জাতীয়

বিদায়ী শীতের অপরূপ দৃশ্য

By mumin

April 15, 2018

শীতকাল শেষ হতে না হতেই ষড়ঋতুর বাংলায় এসে গেছে রূপে গুণে অতুলনীয় বসন্ত ঋতুর আগমনী বার্তা। কাল-পরিক্রমায় বাংলার প্রকৃতিতে শুরু হয়ে গেছে ঋতু পরিবর্তনের আনাগোনা। সময়ের স্রোতে ভেসে ভেসে এভাবেই পালাবদল হয় প্রতিটি ঋতুর। শীতের সৌন্দর্য সব বিগলিত হয়ে ঝরে পড়ছে বিষণœ বিদায়ের কোলে! অবিশ্রান্ত সময়ের দৌড়াদৌড়িতে সবুজাভ বাংলার প্রকৃতিতে এসেছিল কুয়াশাবৃত শীত। একেবারে হাড় কাঁপানো শীত। সাথে নিয়ে এসেছিল ঠাণ্ডা শীতল বায়ু ও সাদা ধবধবে কুয়াশা! ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো প্রকৃতির ইথারে ইথারে। একপা দু’পা করে করে শীত ঋতু প্রায় শেষ বেলায় উপনীত। তবুও সবুজাভ বাংলার উচ্ছল প্রকৃতির বুকে এখনো লেগে আছে দুর্মর হিমহিম শীতের প্রতিচ্ছবি শীতের শীতল আঁচড়ে। দীর্ঘ শীতের স্যাঁত-স্যাঁত আচ্ছন্নতায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুখাবয়ব কেমন যেন অপরিচ্ছন্ন ও বিদঘুটে অনুভূত হচ্ছে। শৈত্য প্রবাহের প্রাবল্যতা গ্রাম,গঞ্জ,শহুরে সর্বত্রই যেন প্রভাব ফেলেছিলো প্রকটভাবে! গাছপালা, তরুলতা বন-বাদাড় ও ক্ষেত- খামারে ফুটে উঠেছিলো বিষণœতার ছাপ! শীতের বিদায়ী প্রহরের নিস্তব্ধ সময়ে প্রতিটি গাছের পাতায় পাতায় মিষ্টি রঙের মেলা জমে গেছে। শীতের বিদায়ে প্রকৃতি যেন আজ নব বধুর সাজসাজ্জায় মেতেছে। ধীরে ধীরে রঙের ঘনত্ব আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের পত্রপল্লবে লেগে গেছে লালচে দাগ। সূর্যিমামা এখন সাতসকালেই পূবাকাশে খুব চিকচিক করে উঠে!

ক্রমশই যেন তার তাপ পরিপক্ক হয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। রোদের তীব্র উষ্ণতায় বিদায়ী শীতের আবহ আলো ঝলমল করে উঠে। শিশুরা পরম আনন্দে খেলা করে। অতিথি পাখিরা ঝাঁকবেঁধে ছুটে চলেছে দিগন্ত ছুঁয়ে। সবুজের সমারোহে হঠাৎ নান্দনিকতার ছোঁয়ায় প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিটি হৃদয়ের অন্দরে আনন্দের হিল্লোল বয়ে বেড়াচ্ছে। একে একে গাছগাছালির ডালে ডালে ঝুলন্ত পাতাগুলো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে হেলেদোলে ঝরে পড়ছে শিশিরসিক্ত উর্বর মৃত্তিকার গর্ভে! দুপুরের এলোমেলো উত্তরা বাতাসে উড়ে উড়ে খেলা করতে আরম্ভ করেছে পাতাঝরা গাছগাছালিও বন বনানী’র গা ঘেষে! খুবই দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম তার চাহনি। ছিন্নমূল পাতাগুলো ঝরে ঝরে সবুজের পৃথিবীটা ধীরে ধীরে পাতাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন গাছগুলো কে মৃত্যুপুরী’র মতো মনে হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বেও হাড় কাপানো কনকনে শীতে জড়সড় অবস্থা ছিলো আমাদের জনজীবন। হাড় কাপানো শির শির শীতে পিঠা-পুলির আনন্দ উৎসবও ছিলো উল্লেখ করার মতো। এইতো প্রায়ই শীতের পিঠা-পুলির দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শীত ঋতু বিষণœ বিদায়ের কোলে ঢলে পড়ছে। প্রকৃতিতে বসন্ত ঋতুর বাতাস এসে গেছে। উত্তরের হাওয়া শীতের বিদায়ের বাঁশি বাজাচ্ছে শুকনো ঝরাপাতার কড়মড় শব্দে। ফাগুনের ছোঁয়ায় গাঁও গেরাম বা নগরীর উদ্যানে শোনা যাচ্ছে উঁচু বৃক্ষের মগ ডালে পত্র-পল্লবের আড়ালে,আবডালে বসে থাকা বসন্তের বাঁশরি কোকিলের মিষ্টি মধুর কুহুতান। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফলের সমারোহ ফোটে উঠছে বসন্তের পূর্বাভাসে। আম গাছে, জাম-গাছে মৌসুমি ফলের মুকুল দেখা যাচ্ছে! বড়ই, কাঁঠাল গাছে ইত্যাদি ইত্যাদি নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রাকৃতিক নিয়মের বাহুডোরে ফল আসার জানান দিচ্ছে। প্রকৃতির গায়ে ফোটে উঠছে বিদায়ী শীতের অপরূপ দৃশ্য।

Comments

comments