গল্প

বিদায়বেলা

By mumin

January 11, 2022

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। নিজের আচার-আচরণে সকল শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি প্রিয় একজন শিক্ষক। অন্য শিক্ষকদের থেকে ছাত্রছাত্রীদের সাথে তার সখ্যতা বেশি! হবেই বা না কেন! শিক্ষার্থীর সুখ কিংবা দুঃখে তিনিই তো পাশে থাকেন। এইতো যখন দশম শ্রেণির ছাত্র ‘মাহেদ’ মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল! মাহেদকে সঠিক পরিচর্যা করে তিনি তাকে সেই অবস্থা থেকে বের করে এনেছেন। স্যারের সাহচর্যে থাকার ফলে মাহেদ এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু মাহেদ-ই নয় এরকম বহু শিক্ষার্থী স্যারের পরিচর্যায়, বন্ধুসুলভ আচরণে কঠিন সময় কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে

এসেছে, মা-বাবাকে পরীক্ষায় ভালো ফল উপহার দিয়েছে। স্যারের কথাবার্তা, পাঠদানের কৌশল, ব্যবহারে স্যার হয়ে উঠেছিলেন সবার আপনজন। এ বন্ধন যেন রক্তের চেয়েও আপন। আজ ইমরান স্যারের বিদায়ী অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ৩৫ বছরের শিক্ষক জীবনের ইতি টানছেন তিনি। বিদ্যালয় মাঠে স্যারের বিদায়ী অনুষ্ঠান শুরু। কানায় কানায় পরিপূর্ণ স্কুল মাঠ। কিন্তু আজ কেউই অন্যদিনের মতো উৎফুল্ল নয়। কারোই মন ভালো নয়। সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। কারো কারো চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে। হেড স্যারের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অতিথিরা বক্তব্য প্রদান করলেন। ইমরান স্যার ও অশ্র“সিক্ত নয়নে বক্তব্য রাখলেন। স্কুল ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্যারকে স্মারক, বই, কলমসহ বিভিন্ন উপহার দেয়া হলো। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা স্যারকে জড়িয়ে কাদঁতে শুরু করলো। স্যারও নিজেকে সামলাতে পারছেন না। তবুও নিজেকে বহু কষ্টে সামলে তাদের সান্ত্বনা দিলেন। ছাত্রদের জীবনের পথচলায় সহায়ক বহু উপদেশও দিলেন। অতঃপর স্যার নিজের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ছেড়ে স্মৃতিঘেরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে পড়লেন। ছাত্র-শিক্ষকরা অশ্র“সিক্ত চোখে তাকে এগিয়ে দিলেন। গাড়ি এগিয়ে চলছে। ‘আহ! আর কভু ফেরা হবে না সেই পাঠদানের আসরে, কত স্মৃতিময় মুহুর্ত জড়িয়ে আছে স্কুলে’। কথাগুলো ভাবতেই চোখে জল এসে গেলো ইমরান স্যারের। চোখের জল মুছে গাড়ি থেকে শিক্ষার্থীদের দিকে অপলক চেয়ে রইলেন তিনি।

Comments

comments