ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)

মহানবি সল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম-এর দায়িত্ব অধিকার, মহান চরিত্র ও মহৎ শিক্ষা

By mumin

November 03, 2020

মহানবি স.-এর দায়িত্ব১। উম্মাতের কাছে বিশুদ্ধভাবে ওহি তিলাওয়াত করা বা কিতাব পৌঁছে দেয়া,২। শিরক-কুফরের অপবিত্রতা থেকে উম্মাতকে পবিত্র করা, তাদের আত্মশুদ্ধি করে দেয়া,৩। কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাত)-এর তা’লিম বা প্রশিক্ষণ দেয়া।সূরা আলে-ইমরান ৩:১৬৪১৪। আল­াহর কিতাব ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়া। সূরা আন-নাহল ১৬:৪৪

মহানবি স.-এর কয়েকটি অধিকার১। তাঁর প্রতি যথার্থ অর্থে ইমান আনা অর্থাৎ, তাঁর আনীত বিষয়াবলিকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা,২। তাঁকে উচ্চতর সম্মান করা, তাঁর ও তাঁর সংশ্লিষ্ট যে কোন কিছুর প্রতি আদব দেখানো,৩। তাঁর আনীত দীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালানো এবং৪। তাঁর আনীত কুরআন মাজিদ-এর বিধান জানা ও মানা। সূরা আল-আ’রাফ ৭:১৫৭৫। তাঁর কথা/কাজ/সমর্থন-এর প্রতি সর্বাত্মক ভক্তি ও আনুগত্যের মনোভাব রাখা। সূরা আন-নিসা ৪:৫৯২৬। তাঁর প্রতি (বেশি-বেশি) সালাত বা দরুদ পাঠ এবং৭। সম্মানের সাথে তাঁর প্রতি সালাম৩ পেশ করা। সূরা আল-আহ্যাব ৩৩:৫৬

মুআজ বিন জাবালকে দেয়া নবিজি স.-এর শেষ উপদেশহজরত মুআজ বিন জাবাল রা. বলেন, (প্রশাসক হিসেবেইয়ামানের পথে রওয়ানা হওয়ার সময়) আমি আমারবাহনের পা-দানিতে পা রাখার পর রাসুলুল­াহ স. আমাকে সবশেষে যে উপদেশটি দিয়েছিলেন, তা এই : মানুষের জন্যে তোমার চরিত্রকে সুন্দর করবে (মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে)। মুআত্তায়ে মালিক

২ টি বিষয় পাকাপোক্ত করে নাওহজরত হুজায়ফা রা. বলেন, রাসুলুল­াহ স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা এ বিষয়ে মনকে পাকাপোক্ত করে নাও যে, ১। অন্যরা অনুগ্রহ না করলেও তোমরা অনুগ্রহ করবে এবং ২। অন্যরা জুলুম বা অবিচার করলেও তোমরা অবিচার করবে না (বরং সুবিচার করবে)। তিরমিজি

১টি সৌভাগ্য ও ২টি দুর্ভাগ্যআবদুল­াহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসুলুল­াহ স. ইরশাদ করেছেন, ১। আল­াহ তাআলার ফয়সালা বা সিদ্ধান্তে রাজি থাকা ভাগ্যের ব্যাপার। ২। আর আল­াহ তাআলার কাছে কল্যাণের আশা না রাখা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। ৩। আবার আল­াহ তাআলার নির্ধারিত তাকদিরে সন্তুষ্ট হতে না পারাও দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। আহমাদ, তিরমিজি

যে গুণের কারণে দোজখ হারাম হবেদোজখের আগুন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে হারাম, যার ১। মেজাজ কর্কশ নয় বরং নরম, ২। যে (অহংকার না করে মানুষের সাথে) মিশুক এবং ৩। স্বভাবগতভাবেই বিনয়ী। আবু দাউদ, তিরমিজি

ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণের উৎস ৪টিহজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল­াহ স. ইরশাদ করেছেন, ৪টি বিষয় যে ব্যক্তির অর্জিত হয়ে যায়, সে ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ লাভ করে থাকে ১। কৃতজ্ঞ অন্তর, ২। জিকিরকারী জিহŸা, ৩। ধৈর্যশীল দেহ এবং ৪। এমন স্ত্রী যে নিজের ব্যাপারে ও স্বামীর ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে খেয়ানত করতে চায় না৪। বায়হাকি

মানুষের অবস্থা ২টি; করণীয়ও ২টিপ্রতি মুহূর্তেই মানুষ ১। হয় অনুকূল, ২। না হয় প্রতিক‚ল অবস্থার সম্মুখীন থাকে। ১। প্রথম অবস্থায় তাকে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২। দ্বিতীয় অবস্থায় সবর করতে বলা হয়েছে। অতএব, শুকরিয়া ও সবর সার্বক্ষণিক কাজ। মুসলমানরা যদি এ বিষয়টি বিস্মৃত না হয়, তবে প্রতি মুহূর্তেই তারা অভূতপূর্ব সুখ ও আনন্দ অনুভব করতে পারবে। হাদিসের মূল থিম অবলম্বনে ‘হায়াতুল মুসলিমিন’

যে গুণের কারণে ক্ষমা করা আল­াহ, নিজের ওপর বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেনইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল­াহ স. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জান কিংবা মালের বিপদে পতিত হয়, অতঃপর তা কারও কাছে প্রকাশ করে না এবং মানুষের কাছে অভিযোগও করে না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া আল­াহ তাআলার দায়িত্ব (হয়ে যায়)। মু’জামুল আওসাত লিত-তবারানি

মিতব্যয়িতা বা খরচে মধ্যপন্থাযে ব্যক্তি ১। মিতব্যয়িতা (খরচের ক্ষেত্রে কৃপণতা ও অপচয়ের মধ্যবর্তী পন্থা) অবলম্বন করে, সে অভাবগ্রস্ত হবে না। ২। আর অপব্যয়ে সম্পদ থাকে না। আসকারি

চুপ থাকার পুরস্কারচুপ থাকার কারণে মানুষের যে মর্তবা অর্জিত হয়, তা ৬০ বছরের নফল ইবাদাতের চেয়ে উত্তম। মিশকাতুল মাসাবিহ

হে আবু বকর, ৩ টি বিষয় বাস্তব সত্য১। প্রতিশোধ বর্জন = যে বান্দার প্রতি অবিচার করা হয় অতঃপর সে নিছক আল­াহকে খুশি করার জন্যে প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকে, আল­াহ তাআলা তাঁকে সাহায্য করে থাকেন।২। আত্মীয়তা সংরক্ষণ = যে বান্দা আত্মীয়তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে দানের দরজা খুলে দেয়, আল­াহ তাআলা তার ধন-সম্পদ বাড়িয়ে দেন।৩। হাতপাতার অভ্যেস = যে বান্দা ধন-সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সৃষ্টির কাছে প্রার্থনার দুয়ার খোলে, আল­াহ তাআলা তার দারিদ্র্য বৃদ্ধি করতে থাকেন। মিশকাত

আল­াহর দয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে যে হতভাগাযাদের অন্তরে অন্যের প্রতি দয়া-মায়া নেই, তারা আল­াহর রহমাত থেকে বঞ্চিত থাকবে। বুখারি, মুসলিম

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিকতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিআবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল­াহ স. ইরশাদ করেছেন,১। কুধারণা = তোমরা নিজেদেরকে কুধারণা থেকে বাঁচাও; কেননা, কুধারণার বশবর্তী হয়ে যে কথা বলা হবে, তা সর্বাধিক মিথ্যা হবে।২-৩। ছিদ্রান্বেষণ ও গোয়েন্দাগিরি করা = অন্যের ব্যাপারে তথ্যসংগ্রহে (ছিদ্রান্বেষণে) লিপ্ত হয়ো না এবং আড়ি পেতো (গোয়েন্দাগিরিতে লিপ্ত হয়ো) না।৪-৫। হিংসা ও শত্রæতা = পরস্পর হিংসা ও শত্রæতা রেখো না। বরং তোমরা আল­াহ বান্দা হয়ে যাও এবং পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে জীবনযাপন কর। Ñবুখারি, মুসলিম

সর্বোৎকৃষ্ট বান্দা, সর্বনিকৃষ্ট বান্দা১। আল­াহর সর্বোত্তম বান্দা তারা, যাদেরকে দেখলে আল­াহর কথা স্মরণ হয়।২। আর সর্বনিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা একের কথা অন্যের কাছে বলে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে এবং আল­াহর নেক বান্দাদেরকে কোনো গুনাহে লিপ্ত করার অথবা কোনো বিপদ ও দুশ্চিন্তায় জড়িত করার চেষ্টা করে। Ñমুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি

আল­াহ, ২ ব্যক্তির কাছ থেকে বিলম্বে হলেও প্রতিশোধ নেবেনআল­াহ তাআলা তাঁর ইজ্জাত ও প্রতাপের কসম খেয়ে বলেন, ১। আমি দ্রæততার সাথে অথবা বিলম্বে হলেও জালিমের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিব; ২। আর প্রতিশোধ গ্রহণ করব তার কাছ থেকেও, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও নির্যাতিতকে সাহায্য করে না। Ñআবুশ শায়খ

৪টি পাপের ৪টি শাস্তিহজরত আবদুল­াহ ইবনে উমার রা. বর্ণনা করেন, আমরা ১০ ব্যক্তি রাসুলুল­াহ স.-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে ৪টি বিষয়ে আল­াহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছিÑ১। যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকাশ্যে নির্লজ্জ কর্মকাÐ হতে থাকবে, তখন তারা প্লেগ অথবা এমন সব মহামারিতে আক্রান্ত হবে, যা তাদের মুরব্বিদের সময় কখনও হয় নি।২। যখন কোনো সম্প্রদায় পরিমাপ ও ওজনে ত্রæটি করবে, তখনই তারা দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জুলুমের শিকার হবে।৩। কোনো সম্প্রদায় যখন যাকাত দেয়া বন্ধ করবে তখন তাদের থেকে আল­াহর রহমাতমূলক বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে।৪। যখন কোনো সম্প্রদায় ওয়াদা ভঙ্গ করবে, তখন তাদের ওপর ভিন্ন সম্প্রদায়ের শত্রæকে চাপিয়ে দেয়া হবে, যারা বলপূর্বক তাদের ধন-সম্পদ লুট করে নেবে। Ñইবনু মাজাহ

শাসক জালিম হলে শাসিতের অন্যতম করণীয়হজরত আবুদ্ দারদা রা. বলেন, রাসুলুল­াহ স. বলেন, আল­াহ তাআলা (হাদিসে কুদসি) ইরশাদ করেন, আমি হচ্ছি সর্বশক্তিমান আল­াহ, আমি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা মা’বুদ নেই। আমিই রাজা-বাদশাহদের মালিক এবং রাজাদের রাজা, সমস্ত বাদশাহর অন্তর আমার (কুদরতের) মুঠোয়। বান্দারা যখন আমার আনুগত্য করে (আদেশ-নিষেধ মেনে চলে), তখন আমি শাসকদের অন্তরকে দয়া ও হৃদ্যতার সাথে তাদের দিকে ফিরিয়ে দেই। আর বান্দারা যখন আমার অবাধ্যতা করে, তখন আমি তাদের (শাসকদের) অন্তরকে শাসিতদের প্রতি কঠোর ও নিষ্ঠুর করে দিই। ফলে তারা জনগণকে বিভিন্নভাবে কঠিন যন্ত্রণা দিতে থাকে।সুতরাং তোমরা তখন ১। তোমরা শাসকদেরকে বদদোআ দেয়ার; ২। বরং নিজেদেরকে আল­াহর জিকিরে (ইবাদাতে) মশগুল রাখো এবং ৩। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে (ভয় ও বিনয়-এর সাথে) স্মরণ করো, যাতে আমি তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে যাই। Ñআবু নুআইম ফিল-হিলইয়াহ। + আল-মু’জামুল কাবীর লিত-তাবরানী; সূত্র: মেশকাত শরীফ, হাদিস নং ৩৫৫১

গ্রন্থপঞ্জি১। আল-কুরআন২। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. অনূদিত ‘ওসওয়ায়ে রসূলে আকরাম (সাঃ)’ গ্রন্থ (মূল রচয়িতা : আরেফ বিল­াহ ডা. মো. আবদুল হাই)৩। এম, আফলাতুন কায়সার অনূদিত মিশকাতুল মাসাবিহ-এর অনুবাদ, ৭ম খÐ, কিতাবুল ইমারাত। [রচনাকাল : ২১ অকটোবর ২০২০ বুধবার, টিকাটুলি, ঢাকা।]

১ এই মর্মের আরও আয়াত-এর জন্যে দেখুন : ২:১২৯ ; ২:১৫১ ; ৬২:২।২ হুবহু বা একই ভাববাহী বক্তব্যের জন্যে আরও দেখুন : ৩:৩১ ; ৩:৩২ ; ৪:৬৫ ; ৪:৮০ ; ৫:৯২ ; ২৪:৫৪ ; ২৪:৬৩ ; ৩৩:৩৬ ; ৪৭:৩৩ ; ৫৯:৭ ; ৬৪:১২। এসব আয়াত দ্বারা জানা যায়, দিনি ব্যাপারে নবিজি স.-এর কথা, কাজ এবং ইচ্ছা এমনকি পার্থিব বিষয়েও তাঁর কোনো সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করা যায় না।৩ সালাত ও সালাম-এর ভাষা = এক বাক্যে সালাত (দরুদ বা রহমাত কামনা) ও সালাম পাঠের (শান্তির দুআ করার) সহজ ভাষা হতে পারেÑ ‘আস-সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ অথবা, ‘সল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম।’৪অতএব, আমানাতদার, সতী ও বিনয়ী নারীকে স্ত্রী হিসেবে বাছাই করার চেষ্টা করা জরুরি/ফরজ।

Comments

comments