Book

গ্রন্থালোচনা

By mumin

January 11, 2019

‘বিশ্বনবীর আগমনে জাগলো সাড়া’ দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যায়নরত ‘এস এম নাজমুস সাকিব’-ভাইয়ের প্রথম সাধনার ফসল। নবীজীকে নিয়ে লেখা এক অনন্য উপহার। বইটিকে মহামূল্যবান ছয়টি অধ্যায়ে ছয়টি পরিচ্ছেদে সাজানো হয়েছে। এক একটি অধ্যায়ে রয়েছে কোরআন-সুন্নাহের অকাট্য দলিল-প্রমাণ দিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক জীবনের নানাবিধ আলোচনা। বিখ্যাত আরবী সীরাতগ্রন্থসমূহ থেকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো পড়লে জানা যাবে, সকল নবী-রাসুল ও তাঁদের উম্মত নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কত তা’জিমান আলোচনা করতো, আমাদের নবীজীর অতুলনীয় গুণাবলিকে তাঁরা কত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো! বইটির ২২-২৩ পৃষ্ঠায়, মিলাদ-কিয়াম নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ দেওবন্দি আলেম, হাদিসের শায়েখ সকলের শ্রদ্ধাভাজন আল্লামা কাজী মু’তাছিম বিল্লাহ রহিমাহুল্লাহু এর এক দারুণ অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়টিকে সাজানো হয়েছে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র আগমনের আলোচনাসমৃদ্ধ কুরআনুল কারীমের প্রচুর আয়াতসমূহ ও হাদিসসমূহ দ্বারা। বইটির চতুর্থ অধ্যায়টি পড়ে বুঝতে পেরেছি কেন এর নাম রাখা হয়েছে ‘বিশ্বনবীর আগমনে জাগলো সাড়া’! এ অধ্যায়টিতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে প্রায় ত্রিশটি বিষয়ে সাড়া জাগানো দালিলিক আলোচনা করা হয়েছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিরোনাম উল্লেখ না করলে শান্তি পাচ্ছি না….. ? রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমর্থনের জন্য নবী-রাসুলদের থেকে স্বীকৃতি। ? সকল নবী তাঁর উম্মতের কাছেও মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বলে রেখেছেন। ? নবীজী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রথম বলার চমৎকার একটি কারণ। ? উম্মতে ঈসা আ. সবসময় রাসূলে কারীমের আলোচনায় মশগুল থাকতো। ? আকাশ-বাতাস অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে হতে হঠাৎ আলোকিত হয়ে গেলো। ? মা আমেনার কোল থেকে বের হলো আলো। ? তিনি কখন থেকে নবী, কখন থেকে রাসুল ছিলেন। ? আদম আ. এর ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য জিবরাইল আ. দুআ শিখায়ে দিলেন। ? পাথরে চারটি কথা লেখা ছিলো; সেখানে শুধু নবীজীর নামই আছে। ? নবীদের যে ইলম দেওয়া হয়নি তাও আপনাকে দেওয়া হয়েছে। ? বিশ্বনবীর আগমনে নক্ষত্রের তা’জিম। ? এক ব্যক্তির বিরল এক স্বপ্নে কা’বুল আহবারের ফায়সালা।

শিরোনাম পড়েই বুঝা যায় ভেতরটি কেমন হবে! খুবই শক্তিশালী দলিল দিয়ে সাকিব ভাই বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন। হৃদয়ঙ্গম হবে কত তা’জিম, কত মর্যাদা, কত গুণাবলির মালিক বানিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তা’য়ালা উনার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে! পঞ্চম অধ্যায়টিতে রয়েছে তিনটি পরিচ্ছেদ। পরিচ্ছেদগুলোতে উপস্থাপিত হয়েছে নবীজীর বিলাদত শরীফ উদযাপন, মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনের হাকিকত ও উপকারিতা, মীলাদ ও ক্বিয়ামের সহজ-সঠিক নিয়ম, মীলাদের প্রেমাসক্ত কাসিদা, হাদিসে নববীর সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত অবলম্বনে দারুন্নাজাতের শাইখুল হাদিস আলহাজ্জ মাওলানা আব্দুল লতিফ শেখ ফরিদপুরী হুজুর দা.বা.আ. এর রচিত চমৎকার আরবী ছন্দযুক্ত তাওয়াল্লুদ শরিফ, ক্বিয়ামে পাঠযোগ্য অসাধারণ কয়েকটি কাসিদা। এ অধ্যায়টি পড়লে অনেক বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে সহজ হবে। বর্তমান সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইশক ও মহব্বত সর্বস্তরের মানুষের মনে জাগরিত করতে, আশিকে রাসুল কবিদের, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিবেদিত কবিতাগুলো চর্চা করা খুবই গুরত্বপূর্ণ। সেই কাজটিই করেছেন সাকিব ভাই; তাঁর বইটির ষষ্ঠ অধ্যায়ে রাসুল প্রেমেসিক্ত কয়েকটি কবিতা উপস্থাপন করে। বিশেষ করে নবীজীর শানে নিবেদিত হাস্সান বিন সাবিত রা., ইমাম বুছিরী রহ., আল্লামা ইকবাল রহ., আল্লামা জামী রহ., কবি ফররুখ, কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসিম উদ্দনের কবিতাংশটুকু উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ করেছেন আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চমৎকার একশতটি না’ত শরিফের প্রথম লাইন। যা পাঠান্তে বুঝা যায়, কাজী নজরুল এর মনে ইশকে রাসূলের গভীরতা কত বেশি। তাছাড়া বইটির অন্যতম নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো শেষ পরিচ্ছেদটি। এখানে সাকিব ভাই, বিখ্যাত কবি আশিকে রাসুল শিহাবুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আবশীহী মহল্লী রহ. [৭৯০-৮৫০] এর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আকুল আবেদন গাঁথা কবিতা (যেটি বাংলাতে কাসিদায়ে নোমান নামে প্রসিদ্ধ) এর চমৎকার কাব্যিক অনুবাদ তুলে ধরেছেন।সর্বপ্রথম যাঁরা এই নামে কবিতাটি প্রচার করেছিলেন তাঁরা কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেননি যে এটা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর রচিত। সাকিব ভাই উনার বইটিতে দলিল দিয়েছেন, কবিতাটি আল্লামা শিহাবুদ্দিন আবশীহী মহল্লী রচিত। [আল্ মুসতাসরাফ ফি কুল্লি ফান্নিল মুসতাজরিফ, প্রথম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা] পরিশেষে, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে লক্ষকোটি শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে উনার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে নিবেদিত ১১২ পৃষ্ঠার এই মূল্যবান বইটি পড়ার তাওফিক দিয়েছেন। দয়াল নবীজীর উছিলায় যেন যা জানলাম, শিখলাম ও বুঝলাম তার উপর আমল করার ও অটল থাকার শক্তি দান করেন। আমার প্রাণের বড় ভাই এস এম নাজমুস সাকিবের এই পরিশ্রম যেন মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন, হারামইন শরীফাইনের জিয়ারত নসিব করেন, দিদারে মোস্তফা নসিব করেন, ভয়াবহ সেই ময়দানে মাহশারে দয়াল নবীজীর শাফাত নসীবে সহায়তা করেন।

Comments

comments