প্রবন্ধ

মাওলানা মোহাম্মদ আখতার হোসেন এর ‘নবীজি আমার কেমন ছিলেন’

By mumin

January 11, 2022

নবীপ্রেমিকের জীবনে সীরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপমা মরুভূমির তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত পথিকের পানি খুঁজে পাওয়ার ন্যায়। তাই সীরাত সর্বদা পথহারাদের পথপ্রদর্শক এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন অথবা দিশেহারা হৃদয়ের নিরাময়। হাফেজ ইবনুল ইমাদ হাম্বলী রহ. তার ইতিহাসগ্রন্থ ‘শাযারাতুয যাহাব’এ আমাদের জানিয়েছেন শাইখ ইমামুদ্দীন ওয়াসেতী রহ. এর অন্তরের অস্থিরতা ও শূন্যতার কথা। যা থেকে মুক্তি পেতে শায়েখ রহ. ডুবে গেলেন সীরাত অধ্যয়নে। অতঃপর তিনি অনুভব করলেন, অন্তর থেকে অস্থিরতা ও শূন্যতা দূর হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে নবীপ্রেমিকদের রুহের খোরাক পূর্ণ করতে এবং সীরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংকলন, সংরক্ষণ, প্রচার ও চর্চা অব্যাহত রাখতে সীরাত সংকলকগণ দক্ষতা, নিষ্ঠা ও অত্যন্ত আমানতদারিতার সাথে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘মাওলানা মোহাম্মদ আখতার হোসেন’ রচনা করেছেন ‘নবীজি আমার কেমন ছিলেন’ শিরোনামের গ্রন্থ। এই সাধনায় লেখকের মূল পূঁজি ছিলো হাদিসে নববী ও মোহাব্বতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। শামায়েলুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত এই গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে একাধিক পরিচ্ছেদ, বিশিষ্ট এগারটি অধ্যায় ও একটি পরিশিষ্ট নিয়ে। এই এগারটি অধ্যায়ে লেখক ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ সৌষ্ঠব, পরিহিত বস্ত্র ও ব্যবহার্য জিনিস সমূহের বিবরণী। প্রথম ছয়টি অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে দৈহিক বিবরণী, পরের পাঁচটি অধ্যায়ে ব্যবহৃত বস্তুর বিবরণী স্থান পেয়েছে। বিবরণীর সত্যতা হাদিসের আলোকে প্রমাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লেখক শুধু হাদিস উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি বরং হাদিসের হরকত সহ আরবি ইবারত, হাদিসের মান, হুকুম ও বিপরীতমুখী হাদিসের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসদের সমন্বয় উল্লেখ করেছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে প্রচলিত মতবিরোধের সমাধানে সুন্নতের সত্যতা তুলে ধরেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতের অন্যতম হৃদয়গ্রাহী বিষয় হচ্ছে তাঁর শামায়েল। শামায়েল গ্রন্থসূমহ সাধারণত তথ্যমূলক অথবা বিশ্লেষণাত্মক হয়ে থাকে। আলোচ্য বইটি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এখানে শুধু তথ্য অথবা শুধু বিশ্লেষণ নয় বরং তথ্যের সাথে বিশ্লেষণও স্থান পেয়েছে। এটি একটি তথ্যবহুল গ্রন্থ। তথ্যের ক্ষেত্রে লেখক প্রায় সাতাত্তর টি উৎস থেকে অনুসন্ধান করে তথ্য সংকলন করেছেন এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রখ্যাত মুহাদ্দিসগণের মতামতকে সঙ্গী করেছেন।

লেখক সংক্ষিপ্ত কলেবরের গ্রন্থটিতে প্রতেটি বিষয়ের সাথে হাদীস উল্লেখ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শামায়েল কে পাঠক মনে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেছন। হাদীসের বাংলা অর্থ, হরকত সহ হাদিসের আরবী ইবারত, হাদীসের মান উল্লেখ গ্রন্থটিকে সর্ব সাধারণের জন্য উপযোগী করে তুলেছে। তবে কিছু হাদিসে হাদিসের মান উল্লেখ না করায় অসামঞ্জস্যতার ছাপ অনুভূত হয়েছে। হাদীসের মানের (সহীহ, হাসান…ইত্যাদি) হুকুম, পারিভাষিক সংজ্ঞা উল্লেখ এবং যতিচিহ্ন ব্যবহারে আরো সতর্কতা প্রয়োজন ছিলো। গ্রন্থটিতে স্বপ্ন যোগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে কিছু আলোচনার অভাববোধ হয়েছে। লেখকের লেখনী দক্ষতা, ব্যক্তিগত অনুভূতি, সৃজনশীলতা বইটিতে স্পষ্ট। এছাড়া প্রচ্ছদ, রং মিশ্রণ, বাঁধাই, অক্ষর বিন্যাস ও পৃষ্ঠা সজ্জা গ্রন্থটির বিষয়বস্তুুর সাথে মানানসই। গ্রন্থটির সূচনাতে হযরত হাসসান ইবনে সাবেত রা. এর কবিতার পঙক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যারা শামায়েলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেন অথবা যারা এখনো পড়েনি সবার জন্যই ‘নবীজি আমার কেমন ছিলেন’ একটি উপকারী গ্রন্থ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শামায়েলের মাধুর্যতায় মন্ত্রমূগ্ধ লেখকের সাধনাকে আল্লাহ কামিয়াবি দান করুক। বইটি পরিবেশনা করেছে আল-ইখলাস পাবলিকেশন। ১২৮ পৃষ্ঠার শামায়েল গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছে মো. জুবাইরুল হক মাহদী। বইটির নির্ধারিত মূল্য ১০০ টাকা।

Comments

comments