এই খালেদ, গজলটা একবার গেযে় শোনাতো। : কোনটা ভাইয়্যা? আপনার লেখা নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামটা? : হ্যাঁ, ওটাই তো গাবি। তাড়াতাডি় গেযে় শোনা। : না ভাইয়্যা, এখন গাইতে ভালো লাগেনা, ভাত খেযে় তারপর শোনাবো। : এই, ফাজলামো করিসনা, বেশি বেশি প্রাক্টিস না করলে সুর মজবুত হয় না। আমার সামনে প্রাকটিস করলে ভুল ধরিযে় দিতে পারব। গা- গা- : আচ্ছা ঠিক আছে। খালেদ গলা খাকড় দিযে় শুরু করল- রাসুল তুমি একবার এসে দেখা দিযে় যাও উড়– উড়– মনটা আমার শান্ত করে যাও চেযে় আছি তোমার পানে… : বাহ! চমৎকার হযে়ছেরে, এবার তোকে হারাতে পারবেনা কেউ। এই আমার অবস্থা দেখ, প্রাক্টিসের অভাবে গলাটা কেমন নষ্ট হযে় গেছে। প্রতিদিন চর্চা করবি দেখবি গলা নষ্ট হবে না। বারই রবিউল আউয়াল সকাল বেলা বারান্দায় বসে রিয়াজ তার ছোট ভাইকে গজলের প্রাক্টিস করাচ্ছিল। এ সময় রিয়াজের ক্লাসমেট সোহেল সেখানে উপস্থিত হয়। : কি ব্যাপার, গজল গাওয়া হচ্ছে বুঝি? : এই তো ওকে একটু প্রাক্টিস করাচ্ছি, অনুষ্ঠানে আজকে তো। : অনুষ্ঠান! কিসের অনুষ্ঠান? বিস্ময় সোহেলের চোখে। : ক্যান, তুই জানিসনা আজ বারই রবিউল আউয়াল। ঈদ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মসজিদে আজ বিশাল আযে়াজন। : ও-তাই বলে, তোমাদের সেই মিলাদুন্নবী। : আমাদের মানে! তুই আমাদের থেকে ভিন্ন? : ভিন্ন না, তবে এভাবে মিলাদুন্নবী পালন করা ঠিক না। : বুঝলাম না, ঠিক না মানে? : বুঝলিনা? মিলাদুন্নবী মানে জানিস? : আমি যা জানি তা পরে শোনবে, আগে তোরটা শোনা। : মিলাদুন্নবী মানে হল নবীর জন্ম বৃত্তান্ত। জন্মের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে কী অলৌকিক কাহিনী হল এসবের ফিরিস্তি তুলে ধরার দরকারটা কী? এসব জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনায় আমাদের কি লাভ হয়? আর এটা বেদায়াতও বটে। এক শ্বাসে কথাগুলি বেরোয় সোহেলের মুখ থেকে। : ও- তাহলে এই ছবক নিযে়ছ? ইদানিং তোর চলাফেরার পরিবর্তন আর দাডি় ছাটার কারণও তাহলে এইটা, তাইনা? রিয়াজের কথায় অনেকটা ঝাল। সে বলল, শোন, পবিত্র কোরানে সয়ং আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম, ইবরাহীম, ঈসা, মুসা (আ.) এর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। ঈসা (আ.) এর জন্ম বৃত্তান্ত তার মধ্যে তো চমৎকার অলৌকিক। কোরানে এগুলো স্বয়ং আল্লাহ যখন বর্ণনা করেছেন, সেখানে সর্বকালের সেরা মানব আমাদের রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ অনুষ্ঠানে কেবল জন্ম বৃত্তান্তই আলোচনা হয় নাকি তাঁর জীবনের নানা দিক নিযে় আলোচনা হয়? : তাই বল, নবীজীর জীবনী আলোচনা করা যেতে পারে। : হতে পারে না, হয়। কিন্তু তোরা এভাবে বেদায়াত বলতে বলতে সব কিছু থেকে মাহরূম হোস, নইলে গত বছর আমরা যেই সংখ্যাটা মিলাদুন্নবী সংখ্যা হিসাবে প্রকাশ করলাম, তোদের সংগঠনের পত্রিকায় দেখলাম সেখানে বাদরের ছবি। একটা ইসলামী সংগঠনের পত্রিকার চেহারা যদি এমন হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে তারা কোন ইসলাম কাযে়ম করবে। সোহেল এতক্ষণ রিয়াজের কথাগুলো হা করে গিলছিল। সোহেল একটু জেদী ছেলে। কারো সামনে নত হতে রাজিনা। তাই ঠোঁটে সামন্য বাঁকা হাসি টেনে চলে যেতে উদ্ধত হলে রিয়াজ বলল, বিকেলে অনুষ্ঠানে থাকিস কিন্তু, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি অন্তত পাপ হবে না তোর। ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে বেরিযে় গেল সোহেল। দুই বিকেল চারটা। রোদের তেজ কমে আসছে। মৃদুমন্দ বাতাসে গরমটা অনুভূত হচ্ছেনা। এমনি অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে বলে ঘন ঘন মাইকে ঘোষণা হচ্ছে। ভূনা খিচুড়ীর আযে়াজনে ব্যস্ত হযে়ছে বাবুর্চি দল। সাডে় চারটার দিকে মসজিদে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আরম্ভ হল। হামদ-নাত, কেরাত ও অন্যান্য বিষযে়র প্রতিযোগিতা একেক করে শেষ হতে মাগরিব হল। মাগরিবের পর জিকির আজকার ও আলোচনা চলল। সবকিচু ঠিকঠাক চললেও দোয়ার পূর্বে যখন মিলাদে দাঁড়াল সবাই, বিপত্তিটা বাধল তখন। দু’জন মুরব্বী দাঁড়াল না। সকলের মাঝে মাত্র দু’জনকে বসে থাকতে দেখে দুষ্ট ছেলেরা হাসা হাসি করল অনেক। এই বসাবসি আর হাসাহাসি নিযে় এক কথা দুই কথা অবশেষে বাড়াবাডি়। সর্বশেষ ইমাম সাহেবকে ডাকতে হল। সমস্ত মসজিদে তখন পিনপতন নিরবতা। রিয়াজই মুখ খুলল প্রথম। বলল, আচ্ছা কাকা, সবার মাঝে আপনাদের দুজনকে বসে থাকতে দেখলাম। এ কারণটা আমরা জানতে পারি। এবার বসা দু’জনের একজনে বলল, তোমরা যে এই মিলাদে দাঁড়াও এটা বেদায়াত। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দিন মিলাদ পডে়ন নি। আমাদের মরব্বিরা তাই বলে। : এবার আমার কথাটাও একটু শুনুন, যদিও আমি আপনাদের মুরব্বী নই। বসে বসে নামাজ আদায় করা যায় তবুও দাঁড়াবার নিয়ম, কারণ নামাজে খাসভাবে আল্লাহর ইবাদত করা হয় আমরা ভাবি আল্লাহ আমাদের সামনে। যদিও সর্বদা আল্লাহ আছেন। অথবা কাবা ঘরকে সম্মান দেখাই। দেখুন, কাবাঘর আমাদের বাংলাদেশ থেকে কত দূরে তারপর আল্লাহকে চোখে না দেখে সিজদা দেই, পৃথিবীর সকল পানির থেকে আলাদা যমযমের পানি আমরা কাবাঘরের দিকে মুখ করর দাঁডি়যে় পান করি। কি দরকার ছিল এসবে দাঁডি়যে় সম্মান জানানোর? আল্লাহ বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেউ তো দাঁড়াতে বলে দেন নি। দম নেয় রিয়াজ, তারপর আবার বলে রাসুলের পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম দেয়ার সময় আমরা দাঁড়াবনা এটা কেমন আদক কাকা? দুজনের মুখ এই মুহূর্তে বোকার মত হযে়ছে। যেন জোকের মুখে লবন পডে়ছে। বন্ধু সোহেলও যেন নির্বাক হযে় তাকিযে় রযে়ছে।
Comments
comments