Rohingya refugees are seen waiting for boat to cross the border through the Naf river in Maungdaw, Myanmar, September 7, 2017. REUTERS/Mohammad Ponir Hossain

আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা গণহত্যা বিপন্ন মানবতা

By mumin

October 05, 2017

সারা বিশ্বে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত। বিশ্ব মানবতা আজ বিপন্ন!! মানবতার ফেরিওয়ালারা বোবা শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ। চারদিক থেকে ভেসে আসছে অসহায় মানুষের রক্ত কান্না, আমাদের মা-বাবার বেঁচে থাকার শেষ আরতি। অসহায় বোনের ইজ্জত বাঁচানোর শেষ চিৎকার। হায়েনার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিস্পাপ শিশুর শেষ কান্নার আওয়াজ। আজ পানিতে রক্তের স্রোত। মাঝেমধ্যে ভেসে উঠছে নরপশুদের কালো থাবায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেওয়া চিৎকারটা আমরা শুনছি। এই রক্ত স্রোতটা দেখে যাচ্ছি। এর প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিছুই করছি না। কিন্তু এর পরিণতি কত ভয়াবহ, আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি!! কোরআনে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে হুঁশিয়ারী সংকেত দিয়ে বলছেন: সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে (বিশ্ব মোড়লদের) বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএব, তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবে-যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের কে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে সমান আমাদের রেহাই নেই। (সুরা ইব্রাহিম:২১): আজ অসহায় মায়ানমারের মুসলমানরা গণহত্যার শিকার হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠি একটু আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে। কেন আজ রোহিঙ্গা মুসলমানরা গণহত্যার শিকার? কি তাদের পরিচয়? ইতিহাস সাক্ষী মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন জাতি নয়। আদি নিবাস সূত্রেই তারা সেখানে শতশত বছর ধরে বসবাস করছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় মায়ানমারে রাখাইন সম্প্রদায়ের এককালে স্বাধীন রাজ্য ছিল। অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। আরব বংশোদ্ভূত এই জনগোষ্ঠী মায়্যু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের (বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগের নিকট) মধ্য আরাকানের নিকটবর্তী ম্রক-ইউ এবং কাইয়্যুকতাও শহরতলীতেই বসবাস করতে পছন্দ করতো। এই অঞ্চলের বসবাসরত মুসলিম জনপদই পরবর্তীকালে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে। ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে কয়টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তার মধ্যে অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরাকানী মুসলমানের বংশধর। ইতিহাস থেকে জানা যায় পঞ্চদশ শতাব্দী হতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গারা স্বাধীন ছিল এবং আরাকানে তাদের রাজ্য ছিল। ১৪০৬ সাল থেকে আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সোলায়মান শাহ্ (মুসলমান হওয়ার পূর্বে তার নাম ছিল নরমিখলা) আরাকানের সিংহাসনে বসেন। এই ম্রাউক-উ রাজবংশ ১০০ বছর আরাকান শাসন করে। ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা বোডপায়া এটি দখল করে বার্মার অধীন করে রাজ্যে পরিণত করেন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্যাতন, গনহত্যার ইতিহাস নতুন নয়! ১৬৬০ সাল থেকে (আরাকান রাজা থান্দথুধম্মার আমল থেকে) এখন পর্যন্ত আরাকান তথা রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলে আসছে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুর অমানবিক অত্যাচার। ১৯৩৭ সালে বার্মা Autonomy বা স্বায়ত্তশাসন লাভের পর নরঘাতক বৌদ্ধদের পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং তারা প্রায় ত্রিশ লক্ষ মুসলমান হত্যা করে।

১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করার পরেও এ নির্যাতনের ধারা অব্যাহত থাকে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২,২০১২, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ (টঘ) ও (Human Right Watch) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যেখানে গণহত্যার মত অপরাধের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মায়ানমারের বিশেষ তদন্তকারী ইয়ংহি লি, বিশ্বাস করেন মায়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতড়িত করতে চায়! এরই ধারাবাহিকতায় বিগত কয়েক দশক ধরে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন পন্থায় নির্যাতন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে। এই পর্যন্ত (২০১৭) সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। যদিও বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত উদ্বাস্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করে সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে তা বর্বর যুগকেও হার মানায়। হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে সেখানে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা, বিচারবহির্ভূতভাবে গ্রেফতার করা, নাগরিকত্বহরণ, জোরপূর্বক কাজে নিয়োগ করা, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে মায়ানমার সরকার নিমর্মতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করেছে। “জীব হত্য মহাপাপ” এই ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী বৌদ্ধদের হিংস্রতার কারণ, রাখাইনে ২০১২ সালের দাঙ্গা। মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় জাতিগত কোন্দলকে কেন্দ্র করে এবং উভয় পক্ষই এতে জড়িত হয়ে পড়ে। মায়ানমার সরকারের নিপীড়নের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মগসহ অন্যান্য বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের উস্কে দিচ্ছে মায়ানমার সরকার। মায়ানমারে বৌদ্ধদের প্রাধান্য, দেশটির প্রচার মাধ্যমও বৌদ্ধদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে মুসলমান বা রোহিঙ্গাদের উপর অমানবিক অত্যাচার ও নিপীড়নের সঠিক তথ্য প্রচার করা হয়না সেখানে। এমনকি বিদেশি সাংবাদিকদের গলাধাক্ষা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। মায়ানমার সরকারের মনে রাখা দরকার, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের (Terrorist) জঙ্গি, সন্ত্রাসী নাম দিয়ে ক্রমাগত নিপীড়ন করে যে জগন্য ভুল করছে এর জন্য তাদেরকে একদিন খেসারত দিতে হবে। ইতিহাস প্রমাণ করে সব জালিমদেরই শেষ পরিনতি হয়েছিল ভয়াবহ। মায়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের জুলুমের কালোহাত ভেঙে দেওয়ার মতো একটি দল অচিরেই সৃষ্টি হবে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দিনে ছুটে আসবেন মুহাম্মাদ বিন কাশিম (রাহ.)-এর উত্তরসুরি। একদিন যিনি কিছু সংখ্যক মজলুম মুসলিম ভাই বোনদের ফরিয়াদ শুনে সুদূর আরব থেকে ছুটে এসেছিলেন হিন্দুস্থানে! জালিম রাজা দাহিরের সিংহাসন উল্টে দিয়ে মজলুম মানবতার জন্য মুক্তির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই, হে আল্লাহ বার্মার জালিমদের কালোহাত ভেঙে দিতে এই জামানার মুহাম্মাদ বিন কাশিম (রহ.)-কে পাঠিয়ে দাও। সাহায্য করো নির্যাতিত মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে। মুক্ত স্বাধীন করে দাও আরাকান ।

তথ্যসুত্র: ১: রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস, এন. এম. হাবিব উল্লাহ্, এপ্রিল-১৯৯৫ (ইইঈ বাংলা)। প্রকাশনায়ঃ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি ২: যঃঃঢ়ং://নহ.স.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম/রিশর/রোহিঙ্গা ৩: আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস, ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ।

Comments

comments