ধারাবাহিক উপন্যাস

প্রিয়তমা

By mumin

July 17, 2023

(পূর্ব প্রকাশের পর)-কি শুরু করেছিস লামিয়া। আমরা পরশু চলে যাবো।-আমার ভালো লাগছেনা আম্মু।-তোর কোথায় ভালো লাগে বলতো? সবসময় বাসা ছাড়া তোর কোথাও ভালো লাগে নাকি।-আম্মু প্লিজ।-সরবি এখান থেকে। ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, বুঝাও একটু তোমার আদরের মেয়েকে।-বাবা বলে উঠলো, কি হয়েছে আমার মেয়ের?-বাসায় যাওয়ার জন্য জিদ ধরে বসে আছে।-কি হয়েছে আব্বুকে বলো মা?-আব্বু ওখানে আমার ভালো লাগেনা।-কেন?-ওখানে পিয়াস ভাইয়ার বন্ধু ছাড়া আরো অনেক ছেলেরা আছে আমার অস্বস্তি লাগছে।-কিন্তু বাসায়ও তোমার একা থাকা ঠিক হবে না মা। আর লাবিব আজ এখানে থাকবে। একটু কষ্ট করে থাকো। তোমার আম্মু তো আছে।-ফারিহা বললো, আব্বু তোমার ছোট মেয়ের ঢং দেখে বাঁচিনা যত্তসব! মনে হয় ও একলা পর্দা করে দুনিয়াতে আর কোন মানুষ নাই।-উনি ফারিহাকে ধমকে উঠে, তুমি চুপ থাকো। সবাইকে নিজের মত ভেবো না। ও তোর তোমার মতো না।লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো মা আমার কথা শুনো।-লামিয়া আচ্ছা আব্বুপরদিন সবাই পলির শশুররবাড়ি গিয়েছে। লামিয়া ওর আম্মু আর খালামণি ছাড়া। সন্ধ্যার সময় সবাই ফিরে আসাতে বাড়ি আবার সরগরম হয়ে উঠেছে। নতুন বর বউ কে আনা হয়েছে। জামাই বরণসহ কত কি হাবিজাবি রীতিনীতি পালন করার পর বাড়িটা শান্ত হলো। তারপর জামাই আদর তো চলছে তোড়জোড়ে। পলির চাচাতো ফুফাতো বোনরা নতুন দুলাভাইয়ের সাথে সেইকি আড্ডা জুড়িয়ে দিয়েছে। কি অসভ্য মেয়েগুলা অন্যের জামাইয়ের সাথে এতো কিসের গাঁ ঘেষাঘেষি অসহ্য!আর এদিকে পলি আসার পর থেকে লামিয়ার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। শশুড়বাড়ি কে কি দিলো, কি কি করেছে ওকে নিয়ে যাওয়ার পর। লামিয়ার এই মুহূর্তে ভালো লাগছে না এসব শুনতে। তাই পলিকে বললো, কিরে তুই নতুন জামাই রেখে আমার সাথে গল্প করছিস। এখন তোর উচিত তোর বরের পাশাপাশি থাকা। তা না তুই এখানে বসে আছিস যা বরকে গিয়ে সময় দে।এমনিতে লামিয়ার মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। পিয়াস ভাইয়ার দুইটা বন্ধু কাল থেকে ওকে একরকম বলতে গেলে মানসিক টর্চার করে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে একটু নিরিবিলিতে বসার কোন একটা জায়গা নাই। তার উপর চ্যাঁচড়া দুইটা পিছনে লেগেই আছে। কি একটা অভদ্রতা। যেখানে যাচ্ছে সেখানে ওরা। কাউকে কিছু বলতে ও পারছে না সইতেও পারছে না । কেলেংকারী ঘটে যাবে কাউকে বললে কিনা কি বুঝে বসে থাকে। উল্টা ঝামেলা হবে। তাই সকাল হওয়ার অপেক্ষায় আছে ও। সকালে আম্মু না গেলে ও চলে যাবে।পরদিন সকালে লামিয়া খালামণিকে বুঝিয়ে বাসায় চলে আসলো ওর ভাইয়ের সাথে।আজ একমাস ধরে ফারিহাকে নিয়ে ওর পরিবারের লোকেরা অনেক বিপাকে আছে। মেয়েটা কোন ভাবেই আর ওর জামাইয়ের কাছে ফিরবে না। প্রয়োজনে রাহাতকে ও ডিভোর্স দিবে তারপরও যাবে না। অনেক ঝামেলা চলছে দুজনের মাঝে। ওর মা বাবা ওকে অনেক জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারেনি। বাবা মা ওর চিন্তায় অস্থির। লামিয়া উনাদের আশ্বস্ত করলো যে ও বোনকে বুঝাবে এটা নিয়ে যেন উনারা চিন্তা না করে।ফারিহা বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো এই মুহুর্তে লামিয়া দরজায় নক করলো আপু ভিতরে আসবো?-আয়-তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?-হুম সোমার বার্থডে পার্টি আছে আজ ওখানে যাচ্ছি। তুই কি কিছু বলবি?-হুম তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।-এখন সময় নাইরে। রাতে ফিরলে বলিস।-আচ্ছাফারিহা বেরিয়ে গেলো। লামিয়া এই মুহুর্তে ওকে বাহিরে বেরুতে নিষেধ করতে পারতো কিন্তু করেনি। কারণ ফারিহা রেগে গেলে মূল কথাগুলো আর বলা হতো না। তাই আস্তে ধীরে ঠান্ডা মাথায় বুঝাতে হবে। এভাবে হুটহাট করে তো সম্পর্ক করা যায় না আবার ভাঙ্গা ও যায় না।ফারিহা ফিরলো রাত এগারোটায়। তাই তখনোও কিছু বলেনি। সকালে ফারিহা উঠার আগেই লামিয়া বোনের রুমে গিয়ে বসে রইলো। আজ যে করেই হোক বলতে হবে। যত দেরি হবে ততই সমস্যা বাড়বে।ফারিহা চোখ খুলে ছোট বোনকে দেখে বললো, তুই এতো সকালে আমার রুমে কেন?-আপু তুই বোধহয় ভুলে গেছিস আমি তোকে বলেছি তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।-ও সরি, সরি, ভুলেই গেছিরে। বল কি বলবি?-আগে ফ্রেশ হয়ে নে।-ফারিহা ফ্রেশ হয়ে এসে বল কি বলবি?-তুই রাহাত ভাইয়ার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? তুই কি ও বাড়িতে আর ফিরে যাবিনা?-ওই বেয়াদবটার সাথে সংসার করার প্রশ্নই আসে না। আমার কথার কোন দাম নেই ওর কাছে। মা বাবা বলতে বলতে জানোয়ারের বাচ্চাটা পাগল হয়ে আছে। অসভ্য লোক একটা!-আপু সংযত ভাষায় কথা বল। উনি এখনো তোর হাজব্রেন্ড। কতবড় পাপ করে ফেলেছিস কথা গুলো বলে জানিস?-হাজব্রেন্ড তো কি হয়েছে? তাকে কি আমার মাথায় তুলে নাছতে হবে? যাতো জ্ঞান দিবি না আমাকে।-লামিয়া এবার বোনকে জড়িয়ে ধরে আপু প্লিজ তুই ঠান্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শুন প্লিজ আপু। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি আপু। তাই তোর কোন ক্ষতি আমি চাই না-ফারিহা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো, হুম বল।-দেখ আপু আমাকে তোর ছোটবোন না বন্ধু হিসাবে জেনে কথাগুলো শুনবি? আপু সম্পর্ক কোন ঠুনকো জিনিস নয় যে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবি। একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিস। রাগের মাথায় এতবড় সিদ্ধান্তটা নিস না।-ভাবাভাবির কিছু নেই আমি ওর সাথে থাকতে পারবো না।-আপু প্লিজ মাথা গরম করিস না। তুই জানিস আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজটা কি? ডিভোর্স বা তালাক। আমাদের সমাজে ডির্ভোসী নারীকে কেউ ভালো চোখে দেখে না। প্রতি পদে তোকে অপদস্ত হতে হবে। বিয়ে নামক সম্পর্কটা এমন একটা সম্পর্ক যা একবার ভেঙ্গে গেলে চাইলে তুই আবার জোড়া লাগাতে পারবি না।তোদের এতো ভালোবাসা ছিল আজ কেন একজনের প্রতি আরেকজনের এতো বিরস ভাব? তিক্ততায় ভরে গেছে তোদের সম্পর্কে। কারণ কি জানিস? কারণ ভালোবাসার প্রধান এবং প্রথম দুটি শর্ত সম্মান এবং বিশ্বাস।তোরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করিস না, সম্মান দিতে জানিস না। একজনের প্রতি আরেকজনের শ্রদ্ধাবোধ নেই তোদের। তোরা আজো একজনকে ভালোবাসিস কিন্তু নিজেদের জন্য তা প্রকাশ করতে পারিস না।ভাইয়াকে যতটা জানি ও তোর মতো এতো বেশি আধুনিক মন মাইন্ডের না। কিছু মনে করিস না আপু তুই একটু বেশি উশৃঙ্খল।-ফারিহা কান্না কন্ঠে বললো, তুই আমার বোন হয়ে এরকম দোষারোপ করছিস আমাকে?ও ওর বাবা মার কথায় উঠবস করে সবসময়। বিয়ের আগে এই করবো সেই করবো বলে কত কি বলেছে। আর এখন আমার দাম নাই। রাহাত আমাকে একটু ও ভালোবাসে না। বাবা মাই সব।-লামিয়া মুচকি হেসে বললো, কে বলেছে ভালোবাসে না আসলে তোর হিংসে হচ্ছে ও কেন তোর কথায় চলে না তার জন্য। দেখ তোর হাজবেন্ড হওয়ার পরও ভাইয়া তাদের ছেলে। বাবা মায়ের জন্য ভালোবাসা আর স্ত্রীকে ভালোবাসা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। তুই তোর জায়গা উনারা উনাদের জায়গায়। বেচারা কি করবে বলতো একদিকে বাবা মা যারা তাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে । আর অন্যদিকে তুই যে উনার সারাজীবনের চলার পথের সঙ্গী। তার পক্ষে কাউকে বাদ দেয়া সম্ভব নয়।-কিন্তু ও কি বিয়ের পর থেকে কখনো আমাকে সময় দিয়েছে । কখনো বুঝতে চেয়েছে আমি কি চাই?-তুই বুঝতে চেয়েছিস কখনো তাকে? সারাদিন তোর কাটে বাহিরে বাহিরে। সে পুরুষ মানুষ সারাদিন অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে। ঘরে এসে যদি স্ত্রীর হাসিমাখা মুখ না দেখতে পায় তাহলে তার মনে শান্তি থাকে। তুই উনি বাসায় ফিরতে না ফিরতে তার কাছে তার বাবা মায়ের নামে অভিযোগ শুরু করে দিস তখন কার ভালো লাগে।সে ফিরেছে আগে তার সাথে একটু হাসিমুখে কথা বলবি পরে আস্তে ধীরে সব বুঝিয়ে বলবি। আপু তোর উগ্র মেজাজ সেটা তুই ভালো করে জানিস আমি আর কি বলবো। শালীনতা তোর মাঝে নাই বললেই চলেতুই যেভাবে মর্ডান ড্রেস পরে চলাফেরা করিস এটা সবার চোখেই লাগবে। বাড়ির বউ যদি রাস্তার মেয়েদের মত করে চলাফেরা করে তখন কেউ সহ্য করবে না। তুই কালও রাত করে ফিরেছিস এভাবে প্রায় প্রতিদিন তুই ফিরিস। এটা তোর বাবার বাড়ি তাই কেউ কিছু বলেনা। কিন্তু মনে রাখতে হবে ওটা তোর শশুরবাড়ি। শুন মাঝে মাঝে পরের স্বার্থে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। হয়তো তুই তার মত হবি নয়তো তাকে তোর মত গড়ে নিবি। কিন্তু তোর চলার পথ সঠিক নয় তাই ভাইয়া তোর মত হতে পারেনি। তাই তোকে উনার মনের মত হতে হবে, তবেই শান্তির দেখা পাবি নয়তো না।

Comments

comments