গল্প

এক চিলতে হাসি

By mumin

June 19, 2017

শনিবারের হাট। চারদিকে বেচা কেনায় ব্যস্ত মানুষের ঢল। একে তো নিয়মমাফিক সাপ্তাহিক হাট তার ওপর ঈদের বাজার। সব মিলিয়ে কমলগঞ্জের বাগিচা বাজার আজ জনাকীর্ণ। বাজারের উত্তর পাশে ইমাদের কাপড়ের দোকান। আলী মার্কেটের মধ্যমণি মা বিতান নামের দোকানটি তার দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। সমবয়েসি দুই কর্মচারীসহ ইমাদের নিঁখুত তত্ত্বাবধান ও খাটুনিতে বেশ ভালোই ব্যবসা হচ্ছে। একুশ বছর বয়েসি যুবক ইমাদের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষেই পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখা ছাড়তে হয়। কিন্তু সেই হাল ধরার ব্যাপারটা তার পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও নিয়মিত ইসলামিক বই পড়া ছাড়াতে পারেনি। হোক বাড়ি কিংবা দোকান, একটু ফাঁক পেলেই বইয়ের পাতায় ডুব দেয়। প্রতিদিনকার ন্যায় আজও বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে আসরের নামায পড়া শেষ করে মুহাম্মদ (সা.) এর অমিয় বাণী বইটি হাতে নেয়। কিন্তু দোকানে ক্রেতাদের ভীড় থাকায় বই হাতে নিয়েই এই কাপড় ওই কাপড় বের করে সূতা ও রঙের বর্ণনা দিতে হচ্ছে। ঘণ্টাখানেক পর ব্যস্ততা কিছু কমায় আবার বইটি খুলতে যাচ্ছিল। কিন্তু সহকর্মী রবিউলের এই মেয়ে!এখানে কী চাস নামক ধমকানো স্বর শুনে মাথা তুলে তাকায়। আর তাকাতেই বিচলিত হয়ে ওঠে তার মন। আট-নয় বছরের একটা ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দোকানের ফ্রক স্ট্যান্ডের পাশে। গায়ে একটা ময়লা ছেড়া জামা। ইমাদ কিছু না বলে শুধু চেয়ে আছে। এ রকম বাচ্ছাদের দেখলেই তার বুক ভারী হয়ে আসে, গলার কাছে নিঃশ্বাস এসে যেন আটকে যায়। রবিউলের প্রশ্নে মেয়েটি জবাব দেয় -আমি জামা কিনুম। জামা কিনবি? তুই? জানিস এই জামার দাম কত?রবিউল জিজ্ঞেস করে আর উচ্চস্বরে হাসে। সেই হাসি ইমাদের গায়ে লাগে। কিন্তু মেয়েটা কী বলে তা শোনার জন্য আবারো চুপ থাকে। মেয়েটি জানতে চায়-কত দাম? রবিউল ডান হাতের একটি আঙুল উঠিয়ে বলে এএএএক হাজার। নিরাশ কণ্ঠে মেয়েটি বলে ওওও। পাঁচ টাকায় কোনো জামা পাওন যায় না আপনাগো দোহানে? তার এ কথা শুনে রবিউল ও রাসেল আবার হাসে। ঠিক তখনই পাওয়া যায় বলে ইমাদ উঠে দাঁড়ায়। তার এমন জবাবে হতভম্ব হয়ে যায় অন্যরা। ইমাদ মেয়েটির কাছে আসে। হাঁটু গেড়ে পাশে বসে মাথায় হাত রাখে। শান্ত গলায় বলে -হ্যাঁ গো! পাঁচ টাকায় জামা পাওয়া যায়। নিমেষেই হতাশাগ্রস্ত মেয়েটি প্রফুল্ল হয়ে যায়। ব্যস্ত কণ্ঠে বলে কোন জামা পাওন যায়? ইমাদ জবাব দেয় -এই জামাগুলোর মধ্য থেকে যেটা তোমার পছন্দ হবে সেটাই। মেয়েটির প্রফুল্লতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুকনো ঠোঁটে দোল খায় পবিত্র এক হাসি। তার পছন্দের লাল জামাটি হাতে দিতে দিতে ইমাদ তার নাম জিজ্ঞেস করে। মেয়েটি নাক বাড়িয়ে নতুন জামার ঘ্রাণ নেওয়ার সময় আস্তে করে বলে-শান্তা। তারপর ইমাদের দিকে তাকিয়ে অনুমতি চায়-আমি ঘরে যাই?ইমাদ হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। রবিউলের ডাক শুনে শান্তার চলে যাওয়া পথে চেয়ে থাকা ইমাদের সম্বিত ফেরে। এটি কী করলেন ভাই? অচেনা একটা মেয়েকে হাজার টাকার ফ্রকটা বিনে টাকায় দিয়ে দিলেন? প্রশ্ন করে রাসেল। হ্যাঁ ভাই, দিলাম। রবিউল বলে এরকম করলে তো ব্যবসার বারোটা বাজাবেন ভাই। ইমাদ ঘাড় ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয় আর জবাব দেয়-ব্যবসা তো ভাই প্রতিদিনই করি, একদিন না হয় একটা মুখে হাসি ফোটাই। তার এমন উত্তরে দুজনে আবার অবাক হয়। ইমাদের এ রকম কর্মকাণ্ডে তাদের অবাক হওয়া নতুন বিষয় নয়। শুধু আজকে যেন একটু বাড়তি হয়ে গেলো।

Comments

comments