(পূর্ব প্রকাশের পর) শেষ পর্ব পার্টির মহাসচিব এতো দিন ধরে দেশের বাইরে থাকায় সব ধরণের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গিয়েছিল। ‘এরোমা’ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও কর্মচাঞ্চল্য হারিয়ে ফেলেছিল। তাই অধ্যাপক ড. আবু সালেহের দেশে আসা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ড.আশরাফের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে অনেক ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন ড. আবু সালেহ। কিন্তু তার কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসেনি। ড. আশরাফকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে সব চেষ্টা তিনি করেছেন। অবশেষে জন মেড়ীর পরামর্শে বিশেষ কিছু কাজ বাস্তবায়ন করতে তাকে দেশে আসতেই হলো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাসপোর্ট ও নাম পরিচয় বদলে বিশেষ উচ্চপদবী পরিচয়ে তিনি দেশে ঢুকতে চাইলেন। বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে বিশ্রামাগারে ঢুকার সাথে সাথে বিশেষ ধূম্র টিম তাকে সনাক্ত করে ফেললো। এই ধূম্র টিমটি প্রস্তুত করা হয়েছিল ড.আবু সালেহের ডিএনএ সনাক্ত করে শুধু তথ্য প্রদান করতে। বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে এই ধূম্র টিমের সদস্য কয়েক মাস থেকে ওৎ পেতে আছে। ড. আশরাফের কাছে সাথে সাথে তথ্য পাঠালো ধূম্র টিম। ড.আশরাফ ঠিক তখন তিনটি শত্রু নভোযানের মুখোমুখি। তার দায়িত্বে মহা জরুরী রকেটের কন্ট্রোল প্যানেল। আর চোখে টেলিস্কোপের পর্দায় মহাদানব তিনটি নভোযান। একটু এদিক সেদিক হলেই তাদের এতোদিনের পরিশ্রম ও আশা মাটির সাথে মিশে যাবে। এতো বিপদের মধ্যেও তথ্যটি জেনে ড.আশরাফের মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠলো। বিপদের ঘনঘটায় মুখ কঠিন করে থাকা বিজ্ঞানী ক্রুরা দেখতে পেলেন না। দেখলে সবাই বেশ বিভ্রান্ত হতেন।
০২ ড.আশরাফ দেখলেন নভোযান তিনটি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। যে কোনো মূহুর্তে এগুলো মিশাইল ছুড়ে মারবে। তাই তিনি আর দেরি না করে সবাইকে বললেন- ‘রকেট ক্র্যাশ হবে, সবাই প্রস্তুত’। কথা শেষ হতে না-হতেই বিশেষ রেজার যন্ত্র থেকে অতি নীল রঞ্জনরশ্মি জাতীয় একটা কিছু ১ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের চারপাশে আবরণ তৈরি করলো। তাদের রকেটটি পাখার মতো কয়েক ঘূর্ণি খেয়ে সোজা উপরে উঠতে থাকলো। কক্ষে বসা ক্রুরা ভয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন। সবাই সিট থেকে মাথা উপুড় হয়ে পড়েই যাচ্ছিলেন। সিটবেল্ট সবাইকে সিটেই সেটে রাখলো। ড. আশরাফ সবাইকে অভয় দিয়ে বললেন-‘আর কোনো ভয় নেই। আগন্তুক রকেট তিনটি গতিপথ হারিয়ে ফেলেছে। সেগুলো এলোমেলো ছুটছে। এমনও হতে পারে একটি অন্যটির সাথে ধাক্কা খেয়ে বিস্ফোরিত হয়ে যাবে।’ ড. আশরাফ এবার এয়ারপোর্টে অবস্থানরত ধূম্রটিমের সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি মূহুর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ড.আবু সালেহকে ধূম্রদের দিয়ে গ্রেফতার করানো উচিত হবে না। কেননা এতে ধূম্রবাহিনীর সব রহস্য ও ক্ষমতা সবাই জেনে যাওয়ার ঝুকি রয়েছে। তিনি চান না এই রহস্য ফ্লাস হোক। যদি সবাই ধূম্রদের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায় তখন সরকারের চাপে ধূম্র সৃষ্টির তথ্য-উপাত্ত্ব সরকারী গবেষণাগারে পাঠাতে হবে। এতে হবে হিতে বিপরীত। কারণ, কোনো-না-কোনোভাবে এই তথ্য সন্ত্রাসী বিজ্ঞানীরা কব্জা করে নেবে। এতে সমস্ত পৃথিবী হয়ে পড়বে তাদের হাতের পুতুল। সন্ত্রাসীদের নির্দেশে চলতে হবে পৃথিবীর সব দেশ। গোয়েন্দা সিকিউরিটি ফোর্সে তথ্যটি পাঠালেন ড.আশরাফ। সমস্ত বর্ণনা দিয়ে তথ্য পাঠানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয়ে গেলেন অধ্যাপক ড.আবু সালেহ।
০৩ দেশে ফিরে আসার পর থেকে ড. আবু সালেহের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে জনমেড়ী বেশ চিন্তিত হলেন। খোঁজ না পেয়ে নিজের আঁকা ছকেই একশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ‘বিএসএ-৭১’ এখন বুধ গ্রহের কক্ষপথে নিশ্চিন্তে ছুটছে। ধীরে ধীরে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছবে এটা। ড. আশরাফের এই সাফল্যে জনমেড়ী ও তার অনুগতদের অশান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য ড. আশরাফকে হত্যা করা। মহাকাশ গবেষণা এজেন্সি ‘কর্কট ক্রান্তি’র দ্বিমাসিক জরুরী বৈঠক কাল। এতে প্রধান অতিথি ড.আশরাফ। এ গোপনীয় সংবাদটি জেনে গেছেন জনমেড়ী। নির্ধারিত ভ্যেনু ও সময় সব তথ্য তার গোচরে। মোক্ষম এ সুযোগটি কিছুতেই হাতছাড়া করতে চান না তিনি। সমস্ত ঢাকা শহর এবং কর্কটক্রান্তির বিশেষ গোপনীয় হলগুলোর রাস্তার মানচিত্রও রয়েছে তার কাছে। কোন কোন দিক থেকে কিভাবে আক্রমণ করতে হবে, সব কাজের প্রস্তুতি শেষ। প্রয়োজনে সমস্ত ঢাকা শহর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন জনমেড়ী। কয়েক মাস থেকে সাজ্জাদ নীরবে ড. আশরাফের সহচর হয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। সাথে একটিম ধূম্র। সবার অলক্ষ্যে ছায়ার মতো ড. আশরাফের কাছে থাকে সাজ্জাদ। সে এতোই অনুরক্ত যে, নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ড. আশরাফকে রক্ষা করতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করবে না। এখন সে বেশ দূরদর্শীও। ধূম্র বাহিনীকে কিছু নির্দেশ দেয়ার সাংকেতিক ভাষাও সে আয়ত্ব করে নিয়েছে। তাই অনেক সময় সে ধূম্রদের সাহায্যে বিপদ সংকেত ড. আশরাফের আগেই জেনে যায়। মাঝে মাঝে ড. আশরাফকে না জানিয়ে আগন্তুক বিপদের মোকাবেলায় সে একাই ঝাপিয়ে পড়ে। ড. আশরাফ পরে যখন শুনেন তখন আশ্চর্য ও অভিভূত হন। তাকে চিন্তায় না ফেলতে সাজ্জাদের এই আন্তরিক উদ্যোগ দেখে ড. আশরাফের এখন বিশ্বাস, মানুষ জাতির মধ্যে সাজ্জাদই তার একমাত্র বিশ্বস্ত সহচর। (সমাপ্ত) (১১ তম পর্ব)
Comments
comments