অভিযাত্রিক লেখক সম্মেলন ২০১৭ এবং একটি ভাবনা

৩০ আগষ্ট ২০১৭, বুধবার, ঘড়ির কাঁটা যখন বিকাল ৬টা, বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানি জালালী শহর সিলেটের রাস্তায় ডুবন্ত সূর্যের সোনালী রশ্মি ঢলে পড়ে । এমনই এক সময়ে সিলেটের প্রাণকেন্দ্র (দরগা গেইট), শহীদ সোলেমান হলে সুসজ্জিত মঞ্চে আয়োজিত হল অভিযাত্রিক লেখক সম্মেলন! অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মুকুটহীন সম্রাট মুরশিদে বরহক মাওলানা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রাহ.)-এর সুযোগ্য উত্তরসুরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক, মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী, প্রধান আলোচক ছিলেন বর্তমান বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মোস্তফা হাসান চৌধুরী গিলমান (ফুলতলী) (সম্পাদক, ত্রৈমাসিক পত্রিকা সন্ধানী), এম এ বাসিত আশরাফ, মাওলানা নাজমুল হুদা খান (আরবি প্রভাষক ফুলতলী কামিল মাদরাসা), তরুণ লেখক ও কলামিষ্ট নোমান আহমদ (ইংরেজি প্রভাষক, সরকারী বৃন্দাবন কলেজ হবিগঞ্জ), কবি মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম বুলবুল (প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, রিসালাহ সাংস্কৃতিক সংসদ), কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল (সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম ) এবং কবি পিয়ার মাহমুদ।
লেখক সম্মেলনে পুরস্কৃত হলেন, লেখক ও চিন্তক মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী, কবি এম. এ বাসিত আশরাফ এবং কবি ও কথাশিল্পী মাহবুবুর রহীম।
মাসিক অভিযাত্রিকের লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ী সহ সিলেটের প্রখ্যাত কবি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে উদীয়মান কবি সাহিত্যিকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল শহীদ সোলেমান হল, বসেছিল সাহিত্য প্রেমীদের মিলনমেলা। ফুলে ফুলে সাজানো মঞ্চের দিকে তাকিয়ে যে কোন লোকেরই সহজে বিভ্রম হওয়ার কথা। সিলেটের মত একটি শহরে হলেও সবকিছুতেই ছিল আন্তর্জাতিক আবহ। আর এতোসব কিছু সম্ভব হয়েছে যেসব নির্বিক সৈনিকদের জন্য তাদের অন্যতম হলেন ইসলামী মিডিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা, মাসিক অভিযাত্রিক সম্পাদক, নাতের রাজা খ্যাত কবি মাওলানা রফীকুল ইসলাম মুবীন, মাসিক অভিযাত্রিকের আজীবন দাতা সদস্য ও উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরমার্থিক কবি রাফি ইসলাম, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, ক্বারী আব্দুন নুর লতিফী সহ আরো অনেক। বিশিষ্ট উপস্থাপক, ইসলামী সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মাওলানা সুলতান আহমেদের চমৎকার সঞ্চালনায় অনুষ্টান হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। অতিথিদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা এবং শ্রোতাদের মুহুর্মুহু তাকবির ও রিসালাত ধ্বণীতে হলের মধ্যে সৃৃষ্টি হয় রেনেঁসার জাগরণ। বক্তারা তাদের বক্তৃতায় বলেন-বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই, আর এই লড়াইয়ে সাফল্য লাভ করতে হলে ইলিকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার বিকল্প নাই।
মারজান আহমদ চৌধুরী বলেন-বর্তমানে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্যতম মুখপাত্র হলো অভিযাত্রিক। মুখর তারুণ্যের দৃপ্ত মিছিল মাসিক অভিযাত্রিকের পথচলা মসৃণ হোক।

তারুণ্যের অহংকার মোস্তফা হাসান চৌধুরী গিলমান বলেন, একবিংশ শতাব্দিতে স্যোসাল মিডিয়ার আগ্রাসনের কারণে আমাদের সমাজ থেকে লেখাপড়া বা জ্ঞানচর্চা এবং ইসলামী মিডিয়া যখন অবনতির দিকে যাচ্ছে, ঠিক তখনই মাসিক অভিযাত্রিক বিশাল হলভর্তি লেখক, পাঠকদের সমাবেশ ঘটিয়ে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে সেটা বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে লেখাপড়া এবং গবেষণার দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।
প্রধান আলোচক, বর্তমান বাংলা সাহিত্যর শক্তিমান কবি, অধ্যক্ষ কালাম আজাদ বলেন, অভিযাত্রিক ইসলামি সাহিত্যের একটি অন্যতম মুখপাত্র, তাই আমাদেরকে জানতে হবে সাহিত্য কি? সাহিত্য “সহিত” থেকে নির্গত, সহিত শব্দ থেকে যদি “হ” বাদ দিয়ে দেই তাহলে হবে “সত” সত কে “সত্য” লিখে আমরা বলতে পারি সাহিত্য হল “সত্যের” সাথে মানবতার সহবাস! সাহিত্য আমাদের শিক্ষা দেয় “যিধঃ ধ সধহ ধিহঃ ঃড় নব” একজন মানুষ কি হতে চায়, আরো শিক্ষা দেয় ডযধঃ’ং ঃযব ৎবষধঃরড়হংযরঢ় নবঃবিবহ সবহ ধহফ ংঁঢ়ৎবসব. সাহিত্য এই সব দর্শন মানুষের ভিতর জাগ্রত করে। তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে দুনিয়াতে একটি দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন, এই দায়িত্ব কিঞ্চিৎ পরিমান হলেও অভিযাত্রিকের মাধ্যমে আমরা শুরু করেছি! তাই অভিযাত্রিক সাত বছর নয় বরং সাত হাজার বছর বেঁচে থাকুক। আমাদের সাহিত্য জগতে অভিযাত্রিক যেন হয় একটি মাইলফলক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক, মাওলানা আহমেদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী বলেন, লেখক-কবিদের আমি ভালোবাসি, প্রবন্ধ বা কবিতা পড়ে মজা পাই। নতুনদের উৎসাহ দিতে ভালোবাসি। নতুনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ‘পড়াশুনার কোন বিকল্প নেই।’ লেখকদের প্রচুর পড়তে হয় তারপর লিখতে হয়, সর্বোপরি বিনয়ী হতে হয়। একটি সুন্দর মন মানসিকতা নিয়ে প্রবীণদের কাছ থেকে সংশোধন করার শিক্ষা নিতে হয়। আমি এক সময় মাসিক পরওয়ানার সাথে জড়িত ছিলাম তাই জানি সত্যিকারের লেখক সৃষ্টি করা, তাদের উজ্জীবিত করা কত কঠিন কাজ! সাহিত্যে যেন অশ্লীলতা না থাকে! সেই অশ্লীল সাহিত্যের চর্চাকে সমাজ থেকে দূর করার জন্য আমাদেরকে সুস্থ সাহিত্য চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠা বা খ্যাতির জন্য আমরা যেন অশ্লীলতার আশ্রয় না নেই। আমরা জানি একদিন আল্লাহর দরবারে জবাবদিহীতার জন্য আমাদেরকে তার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, সুস্থ সাহিত্যচর্চায় আল্লাহ অভিযাত্রিককে কবুল করুন। অভিযাত্রিকের পথচলা যেন হয় মসৃণ।
উপসংহার : আমরা সবাই জানি বর্তমানে মিডিয়া কিভাবে আমাদের জীবনে স্থান করে নিয়েছে। মিডিয়ার হামলা আর আগ্রাসন থেকে আজ আমরা কেউই নিরাপদ নই। তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে (হক্বপন্থী মুসলমানদের, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের) রেডিও, টিভি, সিডি, বই ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে হবে। আর এই মিশনে মুখর তারুণ্যের দৃপ্ত মিছিল অভিযাত্রিক পত্রিকা কোটি মানুষের অন্যতম মুখপাত্র হতে পারে। সন্দেহ নেই আল্লাহ তার রাসুল (সা.)-এর পথে মানুষকে ডাকার এক চমৎকার মাধ্যম এসব মিডিয়া। মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে দর্শন, শ্রবণ ও পঠন তথা টিভি, ইন্টারনেট ও পত্র-পত্রিকা এই তিন ধরনের মাধ্যম। মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে আমরা বৃহত্তর অঙ্গনে দ্বীন প্রচার করতে পারি, আমাদের মঞ্জিলে মাকসুদে পৌঁছতে পারি। তাই আসুন আমরা বেশি বেশি পড়ি, লিখি, গবেষণা করি। অভিযাত্রিক হাজার বছর আমাদের মুখপাত্র হয়ে থাকুক। আমরা আরো জানি, সু-শিক্ষা ও সৃজনশীল সাহিত্য, আমাদের আশা-ভরসা, আমাদের শক্তি। অভিযাত্রিকের পথচলা একটি সৃজনশীল সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। আমরা চাই মুখর তারুণ্যের দৃপ্ত মিছিল অভিযাত্রিক পত্রিকার মাধ্যমে লেখকেরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুন।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *