অন্যান্য

করোনা ভাইরাস এপেডেমিক থেকে পেনডেমিক: একটি পর্যালোচনা

By mumin

April 15, 2020

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারীর নাম করোনা ভাইরাস বা (COVID-19)। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সারা পৃথিবী ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে পুরো বিশ্বের ১৯৫টা দেশের মধ্যে ১৭৭টা দেশ অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় ৯১% দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। বাকিরাও যে কোন মুহূর্তে আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষায়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের অনুন্নততম দেশগুলো পর্যন্ত আতঙ্ক ও অনিরাপত্তায় দিনাতিপাত করছে। রাতের ঘুম, দিনের ব্যস্ততা সহ সব কিছু যেন বিলীন হয়ে গেছে অনেকেরই। সব ধরনের সতর্কতা ও নানান বিধিনিষেধ মেনে চলার পরও তাদের মনে ক্রমাগত এই অশান্তি থেকেই যাচ্ছে। সঠিকভাবে কি করলে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব তার জবাব নেই কারোর কাছে। সারা পৃথিবী এই বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে মুক্তির আলো খুঁজছে।কখন শেষ হবে এই মহামারী, কেউই সঠিক ভাবে বলতে পারছেনা! ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ও ইতালি হেল্থ মিনিষ্টির উপদেষ্টা Walter Ricciardi বলছেন, সম্ভবত আগামী মে, জুন নাগাদ আমরা করোনা ভাইরাস মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব। কিন্তু এই আশ্বাসের কথায় কেউই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেনা! এদিকে জনপ্রিয় পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ান (The Guardian) এর রিপোর্টার Will Hutton বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বলছেন যে, ” করোনা ভাইরাসের বিশ্বায়ন আদৌ শেষ হবেনা, তবে ব্যাপকহারে পরিবর্তন ভালোর দিকেই আবর্তিত হচ্ছে” । পরাশক্তি চীন থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে হুপেই প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ও চীনের বৃহত্তম একটি নগরী “উহান নগরী” থেকে সূচনা হয় রহস্যজনক এই ভাইরাসটির। ইতোমধ্যে চীন সহ পুরো বিশ্বে কয়েক লক্ষ বনি আদমের মধ্যে এই সংক্রামক ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার লোক ইতিমধ্যে মৃত্যু বরন করেছে। চতুর্দিকে চলছে লাশের মিছিল। প্রাথমিকভাবে ইউহানের সামুদ্রিক খাবার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বর্তমান করোনা ভাইরাসের অন্যতম বাহক হল মানুষ। মানুষের সংস্পর্শেই সংক্রমিত হচ্ছে এই করোনা ভাইরাস। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা যা নিশ্চিত করলেন তা শুনে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। নোবেলা প্রকৃতির করোনা ভাইরাস হলো ফ্ল্যাবিও ভাইরাস, যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং অচিরেই কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর আশংকা করা হচ্ছে । শরীরে ঢোকার পর ভাইরাসটির লক্ষণ প্রকাশিত হতে সময় লাগে কমপক্ষে চার/পাঁচ দিন। প্রাথমিকভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলো প্রচন্ড জ্বর, শুকনো কাশি, শ্বাস কষ্ট। পরিনামে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া, নিউমোনিয়া এবং সবশেষ মৃত্যু।এতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না বলে এই ভাইরাসকে দমন করা খুবই কঠিন। অধিকাংশ গবেষকরা জানিয়েছেন, আপাতত করোনার কোন প্রতিষেধক নেই , নেই চিকিৎসাও, তবে চলছে গবেষণা ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো হাত ভালোভাবে ধোয়া, ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকা এবং মুখে মুখোশ পরা।হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডক্টর গ্যাব্রিয়েল লিউং বলেন ‘হাত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বারবার হাত ধৌত করতেে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষবেন না, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে’। লিউং আরও বলেন ‘আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, নিজে অসুস্থ না হলেও, অপরের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ পরুন’।করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে অনেক তথ্যই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘চীনারা ইঁদুর, বাদুড়, কুকুর, বিড়াল জাতীয় বন্যপ্রাণী খাওয়ার কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে।করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণ যাই হোক হাদিসে অপরিচিত মহামারী ছড়িয়ে পড়ার যে কারণ উল্লেখ রয়েছে তাহলো ‘অশ্লীলতার ভয়াবহ সয়লাব। মহামারী ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনা জাতির মধ্যে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)।করোনা ভাইরাস অমুসলিমদের জন্য আতংকের কারন হলেও মুসলমানদের জন্য আতংকের কারন নয়। আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মত (মুসলমানদেরকে) এসব অবস্থায় সান্ত্বনা দিতেন। হাদিস শরীফে এসেছে: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারি আল্লাহ তাআলার একটি শাস্তি। তবে তা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত। (বুখারি)যারা আল্লাহ তাআলার উপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে, সেসব লোকের পায়ে যদি কোনো কাটাও ফুটে, তবে তারা আল্লাহর কাছে এর বিনিময় পাবে। সুতরাং যারা মাহামারীর ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য এটি মহামারি নয়। এদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে তাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আসুন এই কঠিন সময়ে মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরাইসলামের দিক নিদের্শনা মেনে চলি। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাকদীরের উপর খুশী থাকার চেষ্টা করি। সাওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্য ধারণ করি। আল্লাহর কাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য কামনা করি। বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি । শিফার জন্য কালিজিরা, জমজম এবং মধু সেবন করি। এবং নিম্নে বর্ণিত দোয়াগুলো প্রতিনিয়ত পাঠ করি। 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’তিরমিজি শরীফে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)।করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মানুষকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন!তথ্যসূত্র: (১): https://eu.usatoday.com/story/news/health/2020/03/15/coronavirus-crisis-end-summer-experts-odds-what-we-dont-know-epic/5053876002/.(২): The guardian, Sunday 8 March 2020. 

Comments

comments