জীবন ও কর্ম

প্রিয় মুবীন ভাই : সেকালের নাতের রাজা একালের অভিযাত্রিক সম্পাদক

By mumin

April 15, 2018

তখন আমি হাবিবুল্লাহ আবাদের ৫ম শ্রেণির ছাত্র। ভোলার সালাহ উদ্দিন ভাইয়ের হাত ধরে প্রথম বক্তৃতায় ডায়াসে দাঁড়াই। একবার কি এক উৎসবকেন্দ্রিক উপস্থিত বক্তব্যে ১ম স্থান অধিকার করে পুরস্কৃত হই প্যাকেট খুলতেই চোখে পড়ে মাসিক কুড়িমুকুল। সেই থেকে আমি কুঁড়িমুকুলে একজন নিয়মিত পাঠক। মাসিক কুঁড়িমুকুলের সুবাধে পরিচিত হই সেকালের নাতের রাজা কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন ভাইয়ের সাথে। যিনি একালের পরিশ্রমী একজন জনপ্রিয় শব্দ শ্রমিক ও মাসিক অভিযাত্রিক সম্পাদক। ছারছীনা থেকে প্রকাশিত মাসিক কুঁড়িমুকুলের মাধ্যমে তখন মুবীন ভাইয়ের রাসুল স্তুতির সুরভী ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বিশেষতঃ বৃহত্তর খুলনা ও বরিশালে ইসলামী সাহিত্য অনুরাগী এমন একজন পাঠক খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিল, যারা অগ্রজ প্রতীম কবি রফীকুল ইসলাম মুবীনের নাতে রাসুল পাঠ করে বিমোহিত হননি! দেশের কোথাও রাসুলগীতি পরিবেশিত হলে কমচে-কম দুয়েকটি নাত আমরা শুনে থাকি, যার রচয়িতা মুবীন ভাই। সেই থেকে মুবীন ভাইয়ের সাথে আমি অদৃশ্য এক সম্পর্ক সুতোয় বন্দী হই। একবারের এক মজার ঘটনা বলি, তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা চলছিল। ‘তোমার প্রিয় কবি’ শিরোনামে বাংলায় একটি রচনা লিখতে হবে। যেহেতু এর আগেই মুবীন ভাইয়ের লাইফ প্রোফাইল আয়ত্বে ছিল। ব্যাস! আমার ‘প্রিয় কবি’র জায়গায় লিখে দিলাম মুবীন ভাইয়ের জীবনী। রচনার শুরুটা বোধহয় এরকম ছিল- বিশ্বনাথের একটি ছেলে পড়তে গেলেন ছারছীনা সেই ছেলেটির জীবনকথা না বলে আজ পারছি না! এরপর ভাগ্যক্রমে ২০০৬ সালে আমি সিলেট চলে আসি। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই বুরাইয়া কামিল মাদরাসায়। সেই থেকে সেকালের ‘নাতের রাজা’ প্রিয় কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেতে উদগ্রীব হয়ে রই। একসময় মুবীন ভাই হয়ে যান বারো আলিমের স্মৃতিধন্য বুরাইয়া গ্রামের দামান। মনে-মনে ভাবি, এই বুঝি পেয়ে গেছি প্রিয় নাতের রাজার নেক দরশন! কিছুদিন যায়, বন্ধুবর সংগীত শিল্পী আবুল হাসান মো. রফীকুল হকের মাধ্যমে মুবীন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয়। কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি-মুবীন ভাই আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি, আমি আপনার রচিত নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমৃত সুধা পানে পিয়াস মিটাই প্রতিদিন। ১২.১২.২০১২ ইং ম্যাজিকাল ডে তে আমার প্রথম কবিতার বই ‘কাঁদে কবি অবিরাম’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজন করি বুরাইয়া কামিল মাদরাসায়। আমন্ত্রণ জানাই একালের অভিযাত্রিক সম্পাদক মুবীন ভাইকে। তিনিও আসেন অনুষ্ঠানে। সেই থেকে এই; কাছ থেকে দেখি, বলি, বসি এই প্রিয় তারকাটিকে।

বিনয়ের রুমালে নিজের যোগ্যতা ও গুণের পাহাড় ঢেকে রেখে যারা পর্দার আবডালে থেকে ব্যক্তি, ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিজের সবটুকু মেধা বিলিয়ে দিয়ে থাকেন, কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন তাদের একজন। বাংলা সাহিত্যে তার বয়সী কোন গীতিকার এতো বেশি প্রিয় রাসুল স. এর প্রশংসাগীতি রচনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। বছর পাঁচেক আগে বিশ্বনাথের এই কৃতিসন্তান কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন ভাই ছারছীনা আর ফুলতলী দরবার থেকে লব্দ অভিজ্ঞতা আর আকাবীরগণের নেক ছোহবতের সবটুকু নির্যাস উজাড় করে পাঠকের জলসায় হাজির হন প্রিয় পত্রিকা অভিযাত্রিক নিয়ে। তখন মনে-মনে ভাবছিলাম, প্রতিদিনই তো কত-শত পত্রিকা/ছোট কাগজের জন্ম হয় এদেশে। অব্যবস্থাপনার দরুণ রাত না পোহাতেই ফের বিলুপ্ত হয় দৃষ্টির অগোচরে। মুবীন ভাই পারবেন তো এই শিশু পত্রিকাটিকে পরিপুষ্ট করে ফুলে-ফলে সাজিয়ে তৃষ্ণার্ত পাঠকের পিয়াস মিটাতে? আমি সহ সকল নিরাশ সাহিত্যমোদীদের ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে মুবীন ভাই এগিয়ে চলেছেন। এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় পত্রিকা অভিযাত্রিক। এতোদিনে এই শিশু পত্রিকাটি হামাগুড়ি দিতে-দিতে বৃহত্তর সিলেট পেরিয়ে দেশশুদ্ধ পাঠকের কলিজায় জায়গা করে নিয়েই শুধু ক্ষ্যন্ত থাকেনি; বর্তমানে অভিযাত্রিকের জয়যাত্রা চলমান গোটা বিশ্বব্যাপী। রাসুল প্রেমে উজ্জীবিত মুবীন ভাইয়ের সততা, বদান্যতা, যোগ্যতা ও পরম মমতার দ্যুতি অভিযাত্রিকের প্রতিটি পাতায় মিশে থাকলে মাসিক অভিযাত্রিক একদিন আমাদের ইসলামী সাহিত্যে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবে বলে বিশ্বাস। অল্পদিনে মাসিক অভিযাত্রিকের সাফল্যে যারা জ্বলে পুড়ে ছারখার, তাদের শুভ দৃষ্টি উপেক্ষা করে ‘মুখর তারুণ্যের দৃপ্ত মিছিল’ এ একদিন মিলিত হবে অভিযাত্রিক। সেকালের নাতের রাজা একালের অভিযাত্রিক সম্পাদক; প্রিয় কবি রফীকুল ইসলাম মুবীন ভাই। আপনি ও আপনার পত্রিকা অভিযাত্রিক স্বমহিমায় বেঁচে থাকুক আমার মত সকলের অন্তরে।

Comments

comments