গল্প

অদ্ভুত গরু

By mumin

September 13, 2017

সকাল সকাল এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেলো। শাহেদ আলির দুইটি গরু। একটা ষাঁড় আরেটা গাই। আকাশ ফর্সা হওয়ার আগে শাহেদ আলি যখন ফজরের নামাজের জন্য ওঠেন, তখন গরুগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্য একবার গোয়ালঘরে যান। নিয়মমতো আজো গেলেন। গিয়ে তো বিস্ময়ে তিনি হতবাক। দুইটার জায়গায় তিনটে গরু বাঁধা! এমন নাদুসনুদুস গরু এ গ্রামে আরেকটিও নেই। এটা কোত্থেকে এলো, কেইবা রেখে গেলো বুঝতে পারছেন না তিনি। তবে যাই হোক, কয়েকদিন পরেই ঈদ; ঈদে এ গরুটা কুরবানি দিয়ে ভালোই ভোজন করা যাবে। এটা ভেবে যারপরনাই খুশি হলেন শাহেদ মিয়া। নামাজ শেষে দেখা হলো বাল্যবন্ধু কফিলের সঙ্গে। কফিলকে খুলে বললো ঘটনা। শুনে তো কফিলের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। বললো, ‘বলিস কীরে! কন থেইকা আইলো এমুন সুন্দর গরু?’ ‘তা জানি না। আল্লায় বহুত দিন পরে আমাগোর দিকে মুখ তুইল্যা চাইছে।’ ‘চল তো দেহি, হাছা নাকি?’ শাহেদ মিয়ার গোয়ালে গরুটা বাঁধা দেখে লোভ সামলাতে পারলো না কফিল। চোখ দুটো চকচক করে উঠলো যেনো। কীভাবে গরুটাকে বাগিয়ে নিতে পারবে সে ফন্দি করতে লাগলো। এদিকে এক কান দু কান করে পুরো গ্রামে রটে গেলো অদ্ভুত গরুর কথা। গরুটাকে দেখতে শাহেদ মিয়ার বাড়িতে এসে সবাই ভীড় করলো। গরুটা নিজেদের গোয়ালে না গিয়ে শাহেদ মিয়ার গোয়ালে কেনো গেলো সেজন্য সবাই আফসোস করতে লাগলো। সবার মনেই আশা, গরুটার একটা অংশ নিজেরাও পাবে। কীভাবে পাবে, সে বুদ্ধি বের করতে গোপনে গোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবাই। গরুটা যেনো খুবই দামি একটি গুপ্তধন, সবার কাছে তাই মনে হতে লাগলো। খবর পেয়ে ছুটে এলেন গ্রামের চেয়ারম্যান। গরু দেখে তার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। এতো মোটাতাজা গরু তার গোয়ালেও নেই। তিনিও গরুটা যে কোনোভাবে হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি করতে লাগলেন। তিনি শাহেদ মিয়াকে বললেন, ‘এ গরু তোর গোয়ালে মানায় না। এটাকে দে, আমার গোয়াল বড় আছে, সেখানেই এটাকে মানাবে।’ শাহেদ মিয়া ইনিয়েবিনিয়ে বললেন, ‘চেয়ারম্যান সাব, আমার গোয়াল ছোডো হইলেও ভালা যতন দিয়া রাখমু গরুডারে। তাই এখানেই থাকতে দিন। ‘

শাহেদ মিয়ার কথায় চেয়ারম্যানের আত্মমর্যাদায় যেনো আঘাত হানলো। এতো বড় সাহস! চেয়ারম্যানের কথার অমান্য! তিনি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘এ গরু কার বাড়ি থাকবে আর কার বাড়ি থাকবে না, সে সিদ্ধান্তের জন্য শালিস বসবে। শুক্রবার জুমআর নামাজের পর মসজিদ মাঠে হবে এর ফায়সালা। সবাই যেনো উপস্থিত থাকে। ‘ এ বলে রাগে গরগর করতে করতে চলে গেলেন তিনি। শাহেদ মিয়া চিন্তায় পড়ে গেলেন। গরুটাকে বুঝি হারাতে বসলেন তিনি। এবারও আর কুরবানি দেয়া হবে না! গ্রামের চেয়ারম্যান বলে কথা। শালিসে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলো পুরো গ্রামবাসী। নির্ধারিত সময়ে বসলো শালিস। গ্রামের গণ্যমান্য সবাই মসজিদ মাঠে বসেছেন চেয়ার পেতে। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ‘শাহেদ মিয়ার গোয়ালে এতো সুন্দর গরু মানায় না। তাছাড়া ওর গোয়ালটা ভাঙা। সামনে ঈদ আসছে। যেকোনো সময় চুরিও হয়ে যেতে পারে। তাই বলি, গরুটা আমার গোয়ালেই থাক।’ পিনপতন নীরবতা ছেয়ে গেলো পুরো মজলিসে। কেউ কিচ্ছু বলছে না। এমন সময় কে যেনো বলে উঠলো, ‘আপনার গোয়ালে থাকতে পারে, কিন্তু ঈদের সময় গরুটাকে জবাই করতে হবে আর আমাদেরও অংশ দিতে হবে।’ চেয়ারম্যান সাহেব কিছু বলতে যাবেন, অমনি সবাই ‘ঠিক ঠিক’ বলে শোরগোল তুললো। কী আর করা! সবার কথা মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো, চেয়ারম্যান সাহেবের গোয়ালেই থাকবে গরুটা এবং সবাই এতে অংশীদার হবে। বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেবের রাখাল এসে নিয়ে গেলো গরুটা। শাহেদ মিয়ার কিছুই করার রইলো না। কেবল করুণ চোখে তাকিয়ে রইলেন গরুর যাত্রাপানে। কয়েকদিন ভালোই সুন্দর আর নাদুসনুদুসই দেখা গেলো গরুটাকে। কিন্তু হঠাৎ কী যেনো ঘটলো। দিনদিন শুকিয়ে যেতে লাগলো। তেমন খায় না, আগের মতো চরে না। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না। চেয়ারম্যান সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। এভাবে যেতে থাকলে তো মারা পড়বে গরুটা। তখন সব চেষ্টা ভেস্তে যাবে। মনে মনে তাই ঠিক করলেন, ‘গরুটা কাল সকালেই জবাই করতে হবে। ‘ এ সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে রাতে ঘুমালেন তিনি। সকালে ঘুম ভাঙলো পুলিশের ডাকে। পুলিশ দেখে তিনি মোটামুটি অবাক হলেন। এতো সকালে বাড়িতে পুলিশ কেন! ওসি সাহেব চেয়ারম্যান সাহেবকে বললেন, আপনার নামে কেস ওয়ারেন্ট আছে। আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে হবে। ‘ ‘কেনো, আমি কী করেছি যে থানায় যেতে হবে?’ ‘এ গরুটাকে আমরা অনেকদিন ধরে খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে আমাদের অবস্থা একেবারে শেষ। এ গরুর জন্যই আপনাকে থানায় যেতে হবে।’ ‘দেখুন ওসি সাহেব, আমি এ গরু চুরি করিনি।’ ‘আমি চুরির কথা বলছি না। আপনাকে এরেস্ট করা হচ্ছে অন্য কারণে। ‘কী কারণে বলুন তাহলে।’ ‘বলবো না, দেখিয়ে দিচ্ছি এ গরুর ভেতর কী আছে।’ ওসি সাহেবের নির্দেশে গরুটা জবাই করা হলো। সবাই অবাক হয়ে দেখলো, গরুর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেকগুলো অস্ত্র আর শক্তিশালী বোমা। বিস্ময়ে সবাই হতবাক হয়ে পড়লো। ওসি সাহেব বললেন, ‘একদল জঙ্গিকে আমরা ধাওয়া করেছিলাম এ গরু সহ। আমাদের কাছে তথ্য ছিলো এ গরুতে অস্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যে আপনার মতো সম্মানিত মানুষও জড়িত ছিলো আমার জানা ছিলো না।’ চেয়ারম্যান সাহেব যতই বুঝাতে যান এসবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, এটা পাওয়া গরু-কিছুতেই তা বুঝতে চান না ওসি সাহেব। তার এক কথা, ‘আপনার গোয়ালে গরু পেয়েছি তাই আপনি এর সঙ্গে জড়িত।’ পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। তথ্য-প্রমাণে চেয়ারম্যান সাহেব নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় দুদিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলো। তিনি তওবা করলেন, জীবনে আর কখনো অন্যের সম্পদ হাতানোর চেষ্টা করবেন না।

Comments

comments