ধারাবাহিক উপন্যাস

কর্মের ফল

By lazy-coder

February 05, 2014

(পূর্ব প্রকাশের পর) তবে সময় থাকতে সেটা আসে না। এইতো হলো বিপদের ব্যাপার। শাহেদ আলী বললেন : যাকগে। এখনও সময় আছে। যাওনা এবার হজ্বে। বিলম্ব করলে হয়তো জীবনে আর সুযোগ পাবে না। তা’ তুমি এখনও দাডি় কামাও কেন? আবেদ আলী বলেন : বরাবর কামিযে় এসেছিতো। তাই অভ্যাসে পরিণত হযে়ছে। তাছাড়া গিন্নিও দাডি় রাখা পছন্দ করে না। শাহেদ আলী বললেন : দাডি় রাখবে তুমি, তাতেও তোমার গিন্নীর কি অসুবিধা? দাডি় রাখা নবীর সুন্নাত। নবী খুশি থাকলে, আল্লাহ খুশি থাকেন। নবীর শাফাযে়ত ছাড়া কারো গতি নেই। আবেদ আলী বললেন : দাডি় কামানোও এক রকম ঝামেলা। এখন থেকে রেখে দেবো। শাহেদ আলী বললেন : তোমার সিদ্ধান্ত শুনে খুশি হলাম। দাড়ী রাখার একটা শারীরিক উপকারও আছে। চোখের দৃষ্টি শক্তি কমেনা। আবেদ আলী বললেন : আচ্ছা শাহেদ, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি। আমিতো ঘুষ খেযে় টাকা উপার্জন করেছি এ টাকায় হজ্ব কবুল হবে? শাহেদ আলী বললেন : তোমার সব টাকাতো ঘুষের নয়। তুমি বেতন পেতে। তারপর চাকুরী শেষে পেনশন পাচ্ছো। এককালীন গ্রাচুযি়টি পেযে়ছো। হালাল টাকার নিয়তে হজ্বে যাবে। অসুবিধা কি? আবেদ আলী বললেন : তাহলে তো হজ্ব করা যায়। আর সেই টাকা থেকে তোমার মাদ্রাসায় কিছু দান করতে চাই। শাহেদ আলী বললেন : মাদ্রাসায় দান করবে, সেতো ভালো কাজ। দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করলে বহুৎ ছওয়াব পাওয়া যায়। আবেদ আলী বললেন : আমি পেনশনের টাকা থেকে প্রতি মাসে তোমার মাদ্রাসায় পাঁচশো করে টাকা দেবো। আর এককালীন কিছুতো দেবোই। শাহেদ আলী বললেন : আলহামদুল্লিল্লাহ। আল্লাহ তোমার নেক মকছুদ পুরা করুন। আবেদ আলী বললেন : আমার তো মাদ্রাসায় পড়ার উপযোগী কোন ছেলে নেই। একটা মেযে় এখনও স্কুলে পড়ছে। তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো যায় না? শাহেদ আলী বললেন : মাদ্রাসায় এবতেদায়ী পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে মেযে়দেরকেও। দাখেল স্তরেতো এখনও মেযে় ভর্তি করা হয়নি। দেখি কমিটির সবার সংগে আলাপ করে,পর্দা-পুসিদা মতো মেযে় পড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আবেদ আলী বললেন : দেখো আলাপ করে। মেযে়দের তো দ্বীনি এলেম শিক্ষা করার দরকার আছে। জীবনেতো অনেক ভুল করে ফেলেছি। যা করেছি তার জন্য এখন শুধু আফসোস করতে পারি। আর, সামনে যেন আর ভুল না করি, সেই চেষ্টা করে যেতে হবে। আমার জন্য দোয়া করো, শাহেদ।

দশ আবেদ আলী বললেন নূরবানুকে : গ্রামে ফিরে এসে খুব ভালো কাজ হযে়ছে। শাহেদের কাছে এক নতুন জীবনের সন্ধান পেলাম। সকৌতুকে নূরবানু বললেন : তাই নাকি? নতুন জীবনের সন্ধান পেলে সংগিনীর সন্ধানটাও কি বলো? আবেদ আলী বললেন : ঠাট্টার কথা নয়। শাহেদ আলীর কথা শুনে এবার বুঝলাম, এ যাবত ভুল করে ফেলেছি। এখন ভুল করা যাবে না। এবার থেকে জীবনকে নতুন করে গড়তে হবে। নূরবানু এবারও … বললেন : তাতে কি মাথার টাকে আবার চুল গজাবে? যৌবন কি আবার ফিরে আসবে? আবেদ আলী বললেন : যা গেছে, তা কি আর ফিরে আসে? জীবনে টাকার গরমে আহারে-বিহারে সংযমী হইনি কখনও। তাই শরীর স্বাস্থ্য গেছে। এখন সামনে যে কয়দিন আছে আল্লাহ-আল্লাহ করে কাটিযে় দিতে চাই। আমি আর শাহেদ একই বয়সী অথচ তার শরীর-স্বাস্থ্য এখনও প্রায় অটুট। আর, আমার কি দুর্দশা হলো। নূরবানু বললেন : আর, তুমি? তুমিও কি সংযমী ছিলে? তুমিওতো প্রচুর খেযে় এখন আড়াইমনী বস্তা । নড়ানো-চড়ানো ক্রেনের দরকার। নূরবানু খানিকটা রেগে বললেন : তুমি যেমন ছিলে আমিও তেমন ছিলাম। দোষটা কি শুধু আমার? আবেদ আলী বললেন : দোষ কাকে দেব। সবই নসিবের। কবরের কিনারে এসে গেছি। এখন শুধু পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবার সময়। : তবে তাই করতে থাকো।… নুরবানুর রাগতঃ কণ্ঠস্বর। : শাহেদ বলেছে দাডি় রাখতে আর দাডি় কামাবো না। : দাডি় রেখে কি হবে? তাতে ডায়বেটিস সারবেনা। তাছাড়া দাডি় রাখাতো সুন্নাত। কতো ফরজ পডে় আছে। : সুন্নত পালন করতে গেলে, ফরজ কি আর বাদ দেবো? এবার থেকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। হজ্বে যাবারও ইচ্ছে আছে। আর, তোমাকেও নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে। : বলো কি? আমারতো নড়তে-চড়তেই কষ্ট। আমি নামাজ পড়বো কি করে? : নামাজ তোমাকে পড়তেই হবে যে ভাবে হোক। নইলে তোমার সঙ্গে ঘর-সংসার করব কি করে? : একদিনেই পাক্কা ঈমানদার হযে় গেলে? : ঈমানদার হতে সময় লাগে না, যদি আল্লাহ হেদাযে়ত করেন। : তোমাকে দেখছি হেমাযে়তপুরে না পাঠিযে় উপায় নেই। : তুমি আমাকে পাগল ভাবলে? : তাছাড়া আর কি? আবোল-তাবোল পাগলেই বলে। : আমি আবোল-তাবোল বলছি নাকি? দ্বীনের কথা বলছি। এতোদিন দুনিয়ার মোহে ছিলাম। বুঝতে চাইনি ভুল করেছি। ঘুষখেযে় এখন ডায়বেটিসে ভুগছি। : ঘুষ খেলে ডায়বেটিস হয়, এ কথাতো কখনও শুনিনি? : ডায়বেটিস হবেই এমন কথায় নয়। তবে হারামের পরিণামে আরাম হয় না, এটাই সত্যি ডায়বেটিস না হোক, অন্যকিছু। ভোগান্তি এক রকমের হলেই হলো। : তখন ঘুষ না খেলেই পারতে। : না খেযে় কি উপায় ছিল? তোমার আবদার রক্ষায় আমার দরকার ছিল অনেক টাকার। তাই ঘুষ খেতে বাধ্য হযে়ছি। তুমি কোন দিন বারণ করেছো আমাকে? স্ত্রীর আরেক নাম সহধর্মীণী। তুমি তা’ হওনি কখনও। হযে়ছো পাপের সংগিনী। : তোমার মাথায় যথেষ্ট গোল বেঁধেছে। তোমায় শাহেদই সর্বনাশ করে ছাড়বে। : শাহেদ পরহেজগার মানুষ। দ্বীনের রাস্তায় আছে। সে গ্রামে গ্রামে এলেম শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা করেছে। আমিও বলে এসেছি, প্রতি মাসে তার মাদ্রাসায় পাঁচশো টাকা করে দান করবো। : এতো দূর এগিযে়ছো? : আরও সিদ্ধান্ত নিযে়ছি, রোকসানাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাবো। নূরবানু বললেন : এ গ্রামে কে মেযে়কে মাদ্রাসায় পড়াচ্ছে। ও-সব মতলব ছাডে়া। আবেদ আলী বললেন : আমার কথার নড়-চড় হবে না। এখনও কেউ মেযে়দেরকে মাদ্রাসায় না পড়ালেও আমার মেযে়র দেখাদেখি আরো অনেক মেযে় মাদ্রাসায় ভর্তি হবে। নূরবানু বললেন : আজ কালকার মেযে়দেরও নিজস্ব মতামত থাকে। তুমি মেযে়কে না জিজ্ঞেস করেই সিদ্ধান্ত নিযে় ফেললে? আবেদ আলী বললেন : মেযে়র কিসে ভালো হবে তা মেযে়র চাইতে ভালো বুঝি। লেখাপড়া শেখাবার দাযি়ত্ব আমার। নূরবানু বললেন : তুমিতো রাতারাতি সব উল্টে দিতে চাও। তা’ সম্ভব কিনা ভেবে দেখেছো একবারও? আবেদ আলী বললেন : ভাবার আর সময় পেলাম কোথায়? অবস্থাতো হযে়ছে এরকম- শিশুকাল গেল হাসিতে খেলিতে যৌবন গেল রসে। বৃদ্ধকাল আসিল চুলতো পাকিল দন্ত পডি়ল খসে। : এটাইতো দুনিয়ার নিয়ম।… নূরবানুর উক্তি। : নিয়মতো ঠিকই। কিন্তু কবরে কি সংগে যাবে? এটা ভাবতে হবে নাকি? কুরআন পাকে আল্লাহ বলেন- ‘‘ অ মা খালাক্বতুল জিন্না ওয়াল ইনছা ইল্লা লি আ’বুদন। এবাদতের জন্যই মানুষ সৃষ্টি। : এতোকালতো নাফরমানী করে, দু’-চারদিনের এবাদতে কি ফল পাবে? তাতে কি পুষিযে় নিতে পারবে? : আল্লাহ গাফুরুর রাহীম। খালেস দীলে তওবা করলে তিনি ইচ্ছা করলে পেছনের গুনাহ্ মাফ ক’রে দিতে পারেন। তুমি উল্টো-পাল্টা কথা বলো না। মনস্থির করে ফেলো। নূরবানু ভাবিত হলেন। আবিদ আলীর দৈনন্দিন পরিবর্তন ঘটছে। নিয়মিত নামাজ, তসবীহ্ তাহলীল, কুরআন তেলাওয়াত এ-সব নিযে়ই তার সময় কাটে। এখন আর তিনি স্যুট-কোট পডে়ন না, দাডি় কামাননা। সুন্নতী লেবাসে চলাফেরা করেন। নূরবানু এখন তাকে ফেরাতে পারবে না। এখন আর তার দেহে যৌবনের চমক-ঠমক নেই। কি দিযে় ঠেকাবেন তাকে? তাছাড়া তারও যৌবন ফুরিযে় গেছে। নারীর প্রতি আসক্তির প্রযে়াজন তার প্রায় ফুরিযে় এসেছে। আর, তার পক্ষেও এখন স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সাজেনা। অগত্যা তিনি মন পরিবর্তন করলেন। শয়তানও তার কাঁধ থেকে নেমে সরে পড়লো। নূরবানু নামাজ পড়তে শুরু করলেন। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতে লাগলো। হাঁটু ভাংতে পারেন না। ডানে-বামে ঘাড় ফেরাতে কষ্ট হয়। তবু নিরুপায়। নামাজ না পডে় উপায় নেই। তাই তিনি যথাসাধ্য চেষ্টায় নামাজ আদায় করতে থাকলেন।

এগারো শাহেদ আলীর ছেলে মাসুদ করিম এম.বি.বি.এস.পাশ করার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী পেযে় গেল। এখানকার সিনিয়র স্টাফ নার্স মিস ডলির সঙ্গে তার পরিচয় হয় সেই সুবাদে। ডলি সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মেযে়। ইন্টার মিডিযে়ট পাশ করার পর সে নার্সিং-এ ভর্তি হযে়ছিল। কালক্রমে সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হয়। সে ছিল রূপসী। শরীর-স্বাস্থ্য ছিল আকর্ষণীয়। ডা. মাসুদ করিমের তার প্রতি আকৃষ্ট হতে বিশেষ সময় লাগলো না। প্রথমত : পেশাগত আলাপ। পরবর্তীতে খোশ গল্প। এভাবে কযে়কটা দিন যেতেই টের পেল, সে ডলির প্রতি আসক্ত। একদিন মাসুদ করিম ডলিকে বলে : সিস্টার সত্যিই আপনি দারুণ মিষ্টি মেযে়। আপনার সংগে কথা বলে বেশ আনন্দ লাগে। অপরপ্রান্তে হাসির রেখা ডলির। সে বলে : আপনি বাডি়যে় বলছেন। এ-রকম আর কেউতো বলেনা। আর, আমিতো একজন সাধারণ মেযে়, হাসপাতালের নার্স। : পেশায় যা-ই হোননা কেন, আপনার হাসি সত্যিই নেশা ধরায়। : রুগ্নের সেবায় নিযে়াজিত আছি, তাই কিছু একটা গুণতো থাকতে হবে। নইলে রুগীদের আরাম বোধ হবে কেন? : তা ভালো। তবে সুস্থ লোককে অসুস্থ করে তুলবার গুণও আপনার আছে। : তাই নাকি? : হ্যাঁ, অবশ্যই। : তাহলেতো খারাপ। চাকুরী নিযে় টানাটানি হবে যে! : চাকুরী যাবে কেন? তবে অনেকের জান বেকারার হবার সম্ভাবনা রযে়ছে। : আপনি চাটুকারিতায় সুদক্ষ, তা বলতেই হবে। … ডলি… হাসলো। : সত্যিকে অস্বীকার করাতো নিজেকে গুটিযে় গুটিযে় রাখার চেষ্টা। আসলেই আপনাকে আমার বেশ ভালো লাগে। : বেশ ভালো লাগবার মতো কি দেখলে আমার মধ্যে? : তা’ জানিনা। : আমি কিন্তু জানি। : বলুন সেটা কি? : সেটা হলো চোখের নেশা। মিথ্যে বললাম কি? : সত্যি-মিথ্যা জানিনা। তবে চোখ না থাকলে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না, এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই। (চলবে)

Comments

comments