ইসলাম

রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি জীবনে ইসলামের খেদমতে এরশাদ

By mumin

August 30, 2019

জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কর্মাবলীর মধ্যে দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের মুমিন মানুষদেরকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আলোড়িত করে সেটা হচ্ছে তাঁর ইসলামের খেদমত। একজন সাধারণ মুসলমান অথচ দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আদায় করার কথা ছিল সেগুলো তিনি নিজ থেকে পূরণ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে আসন গড়ে তুলেছেন। প্রথমত রাষ্ট্রধর্মের প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে এরশাদের নাম। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ তাকে করেছে মহিমান্বিত। দেশের মসজিদ- মাদরাসা নিয়ে তাঁর অবদান কখনো ভুলার নয়। সরকারিভাবে মসজিদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ ও শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার মাধ্যমে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এরশাদ। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে ইসলামি নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেছিলেন। স্ব^াধীনতার পর থেকে দেশের সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রোববার। মুসলমানদের বিশেষ ইবাদতের দিন শুক্রবারে কোনো ছুটি ছিলো না। যার কারণে জুমার নামাজে ভোগান্তিতে পড়তে হতো কর্মজীবিদের। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উদ্যোগেই সাপ্তাহিক ছুটি রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার করা হয়। রেডিও-টেলিভিশনে নামাজের আগে আজান সম্প্রচারের কোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশে ছিলো না। এরশাদের নির্দেশেই রেডিও এবং টেলিভিশনে সর্বপ্রথম আজান সম্প্রচার চালু হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় এখনও নামাজের আগে দেশের রাষ্ট্রীয় রেডিও-টেলিভিশনে আজান দেয়া হয়। দেশের সর্বসাধারণের ধর্মীয় আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে মসজিদ-মন্দিরের পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওফুক করা ছিল এরশাদের অন্যতম জনপ্রিয় পদক্ষেপ। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর বিদ্যুৎ ও পানির বিল রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করার সিদ্ধান্ত এরশাদকে হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই জনপ্রিয় করে তোলে। জীবনের পড়ন্তবেলায় বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজের নেয়া পদক্ষেপগুলোর কথা জানাতেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। ২০১৭ সালের ২৫ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শরীয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমি ইসলামের জন্য অনেক কিছু করেছি। শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটি, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম, মসজিদ-মাদ্রাসায় পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওফুক করেছি। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললে সহ্য হয় না। দেশকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নেতৃত্বে বাকি ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হন। কথা দিলাম, আজীবন আমি আপনাদের সাথে থাকব।’ ঠিক এভাবে ১৫ মার্চ ২০১৮ ইংরেজি তারিখে হুসেইন মুহমম্দ এরশাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালে ইসলামের জন্য অনেক কিছু করেছি। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বলে এসব করেছিলাম। শান্তির ধর্ম ইসলামের খেদমত করতে চাই। শেষ জীবনে ইসলামের জন্য কিছু করে যেতে পারলে খুশি হতাম। এজন্য দেশের আলেম উলামাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের জন্য লড়াই করি। আমি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছি, শুক্রবার ছুটির দিন ঘোষণা করেছি। দুপুরে নামাজের বিরতি দিয়েছি। মসজিদের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে সৌন্দর্য্যবর্ধন করে সম্প্রসারণ করেছি। ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলাম। কেন করেছি? ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বলে এসব করেছি। দুঃখজনক হলেও সত্য, দ্বীনি শিক্ষা এখন সবার জন্য আর বাধ্যতামূলক নাই। আমি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর ১০০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। পরে দ্বীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলকই বাদ দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় হাবিব সম্পর্কে জ্ঞানার্জন মুসলমানদের জন্য ফরজ। এখন আমরা সেই শিক্ষা দিতে পারি না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিলাম। পরবর্তীতে এটি বাতিল করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু পারে নাই। প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, আমি বলেছিলাম বাতিল করলে আল্লাহ নারাজ হবেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাতিল করেননি। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও থাকবে। ‘ এরশাদ দেশের আলেম ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন- ‘ইসলামের কথা শুনলে মানুষ ঘৃণা করে, রিফুজি মনে করে। আমার দেশে আমি থাকতে পারব না। পশ্চিমারা আমাদের সন্ত্রাসী বলে। ডেমোক্র্যাসি নাই এই অপরাধে ইরাক, লিবিয়া ধ্বংস করা হলো। সিরিয়া ধ্বংসের পথে। বিদেশিরা এই কথা বলে একের পর এক ইসলামী রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইসলামের পক্ষে কথা বলার কেউ নাই। কারণ, আমাদের মধ্যে ঐক্য নাই। কাতার একদিকে, সৌদি আরব একদিকে। তাদের মত দেশের মুসলমানদের মধ্যেও ঐক্য নাই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলামকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। এক আল্লাহ এবং রাসুল সা. হলো আমাদের বিশ্বাস। ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম, শান্তির পথ। ইসলামকে রক্ষা করতে হলে সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। ‘ এরশাদের কথা, কাজ ও বক্তব্যে ইসলামের খেদমত আঞ্জাম দেয়ার ব্যাপারটা সবসময় ছিল সুস্পষ্ট। তিনি ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে বলেছেন এক আর করেছেন ভিন্ন তা কখনো হয়নি। রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের খেদমতে এরশাদ যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটা তালিকা এভাবে দেয়া যায়-

Comments

comments