অন্যান্য

ছড়া কবিতায় ফুল ভাবনা

By mumin

November 17, 2016

ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ফুলকে ভালোবাসেনা এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া ভার। আমরা সবাই ফুলকে ভালোবাসি। ফুলের কাছে আসি। ফুলের পাশে বসি। ফুলের ছোঁয়ায় নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করি। নিজের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে চেষ্টা করি ফুলের সংস্পর্শে এসে। ফুলের ভালোবাসায় পুলকিত হই আমরা। ফুলকে নিয়েই আজকের ছোট্ট আয়োজন। ফুলকে নিয়ে আমাদের কবি সাহিত্যিকগণ সৃষ্টি করেছেন হাজারো ছড়া-কবিতা। আমরা কয়েকটি ছড়া-কবিতার অংশবিশেষ আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। এসময়ের আলোচিত ছড়াকার ‘আসলাম প্রধান’ আমার এদেশকে গোলাপ বাগান ভেবেছেন। এদেশকে ভেবেছেন মায়ের কোলহিসেবে। মুক্তা আঁকা প্রজাপতির রূপ দেখেছেন আমাদের এদেশের মানচিত্রে। এদেশের বাগানে। ছড়াকারের ভাষায়-

গোলাপবাগে ফুল ফুটেছে খোকার মুখে বোল, শিশুর হাসি আলোকিত করছে মায়ের কোল।

মুক্তা আঁকা প্রজাপতি ঘাস ফড়িংয়ের গায়, একটু ছুঁয়ে দেখতে তোরা ফুলবাগানে আয়।

হ্যাঁ কবি সত্যিই সুজলা-সুফলা আমার এদেশকে ফুলবাগান ভেবেছেন। আমাদের এই ফুল বাগানকে ফুলে-ফলে সাজানো আমাদেরই দায়িত্ব। ফুলবাগানের মতোই নিরাপদ দেশ গঠনে কাজ করতে হবে আমাদেরকেই। কবিদেরকেই। আমাদের এদেশ হোক ফুল বাগানের মতোই নিরাপদ, সে প্রত্যাশাই আমাদের। আমাদের সকলের। স্বপ্নিল সুন্দর আমার এদেশকে সরষে ফুলের সোনালি ক্ষেতের সাথে তুলনা করেছেন এসময়ের আরেকজন শ্রেষ্ঠ ছড়াকার ‘জগলুল হায়দার’। তিনি শিশির ধোঁয়া সাজে রূপায়িত হতে দেখেছেন আমার এদেশকে। ছড়াকার এদেশের মাঠের ঠোঁটে বাঁশির বাজনা শুনতে পান। বাঁশির সুরে ফুলদেরকে জাগতে দেখেন। এসব ভালোবাসার আকর্ষণে ছড়াকার হয়ে যান পাখি। খুঁজে পান ভালোবাসার পরশ। ছড়াকার ‘জগলুল হায়দার’র ভাষায়-

মাঠ মেতেছে সরষে ফুলে শিশি র ধোয়া সাজে, থেকে থেকে মাঠের ঠোঁটে বাতাস বাঁশি বাজে।

বাতাস বাঁশির শব্দ শুনে প্রাণ জেগেছে ফুলে, তাইনা দেখে পাখি হলাম হঠাৎ মনের ভুলে।

ছড়াকার নিজের দেশকে প্রকৃতির সাজে রাঙিয়ে নিয়েছেন একান্ত আপনার করে। একান্ত হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে এঁকেছেন দেশ মাতৃকাকে। তাই বলি, কবি সাহিত্যিকগণেরা বুঝি এমনই হয়। জীবনকে নিয়ে আপনার করে ভেবেছেন এসময়ের আরেক জন প্রতিশ্র“তিশীল তরুণ কবি। কবি স্বপ্নের ফুলে ভরা দেখেছেন জীবনকে। মননের সাথে প্রকৃতিকে। কাঁচা রোদে শিরশিরে বাদামি দুপুর দেখেছেন কবি। কবির সাধ জেগেছে আকাশের নীলে মেঘ হয়ে মিশতে। ভালোবাসার আকর্ষণে কবি বাতাসের ঠোঁটে বসে আঁকতে চেয়েছেন ফুল। প্রাণের প্রিয়জনের সাথে আহারে মিশতে চেয়েছেন একান্ত আপনার করে। ফুল, পাখি আর আকাশের সাথে হৃদয়ের প্রণয় ঘটেছে আরেকজন কবির। নিভৃতচারী কবি ‘মুসাফির’ ফুলের সাথে ভাব করেছেন। প্রেম করেেছন পাখির সাথে। কিন্তু সবাই কেন যেন তাকে ফাঁকি দিয়েছে। কবির আকুতি হৃদয়বিদারক। কবির ভাষায়-

বৃষ্টি আসেনি চলে গেছে মেঘ আকাশ রৌদ্র খরা, ফুল পাখি হীন হৃদয় মরু শুন্য বসুন্ধরা।

কবি ফুলের মাঝে যেমন ভালোবাসার পরশ পেতে চেয়েছিলেন তা কিন্তু তিনি পাননি। কেন? কী ঘাটতিছিল ফুলের মাঝে? কীসের অভাব রয়েছে ফুলে? এটাই এখন ভাবনার বিষয়। আজকে আবহাওয়ার যে ভারসাম্যহীনতা আমরা লক্ষ্য করছি তা কিন্তু ভাবতে হবে। প্রকৃতির এ বিপর্যয়ের জন্য আমরাই দায়ী। আমাদেরই অবহেলা এর জন্য দায়গ্রস্থ। আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। নইলে আমরাই এক সময় ক্ষতিগ্রস্থ হব। আমরা ফুলকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই জানি। কিন্তু কেন যেন সাম্প্রতিক অনেক কবিতায় তার উল্টো মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা জানি কবিরা সময়কে ধারণ করেন একান্ত আপনার করে। সময়ের অবস্থানকে অনুধাবন করেন কবিগণ। তবেকি কবিরা এমনকিছুই দেখছেন? নাকি অন্য কিছু! তারাই ভালো বলতে পারবেন। কবিরা অন্তরদৃষ্টিদিয়ে যা দেখেন তা অনেকটাই সঠিক। আমরা সাম্প্রতিক ফুলকে ভুল বুঝে চলছি। নারী নামক ফুলের মোহে যখন তাকে রক্তাক্ত করা হচ্ছে তখন কবির ভাবনা এমনই হবে। এমনটিই হবার কথা। ফুল শুকলে আমরা সুগন্ধ অনুভব করি। পুলকিত হই। হই আনন্দিত। আর এসময়ের সমাজচিন্তক এক কবি তারবিপরীত ভাবছেন। কবি ফুলকে কাছে টানতে দেখেন না। ফুলে কবি আর সুগন্ধ পান না। কবি ফুলকে নিয়ে যা ভাবছেন তা সত্যিই দুঃখজনক। কষ্টের অবতারণা ঘটায়। কবি ‘ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ’র ভাষায়- স্বাধীনতার গল্পটা ভীষণ রঙ বদলায় ইদানিং ফসলের মাঠের মতো সবুজ দেখতে দেখতে রক্তিম হয়ে ওঠে শিমুল পলাশ কিংবা রক্ত চূড়ার মতো শাপলা পদ্মের সুঘ্রাণ নিতে গিয়ে দেখি গোবরে পোকারা কিলবিল করছে মহানন্দে।

কবির এচিন্তার সাথে আপনি কতটা একমত তা জানিনা তবে কেন যেন ভাবটা এরকমই এখন। সময় এখন বুঝি রক্তাক্তই মনে হয়। ফুলে যেন আর সুবাস নেই। ভালোবাসার পরশ নেই ফুলের ছোঁয়ায়। আজকে রাস্তা-ঘাটে রক্তাক্ত মানব দেহ। তনুর হৃদয়, রাজনের আতœা, খাদিজার হৃদয়জমিন। জানিনা রক্তাক্ত এ পরিবেশ আবার কবে নাগাদ ফুলে-ফলে সুবাসিত হবে। একজন কবি নাকি সময়কে ধারণ করেন তার কবিতায়। ছড়ায়। গল্পকিংবা প্রবন্ধ বা নিবন্ধে। ক্ষত-বিক্ষত এ সময়কে নিয়ে নিরালায় ভাবেন আরেকজন প্রবাসি কবি ‘মোহাম্মদ এনামুল হক’। কবি এদেশের অতীতকে ভাবেন। অতীতের পরিবেশে হেঁটে বেড়ান। অতীতকে সামনে এনে এ দীঘল সময়ের অবসান কামনা করেন। কবির প্রত্যাশা তিমির এ সময় কেটে যাবে। আবারো আলোকিত হবে ভূবন। ফুলে-ফলে সুভাসিত হবে জগত। সবুজ আবরণে আবারো জেগে উঠবে স্বপ্নীল বসুন্ধরা। কবির ভাষায়-

ধূসর-স্মৃতি হাঁটে একা মনের গহীন কোণে ফুলপাখিরা জেগেজেগে রাতের প্রহর গোণে।

সবার মনে জাগে আশা ফুটবে আলো হেসে তিমির কেটে আসবে সকাল দীঘলরাতের শেষে।

কবির আশার সাথে আমরাও আশাবাদি। একদিন তিমির এ সময় কেটে যাবে নিশ্চয়ই। মানুষের হৃদয়-মনে আবারো প্রজ্বলিত হবে জ্ঞানের আলো। সমাজকে ভালো করতে আবারো ফুলের ঘ্রাণে পুলকিত হবে মানব আতœা। সেই প্রত্যাশা রাখতেই পারি। জয়হোক এ আশার। স্বপ্নীল সুন্দর হোক আগামীর বসুন্ধরা।

Comments

comments