দ্বীনের খেদমতে অনন্য ব্যক্তিত্ব আল্লামা ফুলতলী

৩৬০ আউলিয়ার বাদশাহ, অলিদের অলি, হজরত শাহজালাল মুজাররদে ইয়ামনি রহমতুল্লাহি আলাইহি সিলেটের পাক জমিনে ইসলামের যে বীজ বপন করেছিলেন তার যোগ্যতম উত্তরাধিকারী হিসেবে এর ধারাবাহিক পরিপূর্ণতা দিয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, সুলতানুল আরিফিন, ওলিয়ে কামিল, শামসুল উলামা হজরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আজ সিলেট তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলে পবিত্র কুরআনুল কারীমের যে বাগান সজ্জিত হয়েছে, তা হয়েছে কেবলমাত্র ফুলতলী ছাহেবের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম ও তার শরীরের তাজা রক্ত ঝরানোর বিনিময়ে। একথা অনস্বীকার্য। সকল অপশক্তির হাত থেকে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমল রক্ষা করার জন্য তিনি বৃদ্ধ বয়সে, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়েও ঘুরে বেরিয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বজুড়ে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সহি আকীদাকে সমুন্নত রাখতে, সহিহ আকিদা ভিত্তিক ইসলামি সমাজ বিনির্মাণে, ইসলামি শিক্ষায় মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে, তিনি দেশ-বিদেশে গড়ে তুলেছেন, অসংখ্য-অগণিত মসজিদ, মাদরাসা। খানকা এবং হাজারও এতিম-অনাথদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল, এতিমখানাসহ ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে বিপুলপরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা-সংগঠন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, স্কটল্যান্ড এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের মতো বিভিন্ন বিধর্মী ও খ্রিষ্টানপ্রধান দেশগুলোর মধ্যেও তিনি পৌঁছে দিয়েছেন ইসলামের সুমহান বাণী এবং সহি আকিদা। ক্ষুদ্র এই জীবনে অনেক আলেম-উলামা, পির-ফকির দেখেছি। কিন্তু কুরআনের খেদমত কজনই বা করতে পারেন কিংবা করেন? শুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষার লক্ষ্যে ফুলতলী ছাহেবের মোবারক হাতে প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট’ আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত এবং পবিত্র কুরআনুল কারিম শুদ্ধভাবে পড়ার এক অপূর্ব নেয়ামত হিসেবে এটি ফুলতলী ছাহেবের অমর সৃষ্টি বলে খ্যাতি লাভ করেছে বিশ্বজুড়ে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আজ যার রয়েছে হাজার হাজার শাখা-প্রশাখা। আর এর মাধ্যমে আমার মতো লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছেন পবিত্র কুরআন শরিফ সহিশুদ্ধভাবে পড়ার এবং পড়ানোর। তাই রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিস শরিফে বলেছেন-‘যারা শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরিফ শিখে এবং শিখায়, তারাই জগতের সর্বোত্তম মানুষ’। এখন সহিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শিক্ষার এতো বড়ো একটি বাগান যিনি সাজালেন, যিনি তার জীবনের সিংহভাগ সময় ব্যয় করে গেছেন পবিত্র কুরআনের খেদমতে, যিনি তার সম্পদের এক বিশাল অংশ (৩৩ একর জমি) দান করে গেছেন দারুল কিরাতের নামে। সেই ফুলতলী ছাহেবকে আপনি কতবড়ো মানুষ বলে আখ্যায়িত করবেন? শত শত গির্জা আজ আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহির পবিত্র হাতের ছোঁয়ায় মসজিদে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। ‘দারুল হাদিস লতিফিয়া (লন্ডন), দারুল হাদিস নর্থ ওয়েস্ট, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রি, লতিফিয়া আইডিয়াল সোসাইটি বার্সেলোনা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলোই সেই প্রমাণ বহন করে চলছে। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহির জীবনাদর্শের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যে, উনার জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষণই ছিলো রাসুলের আদর্শের এক জীবন্ত প্রদীপ। তিনি ছিলেন ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান-আমল রক্ষার এক অতন্দ্র প্রহরী। তিনি নিজের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে রাসুলপ্রেমের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সৈয়দপুরের মাটিতে, তার এই আত্মত্যাগ বা দ্বিতীয় উদাহরণ এখনকার সময়ে খুঁজে পাওয়া বিরল! বালাকোটি চেতনার যোগ্যতম উত্তরাধিকারী আল্লামা ফুলতলী ছিলেন এক বীর সাহসী অকুতোভয় সেনানী। ‘আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমতুল্লাহি আলাইহি’ এখন আর কোনো সাধারণ নাম নয়! ইতিহাসে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র নামটি থাকবে চির-অমর, অক্ষত-অম্লান। তিনি তার অবস্থানে এক ও অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, অনন্য, অসাধারণ। আল্লামা ফুলতলী এ পৃথিবীতে একবারই এসেছিলেন, আর দ্বিতীয় কোন ফুলতলী ছাহেব এই জমিনে ফিরে আসবেন না। তাই কবি বলেছেন-
এই বাংলার আকাশ, বাতাস
পাহাড়, পর্বত, গিরি ও নদী-
ডাকিছে তোমায় হে-ফুলতলী
ফিরে আসিতে যদি!
তবে ফুলতলী ছাহেব আজ দুনিয়ায় নেই বলে, তার সুমহান আদর্শ, অপরিণামদর্শী ত্যাগ-তিতিক্ষার, কোনকিছুই তিল পরিমাণও ক্ষয় হয়নি। বরং তার ইন্তেকালের পর থেকে দেখা যাচ্ছে যে, জীবিত ফুলতলীর চেয়ে মৃত ফুলতলীই বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন!

লেখক : শিক্ষার্থী, গ্রিণউইছ বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *