ইসলামিক গল্প

খলীফা হযরত ওমর (রা.)

By mumin

February 01, 2017

ইসলামের সুশীতল ছায়া আরব পেরিয়ে তিরতির করে ছড়িয়ে পরেছে সিরিয়া, ইরান, রোম পর্যন্ত। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় বসে মানুষ ফেলছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। দিকে দিকে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হচ্ছে বৃষ্টির মতো। অভাব অনাটনের ধকল কেটে আরব হয়ে উঠছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে। আরবের অর্থনৈকিক অবস্থা স্বচ্ছ্ল হলেও আমিরুল মু’মিনীন হজরত ওমর (রা.) জীবন-যাপন করতে লাগলেন খুবই সাধারণভাবে। তা দেখে একদিন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) এবং হযরত হাফসা (রা.) খলিফা ওমর (রা.) কাছে গিয়ে বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন ! আল্লাহ আপনাকে উচ্চ সম্মান এবং মর্যাদা দান করেছেন। বিভিন্ন রাজ্যের দূতগণ আপনার কাছে আসছেন এখন আপনার উৎকৃষ্ট পোষাক এবং উত্তম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। আমিরুল মু’মিনীন তাদের কথা শুনে ব্যথিত হলেন। ব্যথিত কণ্ঠে বললেন, আফসোস ! তোমরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সহধর্মিণী হয়েও আমাকে পার্থিব জীবনের ভোগবিলাসে উৎসাহ দিতেছ ? আমার মনে হয় এখন তোমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অভাব -অনাটনের কথা ভুলে গেছ। আল্লাহর কসম! আমি তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব যিনি আমাকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন, যেন আমি আখিরাতে শান্তি অর্জন করতে পারি। অত:পর বললেন, হে আয়েশা ! তুমি কী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সেই দিনের কথা বেমালুম ভুলে গেলে, যখন তাঁর ঘরে শুধুমাত্র একখানা কাপড় ছিল ? যা তিঁনি দিনে বিছিয়ে রাখতেন আর রাতে গায়ে দিতেন ? ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) বলেন, একদিন হযরত ওমর (রা.) এর সামনে গোশত আনা হলো যা ঘৃতের রান্না ছিল। তা দেখে খলীফা খাদ্যে হাত স্পর্শ করলেন না। বললেন, এ তো দুই তরকারী। গোশত এক তরকারী আর ঘি এক তরকারী। দুই তরকারী এক করে আহারের কী প্রয়োজন ?

বাজারের জিনিষ পত্রের দাম যাচাই করার জন্য খলীফা প্রায় বাজারে যেতেন। রাস্তায় পুরাতন রশি, খেজুর বীচি সহ প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস চোখে পড়লে নিজেই তুলে রাস্তার পাশে বাড়িগুলোতে নিক্ষেপ করে দিতেন, যাতে মানুষ সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন। ওতবাহ ইবনে ফারকাদ (রা.) একদিন খলীফার কাছে এসে দেখেন যে, খলীফা বাসি গোসত আর শুকনা রুটি জোরপূর্বক গলধ:করণ করছেন। অবাক হয়ে ওতবাহ বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন এ আপনি কী করছেন? বাসি খাবার কেন খাচ্ছেন? আপনি খাদ্যে একটু বেশি ব্যয় করলে রাষ্টের কী এমন ক্ষতি হবে? খলীফা বললেন, হে ওতবাহ ! তুমি কি আমাকে ইহজীবনের সুখ-সম্ভোগে অনুপ্রাণিত করছ? ওতবাহ বললেন, না। আল্লাহর দেয়া সম্মান এবং মর্যাদার জন্যই আপনি সুখ সম্ভোগের ন্যায্য অধিকারী। খলীফার চোখ রাগে লালবর্ণ ধারণ করল। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আমি জাতির আমানতদার। আমানত রক্ষা করাই আমার কাজ। কারো আমানত খেয়ানত করার অধিকার আমার নেই। অপচয় সে তো অনেক দূরের কথা। ইরানের প্রতাপশালী সেনাপতি হরমুযান মদীনায় এসে মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আমিরুল মু’মিনীনের সঙ্গে দেখা করতে চাই, কোথায় তিনি?

একজন সাধারণ বেদুঈন আঙ্গুলের ইশারায় বললেন, ঐ যে মসজিদের বারান্দায় মাটিতে শুয়ে আছেন তিঁনিই আমিরুল মু’মিনীন। অবাক হয়ে গেলেন হরমুযান। হরমুযান মনে করেছিলেন যে আমিরুল মু’মিনীনের নাম শুনলে সমগ্র পৃথিবী ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠে তাঁর দরবার জাঁক-জমকের অন্ত থাকবে না। তিনি খলীফার সাথে সাক্ষাতের জন্য ইরানের সম্ভ্রান্ত এবং প্রতাপশালী একদল লোক সঙ্গী করলেন, মদীনায় প্রবেশ করে কারুকার্য খচিত শিরস্ত্রাণ এবং মহা মূল্যবান কাবা পরিধান করলেন। সুদৃশ্য তলোয়ার কটিতে বাঁধলেন। কিন্তু মদীনায় প্রবেশ করে খলীফা হযরত ওমর (রা.) কে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। নিজের পরিধেয় পোষাক দেখে তিনি বিব্রত হলেন। সাহাবীগণ কখনো আমিরুল মু’মিনীনকে মিহি কাপড় পরিধান করতে দেখেননি। অর্ধপৃথিবীর শাষণকর্তা হয়েও তিঁনি ছেঁড়া পাগড়ি, ছেঁড়া জুতা, তালিযুক্ত জামা পড়তেন। সাহাবাগণ বলেন, তাঁর জামায় বারোটি পর্যন্ত তালি থাকত। ইমাম হাসান (রা.) বলেন, আমিরুল মু’মিনীন যখন জুম্মার খুৎবা দিচ্ছিলেন, আমি তখন তাঁর জামার তালিগুলো গুণছিলাম। তাতে ১২ টি তালি ছিল।

Comments

comments