Comments

comments

About

Check Also

করোনা ভাইরাস এপেডেমিক থেকে পেনডেমিক: একটি পর্যালোচনা

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারীর নাম করোনা ভাইরাস বা (COVID-19)। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সারা পৃথিবী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *