গল্প

ভূতুড়ে একটি রাত

By mumin

June 18, 2017

শহর থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো নাবিলের। মাঝপথে গাড়িটা নষ্ট না হলে এমনটা হতো না। বিকেলেই বাড়ি ফিরতে পারতো। ব্যবসায়িক কাজে শহরে থাকে ও। টাকা- পয়সা জমিয়ে মাসে দু’একবার বাড়ি আসে। একদিন পরেই ঈদ। সাজ সাজ রব পড়েছে সবখানে। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে সবাই ছুটছে গ্রামে। নাবিলও রওনা হয়েছে আজ। অনেকদিন পর গ্রামে ফিরছে। ঈদে ভালো বেচাকেনা হয়েছে। টাকাপয়সা জমিয়েছে বেশ। সেগুলো সঙ্গে নিয়েই আজ বাড়ি ফেরা। বাস থেকে নেমে গ্রামের মেঠোপথ। এ পথ ধরে আরো প্রায় দু’মাইল যেতে হবে। রাস্তায় চোর, ডাকাতের ভয়। অন্যসময় ভ্যান বা রিক্সা পাওয়া যেত। রাত গভীর হওয়ায় আজ কিছুই নেই। এতগুলো টাকা নিয়ে একা যেতে ভয় লাগছে ওর। কিন্তু কিছুই করার নেই। আল্লাহর নাম নিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। বোশেখের রাত। ঝিরঝিরে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। ভালো লাগার মতো একটা রাত। ছোট পথের দু’পাশটা ঘিরে ছোটবড় অসংখ্য গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্না নেমেছে। লতাপাতার ফাঁক দিয়ে অজস্র জ্যোস্না ঢেউ খেলছে। চাঁদের এ আলোয় পথ চলতে কষ্ট হচ্ছে না একটুও।

প্রায় এক মাইল পথ চলে এসেছে। আরো যেতে হবে এক মাইল। সামনে একটা শ্মশান। বড় একটা বটগাছের নিচে অনেকটা জায়গাজুড়ে সেটা। লোকমুখে শোনা যায়, এটা নাকি ভূতপ্রেতের বসবাসের জায়গা। অনেককে ভয়ও দেখিয়েছে। নাবিলের এসব আজগুবি কথা বিশ্বাস হয় না। তার এখন টাকাপয়সা রক্ষার চিন্তা। এগুলো নিয়ে কোনোমতে বাড়ি পৌঁছুলেই হলো। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানের প্রায় কাছে চলে এলো নাবিল। রাতের বটগাছটা অদ্ভুত লাগছে। ও লক্ষ্য করলো, শ্মশানে কয়েকজন লোক একটা লাশ পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। লোকগুলোও সাদা কাফন পরা। মুখ দেখা যাচ্ছে না কারোর। সবাই লাশটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এতো রাতে কেউ লাশ পোড়াতে আসবে, কেমন যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। কেমন যেনো রহস্য মনে হতে লাগলো। একটু ভয় ভয়ও লাগছে। ভয় তাড়াতে হাঁক ছাড়লো নাবিল, ‘কে ওখানে?’ কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিশ্চল হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছে সবাই। এখন ভয়টা আরো বেড়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগিয়ে গেলো। লাশটার কাছে এসে থমকে গেলো নাবিল। ভয়ে, বিস্ময়ে বুকটা ছ্যঁৎ করে উঠলো। চাঁদের আলোয় সে স্পষ্ট দেখতে পেলো, খাটিয়ায় রাখা লাশটা সে নিজেই। অবিকল তার চেহারা। সে কখন মারা গেলো! আর লোকগুলোই বা কে? কোনোকিছু না ভেবে ফসলের মাঠ ধরে দৌঁড়াতে লাগলো নাবিল। হাঁপিয়ে উঠেছে, তবুও পথ যেনো শেষ হচ্ছে না। একবার পেছন ফিরে দেখলো, লাশটা খাটিয়া থেকে উঠে তাকে ধরার জন্যে পেছন পেছন দৌঁড়াচ্ছে। তার সঙ্গে লোকগুলোও দৌঁড়াচ্ছে। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লো ও। জীবনের শেষ প্রান্তে যেনো এসে পৌঁছিয়েছে। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো একসময়। আর কিছু মনে নেই। একদিন পর জ্ঞান ফিরলো নাবিলের। বাড়ির দখিনের ঘরে শুয়ে আছে। চারপাশে বাড়ির লোকজন তাকে ঘিরে রয়েছে। তারা বলল, নাবিল গ্রামের সরিষা ক্ষেতের পাশে পড়ে ছিলো। সকালে লোকজন তুলে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। নাবিল কোমরে লুকিয়ে রাখা টাকার থলেটা চেক করে দেখে, টাকা নেই। সব টাকা গায়েব। কে নিলো, ভেবে পেলো না। দুদিন পর এর রহস্য ভেদ হলো। কিছু দুষ্টু লোক গভীর রাতে মানুষকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভয় দেখিয়ে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। আরো কয়েকজনের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। চুরি করার অভিনব পন্থা সাজিয়েছে তারা। শুধাংশর সঙ্গেও যে এমন কিছু যে ঘটেছে, সে ভালোভাবে বুঝতে পারলো।

Comments

comments