গল্প

অপূূূূর্ণ স্বপ্ন

By lazy-coder

June 17, 2016

নাইম রোজকার মত স্কুল থেকে ফিরে এসে খেতে বসল। মা জাহানারা বেগম আগ থেকেই খাবার তৈরি করে রেখেছেন। নাইম খেতে খেতে স্কুলের কথা ভাবছে। ক্লাসে শিক্ষকদের পাঠদান নাইমের অনেক ভালো লাগে। শিক্ষকদের কথা মনে দিয়ে শোনে। বিশেষ করে ধর্ম শিক্ষক মাওলানা আবুল কালাম স্যারের কথা বেশ ভালো লাগে। ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পড়ানোর পাশাপাশি অনেক গল্প বলেন। ইসলামের নবী রাসুলদের জীবন কাহিনী শুনতে নাইম খুব ভালোবাসে। অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া নাইম ইসলামি অনুশাসন মেনে চলতে বেশ আগ্রহী। ফজরের সালাত মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করাসহ সাধ্যমত সব ওয়াক্তই জামাতের সাথে আদায় করে। বাবা তালেব চৌধুরীও নামাজের প্রতি খুব সচেতন। নাইমের শিশু বয়স থেকেই মসজিদে নিয়ে যাওয়া, পাশে নিয়ে সালাত আদায় করা ছিল তালেব চৌধুরীর নিত্যদিনের রুটিন। বাবা মায়ের কাছ থেকেই নাইম সব কিছু শিখেছে। ‘খেয়ে দেয়ে একটু ঘুম দিস বাবা’ মায়ের মুখের দিকে তাকাল নাইম। নিরুত্তর থেকেই খাবার শেষ করল। পড়ন্ত বিকেলে পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যাওয়া নাইমের আরেকটি রুটিন। মাগরিবের আজানের পূর্ব পর্যন্ত চলে ওদের খেলাধুলা। গোল্লাছুট, ঘুড়ি উড়ানোসহ অনেক খেলা। সন্ধ্যা হলেই নাইম পড়ার টেবিলে বসে যায়। ক্লাসের ফার্স্ট বয় না হতে পারলেও প্রথম সারির ছাত্র হিসেবে পরিচিতি আছে। মেধা আর মননে নাইমের সুনাম রয়েছে সবার মাঝে। ছোট্ট নাইম যখন বন্ধুদের সাথে কথা বলে তখন নাইমকে মনে হয় না যে ও ক্লাস এইটের ছাত্র। নাইমের বুদ্ধি আর পরামর্শ সবার কাছে ভালো লাগে। জোহরের নামাযের বিরতিতে সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় নাইমের পছন্দের একটি বিষয়। নাইম এসব কাজে অনেক আনন্দ পায়। শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকায় বাবার সাথে নাইম বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিয়েছে। বাবার কথা মত নাইম কাজ করে যাচ্ছে। সব কাজেই নাইম আনন্দ খুঁজে পাওয়ায় কোনো কষ্টই নাইমকে নাগাল পেতে পারে না। জুমার আযান হওয়ার সাথে সাথে তালেব চৌধুরী ছেলে নাইমকে নিয়ে মসজিদে হাজির। নাইমও বুঝতে পেরেছে জুমআর দিনে যে যত আগে মসজিদে আসবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে। খুব মনোযোগের সাথে নাইম ইমাম সাহেবের খুতবা শোনে। কী চমৎকার ইসলামের বিধি বিধান। নাইম যতই শোনে ততই পুলকিত হয়। রমযান মাস নিয়েই আলোচনা চলছিল। যারা রোযা রাখতে অক্ষম তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। অসুস্থ, বৃদ্ধ, মুসাফির এরা কষ্ট অনুুভব করলে পরবর্তীতে আদায় করতে পারবে। নাইমের সব বিধানই ভালো লাগে। আর ভালো লাগবে না কেন এ বিধান সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার। সজল, শফিক আর রাতুল নাইমের ঘনিষ্ট বন্ধু। স্কুলে থাকাকালীন এদের সাথে সময় কাটানো হয়। স্কুল ছুটির পর যার যার বাড়ি চলে যায়। পরদিন যখন সবার সাথে দেখা হয় তখন আনন্দের সীমা থাকে না। বাড়িতে কে কি করেছে, কম সময়ের মধ্যে পড়া তৈরি করতে পেরেছে কিনাসহ নানান বিষয়। নাইমও সব কিছু শুনে আনন্দ পায়। পড়ালেখায় কম বেশি সবার আগ্রহ থাকায় পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে থাকে। নাইমও সবাইকে ভালো ফলাফল করার জন্য উৎসাহ দেয়। স্কুল বন্ধ। গ্রীষ্মকালীন ও রমযান মিলে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকবে। এবার বৈশাখ মাসেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। রোদের তীব্রতায় জনজীবন অতিষ্ঠ। দিন বড় হওয়ায় রমযানের রোযা রাখতেও সবার কষ্ট হবে। নাইম কয়েক বছর থেকে পুরো রোযা রেখেছে। এবারও রাখার নিয়ত করেছে। রোযা রেখে ইফতার করার আনন্দ নাইম খুব উপভোগ করে। রমযানের সাহরি খাওয়া, তারাবির সালাত আদায়, ইফতার সবগুলোতেই নাইম মাকে সাহায্য করে। মায়ের সাথে ছোট খাটো কাজে পাশে থাকা। বিশেষ করে ইফতার তৈরিতে মাকে সাহায্য করলে মায়ের কষ্ট কম হয়। বলতে বলতে রমযান মাস এসে গেল। পশ্চিমাকাশের বাঁকা চাদ দেখা গেল। সাহরি খেয়ে রোযা রাখা শুরু হয়ে যাবে। নাইম বাবাকে নিয়ে তারাবির সালাতে অংশ নেয়। সালাত শেষে বাড়িতে গিয়ে বাবা মায়ের সাথে খাবার খেল। নাইমের কল্পনায় রমযান মাসের চিত্র ভাসে। ফাঁকে ফাঁকে কুরআন তেলাওয়াত, স্কুলের পড়া, মসজিদে অন্যান্যদের সাথে ইফতার করা সবকিছুই ওর চোখের সামনে ভাসতে থাকে। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে নাইম। স্বপ্নটা অনেক সুন্দর। আমাদের দেশটা অনেক পরিবর্তন এসেছে। মুসলিম হিসেবে যাদের পরিচয় তারা মসজিদের আযান শুনে জামাতের সাথে সালাত আদায় করে। বছর শেষে যাকাতের টাকা হকদারদের মাঝে বিতরণ করে। সমাজের প্রতিটি স্তরে ইসলামি বিধান পালন করা হয়। সমাজে শান্তি বিরাজ করছে। নাইম যখন স্বপ্নে বিভোর তখনই ওর বাবা এসে ডাক দিলেন। ‘নাইম সাহরি খেতে ওঠো। মসজিদের মাইকে সাইরিন বাজিয়েছে।’ নাইম চোখ মুছতে মুছতে খাবারের রুমের দিকে হাঁটতে লাগল। তখনও নাইমের চোখে সদ্য দেখা স্বপ্নের কথাগুলো চোখে ভাসছে।

Comments

comments