নির্মল ভালোবাসা

এক গ্রামে নিজ পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন এক অন্ধ বৃদ্ধ। বৃদ্ধের স্ত্রীর ফুসকুরি রোগের কারণে পুরো শরীর কালো হয়ে গিয়েছিলো। এজন্য সে দেখতেও ছিলো অনেক কুৎসিত। তবুও বৃদ্ধ তাকে এতোটাই ভালোবাসতেন যে তাদের দেখলে মনে হতো নবদম্পতি। বৃদ্ধের দুটি ছেলে ছিলো। তারা মাঝে মধ্যে তাদের পিতাকে বলতো, বাবা! আপনার চোখের দৃষ্টি থাকলে হয়তো আমাদের মাকে ভালোবাসতেন না। তাকে দূরে সরিয়ে দিতেন। বৃদ্ধ হেসে বললো, যদি এমনি হয় তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, আমার চোখ যেনো অন্ধই থাকে। এসব কথা আর কোনদিন আমাকে বলবে না। এখন তোমরা যেতে পারো।
এর কিছুদিন পর বৃদ্ধের স্ত্রী মারা গেল। স্ত্রীকে দাফন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন বৃদ্ধ। পেছন থেকে বড়ো ছেলে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে এলো। বৃদ্ধ বললো, লাগবে না, আমি একাই যেতে পারবো। ছেলে অবাক হয়ে বললো, আপনি তো দেখতে পান না, একা কি করে যাবেন? বৃদ্ধ কালো চশমাটা খুলে ছেলেদের দিকে খোলে তাকালেন। বললেন, আমি অন্ধ না, সব দেখতে পারি। উপস্থিত সকলে বৃদ্ধের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ছোট ছেলে বললো, তাহলে কেনো আপনি এতো বছর অন্ধ সেজে ছিলেন? বৃদ্ধ বলতে লাগলো, তোমার মা একসময় খুব সুন্দর আর সুশ্রী মহিলা ছিলেন। তার চাহনি, কথা-বার্তা, হাসি-সবকিছুই ছিলো অসাধারণ। এক রাতে হঠাৎ তোমার মায়ের শরীর ফুলে উঠলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার সমস্ত শরীর ভরে গেলো ফুসকুরিতে।

এরপর তোমার মায়ের মনে হতে লাগলো, তার শরীর কালো হয়ে যাওয়ায় আমি তাকে আর ভালোবাসবোনা; কেবল অনুগ্রহ করবো। আমিও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাদের মাকে এমন হীনমন্যতায় কখনই ভোগতে দেবোনা। আমি কিছুদিনের জন্য শহরের বাহিরে চলে গেলাম। বাড়ি ফিরে এসে তোমার মাকে বললাম, আমি কোন এক কাজে যাওয়ার সময় রোড এক্সিডেন্টে আমার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে চল্লিশ বছর তোমাদের সাথে অভিনয় করে আসছি। তোমার মা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জেনে গেছে, আমার ভালোবাসা তার জন্য অটুট ছিলো। এক সেকেন্ডের জন্যও সে ভাবেনি আমি তার প্রতি অনুগ্রহ করছি। আমার চল্লিশ বছর অন্ধ হয়ে থাকার প্রতিদান আমি পেয়েছি। বৃদ্ধ কালো চশমা আর লাঠি স্ত্রীর কবরের পাশে রেখে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির দিকে চললেন। ছেলেরাসহ উপস্থিত সকলেই অবাক চোখে বৃদ্ধের চলার পথে তাকিয়ে রইলো।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *