ইয়াযিদের প্রতি ভালোবাসা রাসূল (স.)-এর সাথে বিরোধীতা

মুহররাম মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে ইতিহাসের অনেক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। বিশেষত এ দিন উম্মতে মুহাম্মদির নিকট প্রিয়ের বিয়োগ শোকে বিহবলিত। এই দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রাণপ্রিয় দৈহিত্র হযরত হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে সত্য প্রতিষ্ঠার তরে নিজ পরিবার পরিজন সহ নির্মমভাবে ইয়াযিদ বাহিনীর হাতে শহিদ হন। কারবালার ঘটনার নির্মমতা পড়লে আমাদের চোখ বেয়ে অশ্র“ ঝরে। কি নির্মম নিষ্ঠুর পৈশাচিক কাণ্ড!। এই শোকের দিনে আমরা যখন শোকাচ্ছন্ন তখন মুসলিম নামদারি কতিপয় লোক মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে ফাটল তৈরির লক্ষ্যে ইয়াযিদ কে ভালোবাসা শুরু করেছে। তাদের ভালোবাসা এতই গভীর যে তারা তাদের ভালোবাসার পাত্র ইয়াযিদের নামের সাথে মুজাদ্দিদ এবং নামের পূর্বে ‘হযরত এবং পরে ‘রাদিআল্লাহু আনহু’ লক্কব জুড়ে দিচ্ছে। এই কুচক্রিমহল সত্যের সৈনিক হযরত হোসাইন (রা.)-এর দোষত্র“টি অন্বেষণে লেগে পড়েছে। তারা বলে হযরত হোসাইন (রা.) ক্ষমতার লোভে সেখানে গিয়ে নিহত হয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)। তারা এমন মানুষের বিরোধিতা করছে যার সাথে বিরোধিতা করা কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের সাথে বিরোধিতা করার নামান্তর বলে উল্লেখ করেছেন। তাই যারা হযরত হোসাইন (রা.) এর বিরোধিতা করে ইয়াযিদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়তে চায় তাদের অবশ্যই জানা উচিত যে ইয়াযিদ একজন মদ্যপ লোক ছিল। ইয়াযিদ খাইরুল করুন তথা উত্তম যুগের মানুষ ছিল ঠিক তবে কতিপয় কারণে সে তাবেয়ীগণের মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আহলে বায়াতের সাথে খারাপ ব্যবহার ও তাদের নির্মমভাবে হত্যা, পবিত্র হারামাইন শরিফাইনের অবমাননা।
সে রাসূল (সা.)-এর অগণিত সাহাবিদের শহিদ করে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সকল আলিমের ঐক্যমত রায় হলো ইয়াযিদ তাবেয়ীগণের অন্তর্ভুক্ত হলেও সে মর্যাদা তার কর্মকাণ্ডের দ্বারা হারিয়ে ফেলেছে। তবে ইয়াযিদকে লানত করার ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও অধিকাংশ আলিমের মতে তাকে লা’নত করা যাবে। এমনকি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) তাকে কাফির বলতেও কুণ্ঠিত হননি। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) তার ‘মা সাবাতা বিস সুন্নাহ’ গ্রন্থে মুসলিম শরিফের একটি হাদিস এনে প্রমাণ করেছেন যে ইয়াযিদ লা’নতের উপযুক্ত। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মদিনাবাসিকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করবেন। তার উপর আল্লাহ ফেরেস্তা এবং সমস্ত মানুষের অভিশপ্ত বর্ষিত হবে।
সুতরাং বুঝা গেল ইয়াযিদ অভিশপ্ত। কারণ ৬৩ হিজরিতে যখন মদিনা শরিফের অধিবাসীগণ ইয়াযিদের বায়াআত অস্বীকার করলেন তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে মদিনা শরিফে আক্রমণ করে ব্যাপক ধংসযজ্ঞ চালায়। তখন ইয়াযিদের বাহিনী পবিত্র মদিনায় পৈশাচিক কাণ্ড ঘটায়। তারা মসজিদে নববীর অবমাননা করে। শত শত নারীদের ইজ্জত হরণ করে অগণিত সাহাবিদের শহিদ করে। এমনকি কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে ইয়াযিদ বাহিনী মসজিদে নববীতে ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববীতে আজান ও ইক্বামত হয়নি (নাউযুবিল্লাহ)। এমন নরপশুর মতো আক্রমণ করে, তাদের এ হামলার বিবরণ লিখতে গেলে কলম থমকে যায়। বলতে গেলে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
ইয়াযিদের নরপশু বাহিনী পবিত্র মদিনা লুণ্ঠন করে থেমে যায় নি তারা পবিত্র শহর মক্কায়ও অত্যাচার চালিয়েছে। তারা পবিত্র ক্বাবা শরিফের ছাদে ও গিলাফে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকি হযরত ইসমাঈল (আ.) এর পরিবর্তে যে দুম্ভা কুরবানি করা হয়েছিল স্মৃতিস্বরূপ সেই দুম্ভার শিং পবিত্র ক্বাবা শরিফে রক্ষিত ছিল। সেই শিংও তারা পুড়িয়ে ফেলেছিল। ইতিহাসের এহেন ন্যাক্কারজনক ও বিভৎস আক্রমণ আর কোন বাদশাহ করেছিল কিনা সন্দেহ আছে। ইয়াযিদ বাহিনী যে পবিত্রতম স্থান গুলোতে আক্রমণ করেছে তা অন্য কোন মুসলমান তো দূরে যাক কোন কাফিরও করতে সাহস করতে পারেনি।
এতসব কাণ্ডের পরও যাদের অন্তরে ইয়াযিদের ভালোবাসা লাফ দিয়ে ওঠে-তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আজ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) এই ইহজগতে নেই যদি থাকতেন তাহলে তাদের আজ এই অপরাধের কারণে বেত্রাঘাত সহ্য করতে হতো।
সম্মানিত পাঠকগণ! তাই আমাদের উচিৎ এসব পাগলের প্রলাপ না শুনা। এবং হযরত হোসাইন (রা.)-এর চেতনা বুকে ধারণ করে আমাদের কে সত্য প্রচারে ব্রতী হওয়া।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *